একই দিনে বিফলে গেছে আল আমিনের দারুণ সেঞ্চুরি, খুব কাছে গিয়েও শতরান পাননি আইচ মোল্লা।
Published : 09 Mar 2025, 07:13 PM
মোহাম্মদ নাঈম শেখের বিধ্বংসী ইনিংস আর প্রাইম ব্যাংকের ৪২২ রানের রেকর্ডের পর ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় ছিল অল্পই। দ্বিতীয়ভাগে যা একটু উত্তেজনা মিলল আইচ মোল্লার ব্যাটিংয়ে। তবে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও মাত্র ৪ রানের জন্য পারেননি তরুণ ব্যাটসম্যান।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্যাটসম্যানদের দাপটের দিনে সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবালও। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শতরানের রেকর্ড আগে থেকেই তার। সেই রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
একই দিনে দলের বিপর্যয়ে দারুণ সেঞ্চুরি করেছেন আল আমিন জুনিয়র। যদিও জিততে পারেনি তার দল। এছাড়া ঝড়ো ইনিংস খেলেন সাব্বির হোসেন, সাজ্জাদুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুন।
নাঈমের ১৭৬ রানে প্রাইম ব্যাংকের জয় ১৭৩ রানে
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান নাঈম। তার ক্যারিয়ার সেরা ১৭৬ রানের সৌজন্যে ১৭৩ রানের জয় পায় প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
নাঈমের ১২৫ বলে ১৮ চার ও ৮ ছক্কার ইনিংসে ৮ উইকেটে ৪২২ রান করে প্রাইম ব্যাংক। বিশাল লক্ষ্যে ৪৫ বল বাকি থাকতে ২৪৯ রানে গুটিয়ে যায় ব্রাদার্স।
লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো দলের এটিই প্রথম চারশ রান। ২০১৮ সালের প্রিমিয়ার লিগে ৩৯৩ রান করেছিল আবাহনী লিমিটেড।
বাংলাদেশের মাঠে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডও এটি। ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ৪০৯ রান করেছিল ভারত।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ১১০ বলে ১৪০ রান যোগ করেন নাঈম ও সাব্বির। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৩ বলে ৭৩ রান করে আউট হন সাব্বির।
৩৮ বলে ফিফটি ছুঁয়ে একই ছন্দে এগোতে থাকেন নাঈম। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তিনি করেন ৮২ বলে।
এরপর আরও বাড়ান ব্যাটের তেজ। মাত্র ২৪ বলে পরের পঞ্চাশ রান করে ফেলেন বাঁহাতি ওপেনার। একসময় মনে হচ্ছিল, সৌম্য সরকারের পর বাংলাদেশের আরেকজন ব্যাটসম্যান লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলবেন।
কিন্তু তা আর হয়নি। ইনিংসের ৬৯ বল বাকি থাকতে সালাউদ্দিন শাকিলের বলে কাভারে ক্যাচ দেন নাঈম। লিস্ট 'এ'তে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এর চেয়ে বড় ইনিংস আছে আর মাত্র ৪টি।
নাঈমের বিদায়ের রানের গতি কিছুটা কমে আসে। শামীম হোসেন টিকতে পারেনি বেশিক্ষণ। তবে ষষ্ঠ উইকেটে ৫২ বলে ৮৪ রানের জুটি গড়ে দলকে চারশ ছাড়িয়ে নিয়ে যান সাজ্জাদুল হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
৩টি করে চার-ছক্কায় ২০ বলে ৪২ রান করেন মামুন। অপরাজিত ইনিংসে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৭ বলে ৫০ রান করেন সাজ্জাদুল।
৩ উইকেট পেলেও ১০ ওভারে আল আমিন হোসেনের খরচ ৭৭ রান। খরুচে ছিলেন বাকিরাও।
