আইসিসি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪
গণমাধ্যম প্রতিনিধি, আইসিসি ভোটিং একাডেমি এবং সমর্থকদের ভোটে নির্বাচিত হবেন বিজয়ী। আইসিসির ওয়েবসাইটে ভোট দিতে পারবেন সমর্থকরা।
Published : 30 Dec 2024, 03:20 PM
দেশের মাটিতে কিংবা বাইরে, উইকেট হোক পেস-বান্ধব নয়তো স্পিন-সহায়ক, সবখানেই দ্যুতিময় জাসপ্রিত বুমরাহ। বছরজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ টেস্টের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের লড়াইয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন ভারতীয় এই পেসার। তার সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান জো রুট ও হ্যারি ব্রুক এবং শ্রীলঙ্কার কামিন্দু মেন্ডিস।
ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণের বছরের সেরা ক্রিকেটারকে বেছে নিতে সোমবার এই চার জনের নাম প্রকাশ করে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা।
গণমাধ্যম প্রতিনিধি, আইসিসি ভোটিং একাডেমি এবং সমর্থকদের ভোটে নির্বাচিত হবেন বিজয়ী। আইসিসির ওয়েবসাইটে ভোট দিতে পারবেন সমর্থকরা।
জানুয়ারির শেষ দিকে ঘোষণা করা হবে বিজয়ী।
জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)
১৩ টেস্টে ১৪.৯২ গড়ে ৭১ উইকেট
২০২৩ সালের পিঠের চোট কাটিয়ে ফেরার পর থেকে এই বছর লাল বলের ক্রিকেটে বোলারদের তালিকায় আধিপত্য করেছেন বুমরাহ।
এক পঞ্জিকাবর্ষের হিসেবে ক্যারিয়ারে এবার সেরা সময় কাটিয়েছেন তিনি। বছরে মোট ১৩টি টেস্ট খেলে উইকেট নিয়েছেন ৭১টি, অন্য যে কারো চেয়ে বেশি।
দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার পেস সহায়ক উইকেট হোক কিংবা পেসারদের জন্য ভারতের কঠিন কন্ডিশন-বছর জুড়ে সবখানেই আলো ছড়িয়েছেন তিনি। তবে তার সবচেয়ে সেরাটা দেখা গেছে বর্তমানে চলমান তাদের অস্ট্রেলিয়া সফরে।
নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তার পারফরম্যান্স স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শার্মার অনুপস্থিতিতে পার্থে সেই ম্যাচের সামনে থেকে দুর্দান্তভাবে নেতৃত্ব দেন বুমরাহ। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরও তার নায়কোচিত পারফরম্যান্সে ২৯৫ রানের জয় পায় ভারত; প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটি শিকার ধরেন তিনি।
জো রুট (ইংল্যান্ড)
১৭ টেস্টে ৫৫.৫৭ গড়ে এক হাজার ৫৫৬ রান
লাল বলের ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা এবছরও টেনে নিয়েছেন রুট। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার তার ব্যাট ২২ গজে আরও দাপট দেখিয়েছে; ১৭ টেস্টে রান তুলেছে দেড় হাজারের বেশি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এর আগে একবারই কেবল এক পঞ্জিকাবর্ষে বেশি রান করেছিলেন তিনি, ২০২১ সালে এক হাজার ৭০৮ রান।
এই নিয়ে পঞ্চমবার এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজারের ওপর রান করলেন ৩৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
দেশের মাটিতে কিংবা বাইরে, সবখানেই বছরজুড়ে ধারাবাহিক পারফর্ম করেছেন রুট। হাঁকিয়েছেন ছয়টি টেস্ট সেঞ্চুরি ও পাঁচটি হাফ-সেঞ্চুরি। এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় তিনি ৩৬টি শতক নিয়ে যৌথভাবে উঠেছেন পঞ্চম স্থানে, রাহুল দ্রাবিড়ের পাশে।
এই বছর তার সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখা যায় পাকিস্তান সফরে, মুলতানে। ক্যারিয়ার সেরা ২৬২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা তার ষষ্ঠ দ্বিশতক, দুই ব্যাটিং গ্রেট রিকি পন্টিং ও সাচিন টেন্ডুলকারের সমান।
সঙ্গে হ্যারি ব্রুকের (৩১৭) দুর্দান্ত ইনিংসের সৌজন্যে টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ ইনিংস গড়ে ইংল্যান্ড। ম্যাচটি তারা জেতে ইনিংস ও ৪৭ রানে।
কামিন্দু মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)
৯ টেস্টে ৭৪.৯২ গড়ে এক হাজার ৪৯ রান
শ্রীলঙ্কার নতুন এই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে এই বছরে পুরুষ ক্রিকেটে হাজারের বেশি রান করেন।
হোম-অ্যাওয়ে দুই জায়গাতেই বছর জুড়ে অসাধারণ সব পারফরম্যান্স করেন মেন্ডিস। টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম হিসেবে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি, স্যার ডন ব্র্যাডমানের সমান ১৩ ইনিংসে।
এই পঞ্জিকাবর্ষে অন্তত দুটি টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে তার ৭৪.৯২ গড়ের চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি আর কেউ।
ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে দুটি টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি করেন তিনি।
তার সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখা যায় গলেতে, ২৫০ বলে ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১৮২ রান করেন তিনি। ঝলমলে ওই ইনিংসের সৌজন্যে ম্যাচ সেরা হন মেন্ডিস, সিরিজ জয় নিশ্চিত হয় লঙ্কার।
হ্যারি ব্রুক (ইংল্যান্ড)
১২ টেস্টে ৫৫.০০ গড়ে এক হাজার ১০০ রান
লাল বলের ক্রিকেটেও ইংল্যান্ড যে দ্রুত রান তোলার কৌশল নিয়েছে, এই বছর সেই ঘরানার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন ছিলেন ব্রুক।
২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান ৮৫.০০ স্ট্রাইক রেটে এক হাজার ১০০ রান করেছেন; সেই পথে তিনি করেছেন তিনটি হাফ সেঞ্চুরি ও চারটি সেঞ্চুরি, এর মধ্যে একটি ট্রিপল সেঞ্চুরিও আছে।
ব্রুকের পারফরম্যান্সের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল দেশের বাইরে তার রান সংখ্যা। দেশেও তিনি সমান ৬টি ম্যাচ খেলেছেন; কিন্তু দেশের বাইরে করেছেন ৭২৩ রান।
নিউ জিল্যান্ড সফরে সিরিজের সর্বোচ্চ রান করেন ব্রুক এবং ২০০৮ সালের পর সেখানে প্রথম সিরিজ জেতে ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্সে টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে জো রুটকে হটিয়ে শীর্ষে উঠেছিলেন ব্রুক।
এবছর তার স্মরণীয় পারফরম্যান্স দেখা যায় মুলতানে। অক্টোবরের ওই ম্যাচে ক্যারিয়ারে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন তিনি।
৩২২ বলের ইনিংসে ২৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩১৭ রান করেন তিনি। ওই ইনিংসে ইংল্যান্ড টেস্টে নিজেদের তৃতীয় ও সব দেশ মিলিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে।