সেঞ্চুরির দুয়ারে দাঁড়িয়ে ইরফান শুক্কুর, প্রান্তিক নওরোজ ফিরেছেন ৯০ রানে।
Published : 12 Dec 2023, 06:31 PM
আবু হায়দারের লেগ স্টাম্পের ওপর শর্ট ডেলিভারি হুক করলেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। ডিপ ফাইন লেগ দিয়ে বল চলে গেল সীমানায়। ইয়াসির পৌঁছে গেলেন কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে। প্রায় দুই বছর পর এই স্বাদ পেলেও তিনি উদযাপন রাখলেন সাদামাটা। ড্রেসিং রুমের দিকে ব্যাট উঁচিয়ে জবাব দিলেন অভিবাদনের। পরে কৃতজ্ঞতা জানালেন সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে মঙ্গলবার ১২০ রানের ইনিংস খেলেছেন পূর্বাঞ্চলের ইয়াসির। একই ম্যাচে ৯ রানের জন্য শতক ছুঁতে না পারার হতাশায় পুড়েছেন মধ্যাঞ্চলের কিপার-ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলাম।
দ্বিতীয় দিন শেষে পূর্বাঞ্চলের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৫২ রান। এর আগে মধ্যাঞ্চল অল আউট হয়েছে ২৮০ রান। ২৮ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনে খেলতে নামবে পূর্বাঞ্চল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে কুয়াশাভেজা সকালে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন মাহিদুল। শেষ জুটিতে খেলতে নেমে সৈয়দ খালেদ আহমেদের শর্ট ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের শেষ দুই রাউন্ডে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর বিসিএলের প্রথম রাউন্ডে একমাত্র ইনিংসে তিনি রানের খাতা খুলতে পারেননি। পরের ম্যাচেই ফিরলেন ছন্দে। অল্পের জন্য যদিও হলো না আরেকটি সেঞ্চুরি। ১২ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো তার ১৭৪ বলের ইনিংস।
পূর্বাঞ্চলের হয়ে ৪টি করে উইকেট নেন খালেদ ও নাঈম আহমেদ।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে হতাশ করেন সৈকত আলি, পারভেজ হোসেন, অমিত হাসানরা। ছন্দে থাকা শামসুর রহমান, শামীম হোসেনরাও ব্যর্থ হলে ৭০ রানে ৫ উইকেট হারায় পূর্বাঞ্চল।
ষষ্ঠ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন ইয়াসির ও ইরফান শুক্কুর। দুজনের জুটিতে আসে ১৫১ রান। দলকে দুইশ পার করিয়ে ফেরেন ইয়াসির। ১৭৯ বলের ইনিংসে তিনি মারেন ৯ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইয়াসিরের দশম সেঞ্চুরি এটি। ২০২১ সালের অক্টোবরে রাজশাহীর বিপক্ষে আগের সেঞ্চুরিটি করেছিলেন তিনি। মাঝের সময়ে ১৭ ম্যাচের ৩১ ইনিংসে তার তিনটি ফিফটি।
দিন শেষে সেঞ্চুরির দুয়ারে দাঁড়িয়ে ইরফান। ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৯১ রানে অপরাজিত বাঁহাতি কিপার-ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে):
মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৬৬/৯) ৮৮.৪ ওভারে ২৮০ (মাহিদুল ৯১, রিপন ০*; আবু জায়েদ ১৩-১-৫৭-১, খালেদ ২০-.৪-২-৭১-৪, নাসুম ৩৩-৯-৮৩-১, নাঈম ২২-৪-৬১-৪)
পূর্বাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৭৮ ওভারে ২৫২/৭ (সৈকত ৬, পারভেজ ৯, অমিত ৪, ইয়াসির ১২০, শামসুর ৪, শামীম ১০, ইরফান ৯১*, নাসুম ৭, আবু জায়েদ ০*; আবু হায়দার ৯-২-২৩-১, রিপন ৯-২-২৩-১, নাজমুল ২২-৩-৭৫-৩, শুভাগত ১৮-১-৮৫-১, তাইবুর ৪-১-১৩-০, সাইফ ১৬-৩-৩৩-১)
প্রান্তিকের ১০ রানের আক্ষেপ
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাহিদুলের ভাগ্যবরণ করেছেন প্রান্তিক নওরোজ। নব্বইয়ের ঘরে দাঁড়িয়ে বড় শটের চেষ্টায় আউট হয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার।
নাহিদুল ইসলামের মিডল স্টাম্পে করা ডেলিভারি স্লগ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন প্রান্তিক। বল উঠে যায় আকাশে। বোলিং প্রান্তে পপিং ক্রিজের কাছে ফিরতি ক্যাচ নেন নাহিদুল।
ওপেনিংয়ে নেমে ৮২তম ওভারে ফেরা প্রান্তিক খেলেন ২২৮ বলে ৯০ রানের ইনিংস। ধৈর্য্যের পরিচয় দেওয়া ব্যাটিংয়ে ৮টি চার মারেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
প্রান্তিকের নৈপুণ্যে ৯ উইকেটে ২৪২ রান করেছে দক্ষিণাঞ্চল। দ্বিতীয় দিন শেষে উত্তরাঞ্চলের থেকে ২৩ রানে এগিয়ে দক্ষিণাঞ্চল।
কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৯ রানে দিন শুরু করা দক্ষিণাঞ্চলের পক্ষে প্রান্তিক ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি।
ষষ্ঠ উইকেটে শেখ মেহেদি হাসানের সঙ্গে প্রান্তিক যোগ করেন ৭০ রান। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৭০ বলে ৪৩ রান করে ফেরেন মেহেদি। পরে দলকে দুইশ পার করিয়ে সেঞ্চুরি করতে না পারার হতাশা নিয়ে সাজঘরে ফেরেন প্রান্তিক।
দিনের শেষভাগে আল আমিন হোসেনকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২৩ রান যোগ করেছেন মইন খান। ৩৪ রানে অপরাজিত রয়েছেন এই অফস্পিনিং অলরাউন্ডার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে):
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২১৯
দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৯/০) ৯৩ ওভারে ২৪২/৯ (প্রান্তিক ৯০, পিনাক ১৫, মাহমুদ ০, মিঠুন ১৯, মার্শাল ১৫, তানবির ৫, মেহেদি ৪৩, মইন ৩৪*, কামরুল ০, সুমন ৪, আল আমিন ৭*; নাহিদুল ২৭-৬-৬১-৩, ইয়াসিন ১৯-৪-৪৭-৩, এনামুল ১৩-১-৩৯-২, মুরাদ ২২-৭-৫৬-০, মামুন ৬-৪-৬-০, আমিনুল ৬-০-২৫-১)