সেঞ্চুরি করলেও দলকে জেতাতে পারলেন না এনামুল হক, শেষ দিকে রান তুলতে পারলেন না প্রত্যাশিত দ্রুততায়, দায়টা নিজের কাঁধেই নিলেন দুর্বার রাজশাহী অধিনায়ক।
Published : 20 Jan 2025, 09:51 AM
‘একটি মাত্র বাউন্ডারির ব্যাপার ছিল’ - খুলনা টাইগার্সের কাছে ৭ রানে হেরে পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে বলেন এনামুল হক। সেই বাউন্ডারিটি মারার একাধিক সুযোগ শেষ দিকে পেয়েছিলেন দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক নিজেই। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শ করলেও তাই দলকে জেতাতে না পারায় হতাশার শেষ নেই এনামুলের।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে রোববার শেষ তিন ওভারে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৩৬ রান। ক্রিজে তখন ৪৫ বলে ৮২ রান করা এনামুল ও টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে থাকা রায়ান বার্ল। তাদের পক্ষে বাজি ধরার লোকই থাকার কথা বেশি।
কিন্তু সেখান থেকে ক্রমেই পিছিয়েছে রাজশাহী। শেষ পর্যন্ত খেলে বিপিএলে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করলেও দলকে জেতাতে পারেননি এনামুল। ম্যাচের শেষ বলে সিঙ্গল নিয়ে কোনোমতে শতক পূর্ণ করলেও দলের দাবি মেটাতে পারেননি অধিনায়ক।
শেষ ওভারে দারুণ বোলিং করা হাসান মাহমুদকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। তবে এনামুলের সুযোগ ছিল, আগেই সমীকরণ সহজ করে ফেলার।
শেষ তিন ওভারের মধ্যে ১২টি বল একাই খেলেন এনামুল। কিন্তু দুটি মাত্র বাউন্ডারি মেরে কেবল ১৮ রানই করতে পারেন তিনি।
দুই ওভারে যখন প্রয়োজন ২৫ রান, সালমান ইরশাদের করা ১৯তম ওভারে প্রথম বলে চার মারেন বার্ল। এক বল পর স্ট্রাইক পাওয়া এনামুলকে লেগ স্টাম্পের বাইরে হাঁটুর কাছে ফুল টস করেন সালমান। ৯০ রানে থাকা ব্যাটসম্যানের জন্য যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! কিন্তু ব্যাটেই লাগাতে পারেননি এনামুল। লেগ বাই থেকে আসে ১ রান।
শেষ ওভারের সমীকরণ ছিল আদতে বেশ কঠিন। প্রয়োজন ছিল ১৭ রানের। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমন কিছু তাড়া করা এখন আর বিরল নয়।
ওভারের শুরুটাও দারুণ করেন এনামুল। হাসান মাহমুদের ওয়াইড ইয়র্কারে অফ সাইডে সরে ফাইন লেগ দিয়ে চার মারেন তিনি। এতে চাপে পড়ার কথা হাসানের। কিন্তু হলো এর উল্টো। বাকি পাঁচ বলে বাউন্ডারি মারতে পারলেন না এনামুল।
দ্বিতীয় বলে স্টাম্পের ওপর করা ইয়র্কারে সোজা খেলে ২ রান নেন এনামুল। পরের বলে রিভার্স র্যাম্প খেলার চেষ্টায় ব্যাটেই লাগাতে পারেননি তিনি।
তবু সুযোগ ছিল এনামুলের। আরেকটি ইয়র্কারের খোঁজেই হয়তো চতুর্থ বলে ফুলটস করে বসেন হাসান। কিন্তু এবারও বড় শট খেলতে ব্যর্থ রাজশাহী অধিনায়ক। উল্টো ক্যাচ তুলে দেন সীমানায়। লং অন থেকে ডানে দৌড়ে বল হাতে নিলেও শেষ মুহূর্তে ক্যাচ ফেলে দেন মোহাম্মাদ নাওয়াজ।
২ বলে প্রয়োজন তখন ৯ রান। জয় তখনও অসম্ভব নয়। কিন্তু পঞ্চম বলে চমৎকার এক ইয়র্কার করলেন হাসান। বাড়তি কিছু করার চেষ্টা দেখা গেল না ৯৯ রানে থাকা এনামুলের মধ্যে। বলটি কোনোরকমে ঠেকালেন তিনি।