বিশাল লক্ষ্যে টপ অর্ডারে বড় কোনো জুটি গড়তে পারেনি ব্রাদার্স। চতুর্থ উইকেটে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৮৬ রান যোগ করেন আইচ মোল্লা ও মাইশুকুর রহমান।
৩৪ রান করা মাইশুকুরের বিদায়ে জুটি ভাঙার পর শুধু পেছাতেই থাকে তারা। একপ্রান্তে ধরে রেখে সেঞ্চুরির কাছাকাছি যান আইচ। ৪৩তম ওভারে দুই রান নেওয়ার চেষ্টায় শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রান আউট হন তিনি।
১১০ বলের ইনিংসে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৯৬ রান করেন আইচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ৪২২/৮ (নাঈম ১৭৬, সাব্বির ৭৩, জাকির ২৬, শাহাদাত ৩, শামীম ১৬, মামুন ৪০, সাজ্জাদুল ৫০*, রিশাদ ১৭, খালেদ ০, হাসান ১*; আল আমিন ১০-১-৭৭-৩, সালাউদ্দিন ৯-০-৭৫-২, নুর ৫-০-৬৬-০, সোহাগ ১০-০-৮১-১, মাইশুকুর ৮-০-৫৭-১, আইচ ২-০-১৯-০, কাপালি ৬-০-৪৬-১)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪২.৩ ওভারে ২৪৯ (মাহফিজুল ২৯, ইমতিয়াজ ১১, মিজানুর ৯, আইচ ৯৬, মাইশুকুর ৩৪, সোহাগ ০, জাহিদুজ্জামান ০, কাপালি ৩০, সালাউদ্দিন ১১, আল আমিন ১, নুর ০*; হাসান ৭-০-৫৭-২, খালেদ ৫.৩-১-২৭-২, মামুন ৬-০-৩৬-০, সানি ৭-১-৪১-০, রিশাদ ১০-১-৬৬-৩, শামীম ৭-০-২২-২)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১৭৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ নাঈম শেখ
তামিমের সেঞ্চুরিতে মোহামেডানের সহজ জয়
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ৭ উইকেটে হারায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ২১৯ রানের লক্ষ্য ৫৮ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে লিগের বর্তমান রানার্স-আপরা।
অপরাজিত সেঞ্চুরিতে দলকে সহজ জয় এনে দেন তামিম ইকবাল। ১২৫ রানে অপরাজিত থাকেন মোহামেডান অধিনায়ক। ১১ চার ও ৫ ছক্কায় ১১২ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার ২৩তম সেঞ্চুরি এটি। ২০টি সেঞ্চুরি করে দুইয়ে এনামুল হক। ৬০ সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড সাচিন টেন্ডুলকারের।
রান তাড়ায় শুরুতেই রনি তালুকদারের উইকেট হারায় মোহামেডান। তিন নম্বরে নেমে ৩২ বলে ৬ রান করে আউট হন মাহিদুল ইসলাম।
তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটি বেধে শুরুর চাপ সামাল দেন তামিম। দুজন মিলে ৭৮ বলে যোগ করেন ৬৫ রান। ৬৫ বলে ফিফটি করেন তামিম। দলের একশ হতেই বিদায় নেন ৪৩ বলে ৩৭ রান করা হৃদয়।
এরপর আর উইকেট পড়তে দেননি তামিম ও মুশফিকুর রহিম। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৯৪ বলে ১২২ রান যোগ করেন অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান। যেখানে মুশফিকের অবদান ৪৪ বলে ৩৫ রান।
৩৭তম ওভারে শহিদুল ইসলামের বলে ছক্কা মেরে তিন অঙ্কে পৌঁছান তামিম। সেঞ্চুরি ছুঁয়ে আরও ২টি করে চার-ছক্কা মারেন ৩৬ ছুঁইছুঁই ওপেনার।
ম্যাচের প্রথমভাগে আহরার আমিনের ৭৮ রানে দুইশ পেরোয় পারটেক্স। ৮৬ বলের ইনিংসে ৫ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ছয় নম্বরে নেমে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন জাওয়াদ রোয়েন। ওপেনার জয়রাজ শেখের ব্যাট থেকে আসে ৩৮ রান। শেষ দিকে মাত্র ১২ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় তারা।
