১৪ বছর পর বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে আবার যুক্ত হয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল এই কোচ।
Published : 08 Nov 2024, 12:15 PM
গায়ে জাতীয় দলের অনুশীলন জার্সি। মাথায় জাতীয় দলের ক্যাপ। ড্রেসিং রুমে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের হাতে তুলে দেওয়া হলো জাতীয় দলের পোশাকের বড় একটি প্যাকেট। সেই প্যাকেট খুলে একটি জার্সি নিজের সামনে উঁচিয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি। হয়তো অনুভব করলেন, অবশেষে…!
সামাজিক মাধ্যমে বিসিবির ভিডিওতে এভাবেই ধরা পড়লেন সালাউদ্দিন। বিপিএল বা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সময় এই ড্রেসিংরুমে নিয়মিতই পা পড়ে তার। তবে জাতীয় দলের কোচ হয়ে, দেশের একজন প্রতিনিধি হয়ে এই ড্রেসিং রুমে এলেন তিনি ১৪ বছর পর। জাতীয় দলের পোশাকও গায়ে চাপালেন এত লম্বা সময় পর। আবেগের দোলা খানিকটা লাগারই কথা হৃদয়ে।
ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল ও আলোচিত এই কোচকে সম্প্রতি জাতীয় দলর সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত এই দায়িত্বে থাকবেন তিনি।
নতুন দায়িত্বে ৫১ বছর বয়সী কোচের প্রথম সিরিজ এই মাসেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। তবে কাজ তিনি শুরু করে দিয়েছেন। মিরপুরে প্রতিদিন অনুশীলন করছেন যে ক্রিকেটাররা, তাদের সঙ্গে নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে তাকে।
২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে ফিল্ডিং কোচ ও সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন সালাউদ্দিন। সেই সময় ডেভ হোয়াটমোর ও পরে জেমি সিডন্সের কোচিং প্যানেলে ছিলেন তিনি। পরে আরও বছর খানেক বিসিবি একাডেমিতে কাজ করার পর ২০১১ সালে শেষ হয় বিসিবির হয়ে তার সম্পর্ক।
এত বছর পর বোর্ডের সঙ্গে নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা গেল এই প্রথম। কিছু দিন আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, সহকারী কোচ হিসেবে জাতীয় দলের কাজ করার বয়স এখন আর তার নেই। তবে সেই ভাবনার বদল ও সহকারী কোচ হয়েই ফেরার পেছনের কারণ তিনি তুলে ধরলেন।
“আমার এই নতুন করে আসার পেছনে একটা কারণ হচ্ছে… যেহেতু অনেক দিন ধরেই শুনছি দেশি কোচদের একটি প্ল্যাটফর্ম বিসিবি করে দেবে, সেই পথ যদি আমি করে দিতে পারি, সেটা যতদিনের জন্যই হোক… (ভেবেছি) দেশি কোচরাও হয়তো ভালো করবে। কাজেই পরের (দেশি) কোচ যারা আসবে, তাদের প্রতি বোর্ডের বিশ্বাস বাড়বে, মানুষের বিশ্বাস বাড়বে, জনগনের বিশ্বাস বাড়বে এবং সেই সাথে কোচদেরও নিজেরও বিশ্বাস বাড়তে যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা ভালো করতে পারি।”
“এই বিশ্বাসটা কারও না কারও নেওয়ার উচিত ছিল। আমি যদি কাজটা ঠিকভাবে করতে পারি, পরের কোচদের জন্য বড় একটা পথ খেলা হয়ে যাবে। আমার যে সমাজ, যে কোচ, সেই কোচদের পথ দেখানোর বড় একটা দায়িত্ব কিন্তু আমার পড়ে গেছে এবং সেটাকেই আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমি যদি ভালো করতে পারি, পরের কোচদের অনেক জায়গাতেই পথ খুলে যাবে। যেটা হয়তো পরবর্তী জীবনে আমাকে আমাকে অনেক তৃপ্তি দেবে।”
গত অগাস্টে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর ফারুক আহমেদ শুরু থেকেই বলে আসছিলেন, দেশের কোচদের গুরুত্ব দিতে চান তারা এবং জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে নিয়োগ দিতে চান। সেটির ধারাবাহিকতায় এলো সালাউদ্দিনের এই নিয়োগ।
দুই যুগে বেশি সময় ধরে কোচিং করানো এই কোচ বললেন, তার ফিরে আসার পেছনে বোর্ড প্রধানের ভূমিকা ছিল বড়। পাশাপাশি দেশের ক্রিকেটকে কিছু দেওয়ার তাড়নাও ছিল তার নিজের।
“বেশ কিছুদিন ধরেই আসলে কথা হচ্ছিল। আমার এই কাজটা করার পেছনে ফারুক ভাইয়ের অবদান অনেক বেশি। তিনি আমাকে অনেকবার ডেকেছেন, কথা বলেছেন, বুঝিয়েছেন যেন, কেন আমাদের স্থানীয় কোচদের দরকার বাংলাদেশ দলে।”
“আমারও যে ইচ্ছে ছিল না, তা নয়। তবে অনেক কারণেই আসতে পারছিলাম না। আমার মনে হয়েছে, এখনই হয়তো সেরা সময়, যেটা দিয়ে বাংলাদেশকে আবারও হয়তো সার্ভিস দিতে পারব। আমার ইচ্ছে আছে, এত বছরের যে কোচিং অভিজ্ঞতা, এটা যেন আরও বড় পরিসরে কাজে লাগাতে পারি। দেশের যদি কিছুটা উপকারও হয়, কোচিং ক্যারিয়ারের শেষে দিকে আমার নিজেরও হয়তো তা ভালো লাগবে।”