কুসালের ব্যাটিং ঝড় ও থুশারার বোলিং তোপে বাংলাদেশের সিরিজ হার

বিধ্বংসী এক স্পেলে হ্যাটট্রিক করে বাংলাদেশের আশা গুঁড়িয়ে দেন সিরিজে প্রথমবার মাঠে নামা নুয়ান থুশারা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2024, 01:08 PM
Updated : 9 March 2024, 01:08 PM

কুসাল মেন্ডিসের দারুণ ইনিংস ও নুয়ান থুশারার বিধ্বংসী বোলিংয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

সিলেটে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা জেতে ২৮ রানে। তিন ম্যাচের সিরিজ লঙ্কানরা জিতে নেয় ২-১ ব্যবধানে।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার ২০ ওভারে লঙ্কানরা ৭ উইকেটে তোলে ১৭৪ রান। ৬টি করে চার ও ছক্কায় ৫৫ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৬ রানের ইনিংস খেলেন কুসাল মেন্ডিস।

রান তাড়ায় থুশারার আগুনে বোলিংয়ে ৩২ রানেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর পাল্টা আক্রমণে রিশাদ হোসেনের ফিফটিতে ভদ্রস্থ হয় ব্যবধান।

৭ ছক্কায় ৩০ বলে ৫৩ রান করেন রিশাদ। বাংলাদেশের হয়ে এক টি-টোয়েন্টি ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এটিই। দেশের হয়ে আটে নেমে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও তার। তবে দলের পরাজয় ঠেকাতে যথেষ্ট হয়নি তা।

সিরিজে প্রথমবার খেলতে নেমে ব্যবধান গড়ে দেন থুশারা। তার স্লিঙ্গিং অ্যাকশন ও সুইং বোলিংয়ের কোনো জবাবই পায়নি বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডার।

নিজের প্রথম দুই ওভারেই হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট নেন ২৯ বছর বয়সী পেসার। শেষ দিকে দুটি ছক্কা হজম করেন তিনি তাসকিনের ব্যাটে। তবে বলে উইকেট নিয়ে পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট।

এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিতে পারলেন কোনো লঙ্কান বোলার।

রান তাড়ায় প্রথম বলেই সামান্য একটুর জন্য এলবিডব্লিউ হওয়া থেকে রক্ষা পান লিটন কুমার দাস। তবে ফেরার পথ ধরতে খুব একটা সময় নেননি তিনি। তৃতীয় ওভারে পায়ে টানা লাগায় মাঠ ছেড়ে যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, তার জায়গায় বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট উপহার পান ধানাঞ্জায়া ডি সিলভা।

পরের ওভারেই থুশারার হ্যাটট্রিক। লেংথ থেকে ভেতরে ঢোকা বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে বোল্ড হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের ব্যাটসম্যান তাওহিদ হৃদয় প্রথম বলেই পেয়ে যান অসাধারণ এক ডেলিভারি। লফ-মিডলে পিচ করা বলের লাইনেই ব্যাট পেতে দিয়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু বল সুইং করে তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে।

পরের ডেলিভারিতেই এলবিডব্লিউ মাহমুদউল্লাহ। শ্রীলঙ্কার ষষ্ঠ বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পান থুশারা।

তার পরের ওভারে লেট সুইং করা ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ছত্রখান হয় সৌম্য সরকারের স্টাম্প।

৯ বলে স্রেফ ১ রান দিয়ে ৪ উইকেট তখন থুশারার।

একটু পর যখন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার হন জাকের আলি (১৩ বলে ৪), ৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন রান আর সবচেয়ে বড় পরাজয়ের রেকর্ড তখন চোখ রাঙাচ্ছে।

সেখান থেকে রিশাদ দলকে উদ্ধার করেন তো বটেই, নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণও রাখেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে তার কিছু ভালো ইনিংস আছে, বড় ছক্কা মারতে পারার দক্ষতাও নানা সময়ে দেখিয়েছেন। এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মেলে ধরেন সেই বিজ্ঞাপন।

হাসারাঙ্গাকে টানা দুটি ছক্কায় তার ঝড়ের শুরু। মাহিস থিকশানাকে মারেন তিনি চারটি ছক্কা, এর তিনটিই এক ওভারে। বিনুরা ফার্নান্দোকে ছক্কা মেরে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি কেবল ২৬ বলে।

সেই ছক্কায় পেছনে ফেলে দেন এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে জাকের আলির ৬ ছক্কার রেকর্ডকে।

