আইপিএলের কারণে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলতে নামা নিউ জিল্যান্ড দারুণ জয়ে এগিয়ে গেল সিরিজে, পাকিস্তান ৭ উইকেট হারাল ২২ রানের মধ্যে, শেষ ৬ ব্যাটসম্যান মিলে করলেন কেবল ৩ রান!
Published : 29 Mar 2025, 01:19 PM
টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি পাকিস্তানের বিপক্ষে। পরের পাঁচটি সর্বোচ্চ স্কোরের চারটি পাকিস্তানের সঙ্গেই। প্রিয় প্রতিপক্ষের সামনে এবার ওয়ানডেতেও জ্বলে উঠলেন মার্ক চ্যাপম্যান। দলের বিপর্যয়ের মধ্যে উপহার দিলেন ক্যারিয়ার সেরা দুর্দান্ত ইনিংস। ড্যারিল মিচেল তো বরাবরই দলের ভরসা। অভিষেকে ঝড়ো ফিফটিতে রেকর্ড গড়ে তাক লাগিয়ে দিলেন মুহাম্মাদ আব্বাস। তাতে যে উচ্চতায় পৌঁছে গেল নিউ জিল্যান্ডের স্কোর, তার নাগাল পেল না পাকিস্তান। শেষ দিকে ভয়ঙ্কর ধসে হেরে গেল তারা বড় ব্যবধানে।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে পাকিস্তানকে ৭৩ রানে হারিয়ে এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।
নিয়মিত অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারসহ প্রথম প্রছন্দের একগাদা ক্রিকেটার এই সিরিজে নেই আইপিএলে খেলা ও অন্যান্য কারণে। দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে জয়ের পর ওয়ানডেতে দারুণ শুরু করল কিউইরা।
নেপিয়ারে শনিবার বিপদের মধ্যে ১১১ বলে ১৩২ রানের ইনিংস উপহার দেন চ্যাপমান। ৮৪ বলে ৭৬ রান আসে মিচেলের ব্যাট থেকে। অভিষেকে দ্রুততম ওয়ানডে ফিফটির রেকর্ড গড়েন আব্বাস। খর্বশক্তির নিউ জিল্যান্ড ৫০ ওভারে তোলে ৩৪৪ রান।
পাকিস্তান এক পর্যায়ে কিছুটা লড়াইয়ে থাকলেও পরে রান রেটের চাপের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। তাদের ইনিংস শেষ হয় ২৭১ রানে।
মোহাম্মাদ রিজওয়ানের দল শেষ ৭ উইকেট হারায় ২২ রানের মধ্যে। শেষ ৬ ব্যাটসম্যান মিলিয়ে রান করতে পারেন কেবল ৩!
ম্যাকলিন পার্কে টস জিতে বোলিং নেন রিজওয়ান। পাকিস্তান অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে মনে হচ্ছিল দারুণ কার্যকর। উইকেটে সহায়তা ছিল পেসারদের জন্য। দারুণ বোলিংয়ে তারা চেপে ধরেন কিউই টপ অর্ডারকে।
১১ বল খেলে ১ রান করে নাসিম শাহর শিকার হন উইল ইয়াং। আরেক ওপেনার অভিষিক্ত নিক কেলি ও বদলি হিসেবে স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া হেনরি নিকোলস ধুঁকছিলেন ব্যাটে-বলে করতেই।
বিপিএল মাতিয়ে পাকিস্তান দলে জায়গা করে নেওয়া আকিফ জাভেদ আন্তর্জাতিক অভিষেকে দুর্দান্ত বোলিং করেন প্রথম স্পেলে। কেলির (২৯ বলে ১৫) স্টাম্প উড়িয়ে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান তিনি। পরে ফিরিয়ে দেন নিকোলসকেও (২৫ বলে ১১)।
৫০ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড, রান রেট তখন চারের নিচে।
চাপম্যান ও মিচেল সময় নেন শুরুতে। উইকেট বুঝে ধরে ধীরে ইনিংস গড়ার পথ বেছে নেন তারা। ২০ ওভার শেষে নিউ জিল্যান্ডের রান ছিল ৭৫। চ্যাপম্যানের রান তখন ৩৪ বলে ১৫।
সময়ের সঙ্গে উইকেট সহজ হয়ে আসে। দুই ব্যাটসম্যানও ছন্দ পেয়ে রানের গতি বাড়াতে থাকেন। চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নামা পাকিস্তান বিপদে পড়ে যায় পঞ্চম বোলার নিয়ে। অলরাউন্ডার সালমান আলি আগার অফ স্পিন আক্রমণে আনতেই চড়াও হন দুই ব্যাটসম্যান। বাধ্য হয়ে ইরফান খান নিয়াজির হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে আগে কখনও বোলিং করেননি যিনি। পরে মূল বোলারদের ওপরও ছড়ি ঘোরান দুই কিউই ব্যাটসম্যান।
