অনেক মাইলফলক, কীর্তি আর অর্জনের দিন শেষে ৫৩৩ রানে এগিয়ে ইংল্যান্ড, ৭৬ ওভার বোলিং করেও একটি মেডেন নিতে পারেননি নিউ জিল্যান্ডের বোলাররা।
Published : 07 Dec 2024, 01:36 PM
অর্জন, মাইলফলক আর কীর্তিতে ভরপুর একটি দিন। যেখানে প্রাপ্তি সবই ইংল্যান্ডের। ব্যাট-বলে ইংলিশদের অপ্রতিরোধ্য ছুটে চলায় প্রায় পিষ্ট নিউ জিল্যান্ডের আশা।
গাস অ্যাটকিনসনের ইতিহাস-গড়া হ্যাটট্রিক, নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং ধস দিয়ে দিনের শুরু। বড় লিডের পর উজ্জীবিত শুরু করল আসল ‘বাজবল।’ তাদের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে লিড বাড়তে থাকল তরতর করে। দিন শেষে হতে হতে সেই লিড ছাড়িয়ে গেল পাঁচশ। সব মিলিয়ে ওয়েলিংটন টেস্টের দুই দিন শেষেই ইংল্যান্ডের জয় ধরে নেওয়া যায় নিশ্চিত।
প্রাপ্তিময় দিনে অবশ্য একটু আক্ষেপও আছে তাদের। দারুণ খেলেও একটুর জন্য সেঞ্চুরি পাননি বেন ডাকেট ও জ্যাকব বেথেলে। তবে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা নিয়েই অপরাজিত আছেন জো রুট। দিন শেষে তিনি অপরাজিত ৭৩ রানে। একটি ‘সেঞ্চুরি’ অবশ্য তার হয়েই গেছে। টেস্ট ক্রিকেটে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস হলো তার ১০০টি!
সকালে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ ১২৫ রানেই। প্রথম ইনিংসের ১৫৫ রানের লিড দ্বিতীয় ইনিংসে ঝড়ের বেগে বাড়িয়ে নেয় ইংল্যান্ড। ওভারপ্রতি পাঁচ রান তুলে দিন শেষ করে তারা ৫ উইকেটে ৩৭৮ রান নিয়ে।
ইংলিশদের ব্যাটের দাপটে অবিশ্বাস্যভাবে ৭৬ ওভার বল করেও একটি মেডেন নিতে পারেনি নিউ জিল্যান্ডের বোলাররা।
টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি ওভার বোলিং করে মেডেন না পাওয়ার নজির আছে আর একটি। ১৯৩৯ সালে ডারবানে ৮৮.৫ ওভার বোলিং করে মেডেন পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা, ৪ উইকেটে ৪৬৯ রান তুলে ইনিংস ঘোসণা করে ইংল্যান্ড।
শনিবার ৫ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে দিন শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। নাইটওয়াচম্যান উইল ও’রোক ও অপরাজিত থাকা আরেক ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেল বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দিনের চতুর্থ ওভারেই দুজনকে বিদায় করেন ব্রাইডন কার্স। দারুণ ডেলিভারিতে ব্লান্ডেল বোল্ড হন ১৬ রানে। এক বল পর এলবিডব্লিউ ও’রোক। ২৬ বল খেলেও রান করতে পারেননি তিনি।
গ্লেন ফিলিপস ও ন্যাথান স্মিথ এরপর একটু এগিয়ে নেন দলকে। কিন্তু অ্যাটকিনসনের হ্যাটট্রিক আটকে দেয় তাদের।
বাড়তি লাফানো বল ছাড়তে গিয়ে দেরি করে ফেলেন স্মিথ। ব্যাটে লেগে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। পরের বলে আবার বাড়তি লাফানো দুর্দান্ত ডেলিভারিতে গালিতে ধরা পড়েন ম্যাট হেনরি। এরপর টিম সাউদিকে এলবিডব্লিউ করে অ্যাটকিনসন মেতে ওঠেন হ্যাটট্রিকের উল্লাসে।
অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী ওয়েলিংটনের এই বেসিন রিজার্ভের ৯৪ বছর ও ৬৯ টেস্টের ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক এটিই।
বড় লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে ইংল্যান্ড। টিম সাউদির প্রথম দুই বলেই টানা দুটি বাউন্ডারিতে ইনিংস শুরু করেন জ্যাক ক্রলি। তবে নিউ জিল্যান্ড-দুঃস্বপ্ন থেকে বের হতে পারেননি এ দিনও। দ্বিতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান তিনি ৮ রান করে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯ ইনিংস খেলে তার গড় এখন ১০.১৫।
এই উইকেটের কোনো প্রভাব ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে পড়েনি। বেথের উইকেটে যাওয়ার পরপরই ম্যাট হেনরির ওভারে মারেন দুটি চার, ছক্কা মারেন ন্যাথান স্মিথকে। আরেকপাশে ডাকেট ছুটতে থাকেন সহজাত ব্যাটিংয়ে। বেসিন রিজার্ভে বয়ে যায় রানের স্রোত।
৫২ বলে ফিফটি করেন বেথেল, ৫৯ বলে ডাকেট। একশ ছাড়িয়ে জুটি পেরিয়ে যায় দেড়শও।
সাউদির বলে চার মারার পর যখন সেঞ্চুরির সঙ্গে কেবল আর একটি চারের দূরত্ব, তখনই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বেথেল। ১১৮ বলে তার ৯৬ রানের ইনিংসে চার ছিল ১০টি, ছক্কা ৩টি।
ডাকেটের সঙ্গে তার জুটি থামে ২২০ বলে ১৮৭ রানে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনভিজ্ঞতা ও রেকর্ড সমৃদ্ধ না হওয়ার পরও বেথেলকে টেস্টে নামানোয় ইংল্যান্ডে সমালোচনা চলছিল অনেক। তিন নম্বরে ব্যাট করার অভিজ্ঞতাও তার ছিল না। কিন্তু অভিষেক টেস্টে আগ্রাসী ফিফটির পর এই ইনিংসে জবাবটা ভালোই ছিলেন বেথেল। তার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারেই সর্বোচ্চ ইনিংস এটি।
একটুর পর সাউদির বল স্টাম্পে টেনে এনে ডাকেট আউট হন ১০৬ বলে ৯২ রান করে।
ইংল্যান্ডের রানের জোয়ার তাতে থামেনি। জো রুট ও হ্যারি ব্রুক স্ট্রোকের ছটায় যোগ করেন ৯৫ রান।
সিরিজে এর মধ্যেই দুটি আগ্রাসী সেঞ্চুরি করা ব্রুক এবার কিউই বোলারদের একটু রেহাই দিয়ে আউট হন ৬১ বলে ৫৫ রান করে।
রুটের সঙ্গে শেষ বিকেলে ঝড়ো ব্যাটিং উপহার দেন অধিনায়ক বেন স্টোকস (২৬ বলে ৩৫*)। তৃতীয় দিনে রুটের সেঞ্চুরি পর্যন্তই হয়তো থাকবে ইংল্যান্ডের ইনিংস ঘোষণার অপেক্ষা। এরপর নিউ জিল্যান্ডে সিরিজ জয়ের ১৭ বছরের অপেক্ষা ঘোচানোর পালা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮০
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৪.৫ ওভারে ১২৫ (আগের দিন ৮৬/৫) (ও’রোক ০, ব্লান্ডেল ১৬, ফিলিপস ১৬*, স্মিথ ১৪, হেনরি ০, সাউদি ০; ওকস ৮-১-২৬-১, অ্যাটকিনসন ৮.৫-০-৩১-৪, কার্স ১০-২-৪৬-৪, স্টোকস ৮-০-২১-১)।
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৭৬ ওভারে ৩৭৮/৫ (ক্রলি ৮, ডাকেট ৯২, বেথেল ৯৬, রুট ৭৩*, ব্রুক ৫৫, পোপ ১০, স্টোকস ৩৫*; সাউদি ১৪-০-৭২-২, হেনরি ১৫-০-৭৬-২, স্মিথ ১৬-০-৭৪-০, ও’রোক ১৫-০-৭৯-০, ফিলিপস ১৬-০-৭৫-১)।