বিপিএল
প্রায় ১২ বছর পর বিপিএলে ফিফটি করলেন ও ম্যাচ-সেরা হলেন নাঈম ইসলাম, সেই সময়ের দুই সতীর্থ শন টেইট ও এনামুল জুনিয়র এখন তার দলের কোচ।
Published : 21 Jan 2025, 11:50 AM
ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে একজনের কথা আলাদা করেই বললেন নাঈম ইসলাম। তাকে প্রতিনিয়ত প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন এনামুল হক জুনিয়র। দুজন একদম একই বয়সী, বয়সের ব্যবধান স্রেফ ২৬ দিনের। খেলার পালা চুকিয়ে এনামুল এখন চিটাগং কিংসের সহকারী কোচ, নাঈম খেলে চলেছেন এখনও। একসময়ের সতীর্থ, বন্ধু আর এখনকার কোচের প্রেরণায় উজ্জীবিত নাঈম দেখালেন, ৩৮ বছর পেরিয়েও তিনি ফুরিয়ে যাননি।
চলতি বিপিএলে স্রেফ তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন নাঈম সোমবার। দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে ৪১ বলে করেছেন ৫৬ রান। বল হাতে তিন ওভারে স্রেফ ছয় রান দিয়ে দুই উইকেট। ম্যান অব দা ম্যাচ তিনিই।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, বিপিএলে নাঈমের সবশেষ ফিফটি ছিল সেই ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেটিও এই চিটাগং কিংসের হয়েই। মিল আছে আরও, এবারের মতো সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে সেই ম্যাচেও ওপেন করেছিলেন নাঈম। সেদিন ৪৩ বলে করেছিলেন ৫৮ রান।
এনামুলকে দিয়ে গল্পের শুরু করার কারণ, নাঈমের সবশেষ ফিফটির ম্যাচে ছিলেন তিনিও। চিটাগংয়ের হয়ে এনামুল সেদিন ১৪ রানে নিয়েছিলেন তিন উইকেট।
সেই ম্যাচে চিটাগংয়ের হয়ে ১৬ রানে তিন উইকেট নিয়েছিলেন শন টেইট। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সেই গতি তারকা এখন চিটাগংয়ের প্রধান কোচ!
সেই সময়ের দুই সতীর্থ এখন নাঈমের দুই কোচ। তাদের সংস্পর্শে নাঈমও ফিরে গেলেন যেন সেই সময়টায়। মজার ব্যাপার হলো, সেই ম্যাচে চিটাগং কিংস জিতেছিল ১১৯ রানে। এবার এই ম্যাচে জয় ১১১ রানে।
বিপিএলে নাঈম ম্যান অব দা ম্যাচের স্বীকৃতি আগে পেয়েছিলেন স্রেফ একবারই। সেটিও সেই ২০১৩ আসরেই। চট্টগ্রামেই এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ৩৮ বলে ৫০ করেছিলেন তিনি। যে ম্যাচটি পরে তুমুল আলোচিত হয়েছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ফিক্সিং কান্ডে।
বিপিএলে নাঈমের সেরা মৌসুম ছিল ২০১৩ আসরই। সেবার ১২ ম্যাচে ২৮৮ রান করেছিলেন। বিপিএলে তার তিনটি ফিফটি, তিনটিই এসেছিই ওই মৌসুমে ছয় ম্যাচের মধ্যে।
নানা বিতর্কে ওই আসরের পর আর বিপিএলে দেখা যায়নি চিটাগং কিংসকে। নাঈমের ফিফটিও গিয়েছিল হারিয়ে। এবার চিটাগং কিংস ফিরল, তিনিও আবার পঞ্চাশের স্বাদ পেলেন!
