যে কারণে এই দুটি জয় হাবিবুল বাশারের চোখে ‘স্পেশাল’

অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলেও ইংল্যান্ড সিরিজের সাফল্যকে এগিয়ে রাখছেন জাতীয় নির্বাচক ও সাবেক এই অধিনায়ক।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 11:22 AM
Updated : 13 March 2023, 11:22 AM

প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের দাপট, দ্বিতীয়টিতে বোলারদের জাদু, দুই ম্যাচেই দারুণ ফিল্ডিং প্রদর্শনী- তিন বিভাগেই ইংল্যান্ডের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে আগেও বড় দলের বিপক্ষে সাফল্য মিলেছে। তবে এবারের খেলার ধরনে তৃপ্ত নির্বাচক হাবিবুল বাশার। নানা পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় এই সিরিজ জয়কেই এগিয়ে রাখছেন তিনি।  

কয়েক বছর আগে টি-টোয়েন্টিতে 'বাংলাদেশি ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট' খেলার কথা বলেছিলেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহসহ সেই সময়ের অন্যরা। গত বছর এই সংস্করণকে বিদায় জানিয়েছেন তামিম। মাহমুদউল্লাহ এখন দলের বাইরে। তবে সেই ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলার অভিযান এখনও চলছে বাংলাদেশের। হাবিবুলের মতে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ওই ধারণার কাছাকাছি গিয়েছে দল।  

সোমবার দুপুরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, এই সিরিজে জয়ের পাশাপাশি তাকে বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে বাংলাদেশের খেলার ধরন।    

“(সিরিজ জেতায়) অবশ্যই খুব ভালো লেগেছে। কয়েকটা কারণ তো অবশ্যই ছিল। আমরা যেই ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চাচ্ছি, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে খেলতে পেরেছি। অনেক দিন ধরে চিন্তাভাবনা করছি, চেষ্টা করছিলাম। সবসময় হচ্ছিল না।”  

“সাফল্য যে আগে ছিল না, তা নয়। তবে আমরা যেভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি, এই সিরিজে কিছুটা হলেও পেরেছি। সিরিজের ফল ২-০ হয়ে গেছে। আমরা সিরিজ জিতে গেছি। তবে যেটা বেশি তৃপ্তিদায়ক ছিল, টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যেভাবে আমরা খেলতে চাই, তার কিছুটা হলেও এই সিরিজে এখন পর্যন্ত আমরা প্রকাশ করতে পেরেছি।” 

টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এখনও ঠিক সমীহ জাগানিয়া দল হতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এরই মধ্যে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের মতো বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ মিলেছে। ২০২১ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে দুই প্রতিবেশি দেশকে পরপর হারায় বাংলাদেশ।  

তবে ওই দুই সিরিজে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মিরপুরের উইকেট। এমনিতে উইকেট এখানে বরাবরই মন্থর ও স্পিন সহায়ক। কিন্তু ওই দুই সিরিজে উইকেট ছিল ভয়ঙ্কর টার্নিং ও অসম বাউন্সের। ভীষণরকম দুরূহ সেই উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল বিভীষিকা। 

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পাঁচ ম্যাচে দলীয় স্কোর দেড়শ পেরিয়েছিল স্রেফ একবার। পাঁচ ম্যাচে প্রথম ইনিংসের গড় সংগ্রহ ছিল মোটে ১১৬ রান। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছিল আরও বেহাল দশা। পাঁচ ম্যাচে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ছিল ১৩১ রান। 

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে এমনটা বলার সুযোগ নেই। চট্টগ্রামের উইকেটে ব্যাটসম্যান বা বোলারদের জন্য আলাদা করে কোনো সুবিধা ছিল না। ব্যাটে-বলে প্রায় সমান লড়াই হয়েছে। মিরপুরের উইকেটে কিছুটা টার্ন থাকলেও সেটি ব্যাটসম্যানদের জন্য বধ্যভূমি ধরনের কিছু ছিল না।  

তাই ওই দুই সিরিজের সঙ্গে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের সিরিজ জয়ে স্পষ্ট পার্থক্য দেখছেন হাবিবুল।  

“(এবারের জয় আগের সব সিরিজকে ছাপিয়ে গেছে কি না) অবশ্যই অবশ্যই…কালকের (রোববার) ম্যাচটা একটু লো-স্কোরিং খেলা হয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ড খুব ভালো শুরু করেছিল। সম্ভবত ৬ ওভারে ৫০ রান করে ফেলেছিল। সেখান থেকে যে কোনো দল ১৭০-১৮০ রান করে ফেলতে পারে। পরে আমরা দারুণ বোলিং করেছি। ঘুরে দাঁড়িয়েছি।”  

“(২০২১) বিশ্বকাপের আগে আমরা অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে যে রকম উইকেটে খেলেছিলাম, সেটা একটু ভিন্ন ছিল। কিন্তু এবার উইকেট কিন্তু অতটা খারাপ ছিল না। আমার মনে হয় না, বল অতটা স্পিন করছে। হয়তো কিছুটা মন্থর থাকতে পারে। মনে হয় না, খুব বেশি কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে ম্যাচ দুইটি জিতেছি। এজন্য আরও বেশি তৃপ্তিদায়ক।”  

সবকিছু বিবেচনায় তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই দুটি জয় হাবিবুলের কাছে আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে। 

“অনেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছি, অনেক ম্যাচ জিতেছি। তবে এই দুইটা ম্যাচ একটু স্পেশাল মনে হয়েছে আমার। কারণ আমার মনে হয় না, কন্ডিশনের খুব বেশি সুবিধা নিয়ে ম্যাচ দুইটি জিতেছি। আর দলের যে চিন্তাভাবনা, আমি যেটুকু দেখেছি, দলের সঙ্গে কথা বলে, আমার মনে হয় দলও এখন প্রস্তুত, যে কোনো কন্ডিশনে আমরা জিততে চাই। কন্ডিশনের সুবিধা সবসময় নিতে চাই না। এই মনোভাবটা আমাকে সবচেয়ে বেশি খুশি করেছে।”