ম্যাচের ফয়সালা তখন হয়ে গেছে। শেষ বলে ছক্কা মারলেও রাজশাহীর পরাজয় নিশ্চিত। তবু এসব মুহূর্তে বড় শটের চেষ্টাই দেখা যায় বেশির ভাগ সময়। এনামুল অবশ্য নিরাপদ পথে হেঁটে ফুল লেংথ বল আলতো করে অন সাইডে খেলে সিঙ্গল নিয়ে নিজের শতরান পূর্ণ করেন।
ম্যাচ শেষে অবশ্য সেঞ্চুরি উদযাপন করেননি তিনি। বরং হতাশা প্রকাশ করে হাঁটু গেড়ে বসে। তাকে সান্ত্বনা দেন সতীর্থরা ও প্রতিপক্ষের কেউ কেউ। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীয় আয়োজনেও তাকে দেখা যায় বিষন্ন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে তার আত্মোপলব্ধি, শেষ দিকে বাউন্ডারি মারার একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন নিজেই।
“আসলে... শেষ দিকে দুইটা লো ফুল টস বল ছিল, আমার মিস হয়ে গেছে। একটা এই পাশ থেকে যে (সালমান ইরশাদ) বল করল, আরেকটা হাসানের বলে। এই দুইটা বলে আমার দিক থেকে বাউন্ডারি হতে পারত। এটা মিস করেছি।”
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া এনামুলকে দমিয়ে রেখে শেষ ওভারে ৯ রান খরচ করেন হাসান। দুই দল মিলিয়ে ৪১১ রানের ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ২৫ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়ে তিনি জেতেন সেরার পুরস্কার।
এনামুলের আগে সংবাদ সম্মেলনে শেষ ওভারে নিজের পরিকল্পনার কথা জানান ২৫ বছর বয়সী পেসার।
“তাকে (এনামুল) সোজা বল করাটা একটু কঠিন ছিল। কারণ পেছনেও শট খেলছিলেন, সামনেও শট খেলছিলেন। তাই চিন্তা করেছিলাম, একটা পরিকল্পনা করে হয়তো তাকে ব্লাফ দিতে পারব। ওয়াইড ইয়র্কারের সেট-আপ করে হয়তো পায়ে ইয়র্কার মারা যাবে। ওই পরিকল্পনাই সফল হয়েছে। তাকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি দেখছিলাম।”
নিজের পরিকল্পনায় সফল হয়ে ম্যাচ জিতিয়েছেন হাসান। একইসঙ্গে এনামুলকে আউট করার সুযোগও তৈরি করেছিলেন তিনি। এনামুল অবশ্য ফিরতে পারতেন পাওয়ার প্লের মধ্যেই। নাওয়াজের বলে লং অফে ক্যাচ ছেড়ে দেন আফিফ হোসেন।
মাত্র ৭ রানে জীবন পেয়ে পরে আর আউটই হননি এনামুল। তবে দলকে জেতাতে না পারায় বারবার আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।
“আমার ব্যাটিং নিয়ে আসলে... শুরুতেই আফিফের হাতে একটা ক্যাচ ছিল। ৬-৭ রানে আউট হয়ে যেতে পারতাম। তবুও আল্লাহ হয়তো দিয়েছেন। তাই এত বড় রান হয়েছে। ম্যাচ জেতাতে পারলে আলাদা একটা শান্তি লাগত।”
ম্যাচ জেতানো ও না জেতাতে পারার যে পার্থক্য, সেটিই অনুভব করছেন এনামুল। সেঞ্চুরিটির মূল্য তাই তেমন কিছু নেই তার কাছে।
“এরকম ম্যাচ জেতানো ব্যাটসম্যানের জন্য স্বপ্নের মত থাকে যে, একা এমন ৫-৬ ম্যাচ জেতাবে। জেতাতে পারলে হয়তো ইনিংসটা অন্যভাবে মূল্যায়ন করতে পারতাম। এখন তেমন কিছু নেই। (সেঞ্চুরি) একটি সংখ্যা, ভালো সংখ্যা, সুন্দর সংখ্যা। তবে আফসোস থেকে যাবে।”
একই মাঠে সোমবার চিটাগং কিংসের বিপক্ষে নিজেদের পরের ম্যাচ খেলবে রাজশাহী।