এমনিতে টি-টোয়েন্টির জন্য খুব উপযোগী ক্রিকেটার তাকে মনে করা হয়নি কখনোই। ঘরোয়া ক্রিকেটে একবার মার্শাল আইয়ুবকে ওভারে ছয়টি ছক্কা মেরে ‘ছক্কা নাঈম’ নাম পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে সেই নাম স্থায়ী হয়নি, কারণ তার ব্যাটিংয়ের ধরনের সঙ্গে আসলে এটি যায় না। টেস্ট ক্রিকেটে তার ভালো কিছু পারফরম্যান্স আছে। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি কিংবদন্তি। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ঠিক তার ঘরানার জন্য আদর্শ নয়। তবে ব্যাটিং আর বোলিং মিলিয়ে কার্যকারিতা ছিল। ২০১৩ সালের পর চিটাগং কিংস না থাকলেও তাই নাঈমকে বিপিএলে দেখা গেছে নানা সময়েই।
২০১৫ আসরে তিনি খেলেন চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে। ২০১৬ আসরে তো রংপুর রাইডার্সের অধিনায়কই ছিলেন তিনি। তবে ভালো করতে পারেননি দুই আসরের কোনোটিতে। ‘টি-টোয়েন্টির উপযোগী নন’ বলে একটা তকমাও লেগে যায় তার গায়ে। দীর্ঘ দিন তাকে আর দেখা যায়নি ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টির আসরে।
২০১৬ সালের পর আবার বিপিএলে তার পা পড়ে ২০২২ আসরে। যথারীতি চট্টগ্রামেরই আরেক ফ্র্যাঞ্চাইজি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে ফেরেন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজ নেতৃত্ব ছাড়ার পর চারটি ম্যাচে সেবার দলকে নেতৃত্বও দেন তিনি। কিন্তু তার নিজের পারফরম্যান্স একটুও ভালো ছিল না। ৮ ইনিংসে সেবার ৭৪ রান করতে পেরেছিলেন ১০.৫৭ গড়ে।
এরপর বিপিএল ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আবার বিরতি পড়ে তার। এবার জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টি নতুন রূপে শুরু হওয়ার পর তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নতুন শুরুর দুয়ার খুলে যায়। রংপুর বিভাগের হয়ে খুব ভালো তিনি করতে পারেননি। তবে এক ম্যাচে ৩৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন।
তবে এর আগেই বিপিএলের ড্রাফটে তাকে নিয়ে রেখেছিল চিটাগং কিংস। পুরোনো সৈনিকের ওপর আস্থা ছিল তাদের।
এবার প্রথম দুই ম্যাচে যদিও সেই আস্থার প্রতিদান তিনি দিতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে ওপেন করে একটি করে ছক্কা ও চার মেরেই আউট হয়ে যান। একাদশের বাইরেও ছিটকে পড়েন। কয়েক ম্যাচ পর ফিরে পাঁচে নেমে করেন ২৪ বলে ১৯ রান। এবারও চলে যান একাদশের বাইরে।
অবশেষে আসরে তৃতীয় প্রত্যাবর্তনে তিনি ফিরে পেলেন নিজেকে। ম্যাচ-সেরা হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে কৃতজ্ঞতা জানালেন দলের কর্ণধারের প্রতি।
প্রথম ম্যাচে ওপেন করেছিলাম। প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। এরপর কয়েকটা ম্যাচ বাইরে ছিলাম। আবার আজকে খেলেছি। আমাদের দলের কর্ণধার সামির ভাই চেয়েছেন যেন আমি খেলি। উনার চাওয়াতেই আমি খেলেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই ও সামির ভাইয়ের প্রতিও কৃতজ্ঞ যে উনি আমাকে সুযোগটি দিয়েছেন এবং আমাকে দলে নিয়েছেন।”
মাইক্রোফোন-রেকর্ডারের সামনে এমনিতে তিনি বরাবরই পরিমিত। এই ম্যাচের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের প্রতিক্রিয়াও জানালেন ছোট্ট করে।
“খুবই ভালো লাগছে। দলের জয়ে ব্যাটে-বলে দুই দিকেই অবদান রাখতে পারলে তো সত্যিই খুব ভালো লাগে।”
৩৮ বছর পেরিয়ে খুব বেশি ক্রিকেট তার আর অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। এই ম্যাচের পারফরম্যান্স তার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারকে পুনরুজ্জীবিত করবে কি না বা কতটা দীর্ঘায়িত করবে, সেই সংশয়ও আছে। তবে নাঈম এত কিছু না ভেবে শুধু মনের আনন্দে খেলতে চান।
“এনাম (সহকারী কোচ) সবসময় অনুপ্রেরণা জোগায়, আমাকে বলে যে, এখনও দলকে অনেক কিছু দিতে পারি। তাকে ধন্যবাদ। আমি এখনও ক্রিকেট উপভোগ করছি। যতদিন ভালো লাগছে, খেলে যেতে চাই।”