মোহামেডানের পক্ষে ৫০ রানে ৪ উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম। একাদশে ফেরার ম্যাচে ৩ উইকেট পান আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৬.৩ ওভারে ২১৮ (জয়রাজ ৩৮, রুবেল ২৪, আদিল ১৭, আহরার ৭৮, সাব্বির ১, জাওয়াদ ৪২, রিফাত ৫, আলাউদ্দিন ০, শহিদুল ১, মোহর ৪*, নাঈম ১*; তাইজুল ৯.৩-১-৫০-৪, আবু হায়দার ৮-০-৪৩-১, ইবাদত ৮-০-৩৬-০, নাসুম ১০-১-৪২-৩, সাইফ ৯-০-৩২-২, আরিফুল ১-০-৬-০, রনি ১-০-৭-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪০.২ ওভারে ২২২/৩ (রনি ৯, তামিম ১২৫*, মাহিদুল ৬, হৃদয় ৩৭, মুশফিক ৩৫*; জাওয়াদ ৯-৩-২৫-১, মোহর ৩-০-১১-১, শহিদুল ১০-০-৫২-০, নাঈম ৬-০-২৮-১, রুবেল ৩.২-০-২৯-০, আলাউদ্দিন ৪-০-২২-০, আহরার ১-০-৯-০, রিফাত ১-০-১১-০, জয়রাজ ৩-০-৩৪-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল
আবাহনীর জয়
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারায় আবাহনী লিমিটেড। ২৬১ রানের লক্ষ্য ১৫ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জয়ের বড় কারিগর মোসাদ্দেক হোসেন। অফ স্পিনে ২ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
তবে লড়িয়ে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন পরাজিত দলের আল আমিন জুনিয়র।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় রূপগঞ্জ টাইগার্স। পাঁচ নম্বরে নেমে একপ্রান্ত আগলে রাখেন আল আমিন।
সপ্তম উইকেটে ফয়সালের সঙ্গে ৮২ রানের জুটি গড়ে তোলেন তিনি। লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি করে ১০৪ রানে আউট হন তিনি। ৮৯ বলের ইনিংসে ১০ চারের সঙ্গে মারেন ২টি ছক্কা।
৪৭ বলে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন ফয়সাল। ১৪০ রানে ৬ উইকেট হারানো রূপগঞ্জ টাইগার্স পোঁছে যায় ২৬০ রানে।
লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৯ ওভারে এক মেডেনসহ ৩৬ রানে ২ উইকেট নেন নাহিদ রানা। বাঁহাতি স্পিনে রকিবুল হাসানের শিকার ৩ উইকেট।
রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ৬২ রান যোগ করেন জিসান আলম ও পারভেজ হোসেন। ৩৯ রান করে ফেরেন জিসান। ফিফটির সম্ভাবনা জাগালেও ৪৭ রানে বোল্ড হয়ে যান আগের রাউন্ডে ১২৬ রানের ইনিংস খেলা পারভেজ।
তিন নম্বরে নেমে ৫০ বলে ৩৭ রান করেন শান্ত। মিঠুনের ব্যাট থেকে আসে ৬১ বলে ৬০ রানের ইনিংস। শেষ দিকে ৩৮ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে দলের জয় নিশ্চিত করেন মোসাদ্দেক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯.৪ ওভারে ২৬০ (মজিদ ১৩, অমিত ১৫, মইনুল ১৮, গালিব ৮, আল আমিন ১০৪, মাহমুদুল ২৫, তানবীর ৪, ফয়সাল ৪৯*, মারাজ ৪, শরিফ ১, ফাহাদ ১; নাহিদ ৯-১-৩৬-২, মেহেদি ৬-০-৪০-০, মোসাদ্দেক ৯.৪-০-৩৭-২, রকিবুল ১০-০-৪৩-৩, জিসান ১-০-৩-০, মাহফুজুর ৫-০-৩০-০, এনামুল ৬-০-৪৫-০, মুমিনুল ৩-০-১৭-১)
আবাহনী লিমিটেড: ৪৭.৩ ওভারে ২৬৪/৬ (জিসান ৩৯, পারভেজ ৪৭, শান্ত ৩৭, মিঠুন ৬০, মুমিনুল ৯, মোসাদ্দেক ৪৭*, মাহফুজুর ৫, রকিবুল ০*; ফাহাদ ৬-১-৩০-০, মাহমুদুল ৯-১-৫১-১, শরিফ ৫-০-৪৫-১, মইনুল ১০-০-৬০-১, আল আমিন ৭-১-২৮-১, ফয়সাল ১০-০-৪৫-২, তানবীর ০.৩-০-৪-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আল আমিন জুনিয়র