৬৩ বলে ফিফটি করা চ্যাপম্যান সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান ৯৪ বলেই। ৭৪ বলে ফিফটি করার পর ঝড় তোলেন মিচেলও।
জুটি থামে ১৭৪ বলে ১৯৯ রান তুলে। চারটি করে চার ও ছক্কায় ৮৪ বলে ৭৬ করেন মিচেল।
চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে চ্যাপম্যান থামেন ১৩ চার ও ৬ ছক্কায় ১৩২ রান করে। তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ১২৪, যে ইনিংসটি তিনি খেলেছিলেন ওয়ানডে অভিষেকেই, জন্মভূমি হংকংয়ের হয়ে। পরে তিনি বেছে নেন বাবার দেশ নিউ জিল্যান্ডকে।
এরকমই চমকপ্রদ গল্প মুহাম্মাদ আব্বাসের। ২০০৩ সালে তার জন্ম পাকিস্তানের লাহোরে। বাবা আজহার আব্বাস প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন পাকিস্তানে। গোটা পরিবার পরে চলে যায় নিউ জিল্যান্ড। সেখানকার ক্রিকেট সিস্টেমে বেড়ে উঠে সেটিই এখন আব্বাসের দেশ। অভিষেকে তিনি দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়লেন জন্মভূমির বিপক্ষেই।
ছয়ে নেমে ২৬ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেন আব্বাস। ফিফটি করেন ২৪ বলে।
ওয়ানডে অভিষেকে দ্রুততম ফিফটির আগের রেকর্ড ছিল যৌথভাবে ক্রুনাল পান্ডিয়া ও আলিক আথানেজের, ২৬ বলে।
৩৫ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের রান ছিল ১৭৮। পরের ১৫ ওভারে আসে ১৬৬ রান।
সালমানের ৫ ওভার থেকে আসে ৬৭ রান। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে প্রথমবার বোলিং করে তিন উইকেট নিলেও ইরফানের ৫ ওভার থেকে আসে ৫১ রান।
রান তাড়ায় পাকিস্তানের দুই ওপেনারের শুরুটা ছিল ভালো। তবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। অভিষেকে ৩৩ বলে ৩৯ করেন উসমান খান। জুটি থামে ৮৩ রানে। আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শাফিক ফেরেন ৩৯ বলে ৩৬ রান করে।
এরপর পাকিস্তানকে এগিয়ে নেন মূল দুই ভরসা বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। শুরুতে অবশ্য রানের গতিটা ধরে রাখতে পারেননি দুজন। পরে চেষ্টা করেন গতি বাড়াতে। প্রয়োজন ছিল চ্যাপম্যানের মতো আগ্রাসী ও বড় ইনিংস খেলার। সেটা পারেননি কেউই। জুটিতে ৭৬ রান আসে ৭৯ বলে। রিজওয়ানকে (৩৪ বলে ৩০) বিদায় করে প্রথম ওয়ানডে উইকেটের দেখা পান আব্বাস।
এরপরও পাকিস্তানের আশা ধরে রেখেছিলেন বাবর ও সালমান আলি আগা। ৫৯ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়েন দুজন। ৮৩ বলে ৭৮ করে বাবরের বিদায়ের পর থেকেই ক্রমে মুছে যায় দলের সম্ভাবনা।
এরপর কেবল একের পর এক ব্যাটসম্যানের আসা-যাওয়া। সালমান আউট হন ৪৮ বলে ৫৮ রান করে।
৫.৩ ওভারের মধ্যে পতন হয় শেষ ৭ উইকেটের। শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের তিনজন করেন এক রান করে, তিনজন শূন্য।
নবম ওয়ানডেতে প্রথমবার চার উইকেটের স্বাদ পান ন্যাথান স্মিথ।
সিরিজের পরের ম্যাচ বুধবার হ্যামিল্টনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৪৪/৯ (ইয়ং ১, কেলি ১৫, নিকোলস ১১, চ্যাপম্যান ১৩২, মিচেল ৭৬, আব্বাস ৫২, ব্রেসওয়েল ৯, হে ০, স্মিথ ২, ডাফি ৩*; নাসিম ১০-১-৬০-১, আকিফ ১০-১-৫৫-২, আলি ১০-০-৫৩-১, রউফ ১০-১-৩৮-২, সালমান ৫-০-৬৭-০, ইরফান ৫-০-৫১-৩)
পাকিস্তান: ৪৪.১ ওভারে ২৭১ (শাফিক ৩৬, উসমান ৩৯, বাবর ৭৮, রিজওয়ান ৩০, সালমান ৫৮, তাহির ১, ইরফান ০, নাসিম ০, রউফ ১, আকিফ ১, আলি ০*; ও’রোক ১০-১-৩৮-১, ডাফি ৯-০-৫৭-২, স্মিথ ৮.১-০-৬০-৪, ব্রেসওয়েল ১০-০-৬০-১, আব্বাস ৭-০-৪৩-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৭৩ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ : মার্ক চ্যাপম্যান