এরপর আর বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। বিদায় নেন ৫৩ রানে। আটে নেমে বাংলাদেশের হয়ে আগের সর্বোচ্চ ছিল আফিফ হোসেনের ৫২ রান।

তাসকিন অবশ্য এরপরও চালিয়ে যান। টানা দুটি ছক্কা মারেন তিনি থুশারাকে। ২০ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি, তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের যা সেরা। পরে বিনুরা ফার্নান্দোর বলে একটি ছক্কা মারেন মুস্তাফিজুর রহমানও। তাতে ব্যবধান কমে আরেকটু।

শেষ ১০ ওভারে ১০৪ রান তোলে বাংলাদেশ। কিন্তু আসল সর্বনাশ তো হয়ে যায় প্রথম ১০ ওভারেই!

ম্যাচের প্রথম ভাগে টস হেরে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে নামে টপ অর্ডারে পরিবর্তন এনে। ফর্মে না থাকা আভিশকা ফার্নান্দোর বদলে সুযোগ পেয়ে অবশ্য ধানাঞ্জায়া ডি সিলভাও পারেননি ভালো কিছু করতে। তাসকিন আহমেদের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি ১২ বলে ৮ করে।

আগের দুই ম্যাচে ভালো খেলা কামিন্দু মেন্ডিস এ দিন রিশাদ হোসেনকে ছক্কার চেষ্টায় ফিরে যান অল্পতেই (১২ বলে ১২)। তবে আরেক প্রান্তে কুসালের ব্যাটে রান বাড়তে থাকে শ্রীলঙ্কার রান। পেস-স্পিন দুটোই সামলে দলকে এগিয়ে নেন তিনি।

তৃতীয় উইকেটে কার্যকর এক জুটি গড়ে তোলেন তিনি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে। মূল কাজ যদিও কুসালই করেন। তিনি ছিলেন প্রায় অপ্রতিরোধ্য। সাত ওভার শেষে তার রান ছিল ২০ বলে ১৮। সেখান থেকে ফিফটিতে পৌঁছে যান তিনি ৩৫ বলে।

রিশাদকে একটি ছক্কা মারলেও হাসারাঙ্গা ঠিক ডানা মেলতে পারেননি। মুস্তাফিজুর রহমানকে র‌্যাম্প শট খেলে তিনি ধরা পড়েন থার্ডম্যান সীমানায়।

জুটি থামে ৩১ বলে ৫৯ রানে। তাতে কুসালের অবদান ১৮ বলে ৩৮। হাসারাঙ্গা ফেরেন ১৩ বলে ১৫ করে।

কুসাল তখন অপ্রতিরোধ্য। চার-ছক্কার স্রোত বইতে থাকে তার ব্যাটে। ১৫ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ১৩৫। সেখান থেকে ১৮০ তো বটেই, ২০০ রানও মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব।

কিন্তু পরের চার ওভারে নিয়মিত উইকেট নিয়ে রানও আটকে রাখে বাংলাদেশ। বিপজ্জনক চারিথ আসালাঙ্গা ৩ রানেই ফেরেন শরিফুল ইসলামের দারুণ এক শর্ট বলে। শরীর তাক করে আসা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে শেষ হয় কুসালের ইনিংস। রিশাদকে একটি ছক্কা মারার পরের বলে বিদায় নেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসও।

১৬ থেকে ১৯ ওভার পর্যন্ত চার ওভারে রান আসে ২৫। শেষ ওভারে মুস্তাফিজের বলে সাদিরা সামারাউইক্রামার চার ও দাসুন শানাকার ছক্কায় তবু লঙ্কানরা পৌঁছে যায় ১৭৫ রানের কাছে। শেষ দিকে ৯ বলে ১৯ রান করেন শানাকা। 

লক্ষ্যটা চ্যালেঞ্জিং হলেও বাংলাদেশের সম্ভাবনার কমতি ছিল না। কিন্তু তা শেষ হয়ে যায় থুশারার তোপে। ম্যাচের সেরাও তিনিই।

তিন ম্যাচে ৫৯, ৩৬ ও ৮৬ রান করে সিরিজের সেরা কুসাল মেন্ডিস।

দুই দল এখন মুখোমুখি হবে ওয়ানডে সিরিজে। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের সিরিজটি শুরু বুধবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৭৪/৭ (ধানাঞ্জায়া ৮, কুসাল মেন্ডিস ৮৬, কামিন্দু মেন্ডিস ১২, হাসারাঙ্গা ১৫, আসালাঙ্কা ৩, ম্যাথিউস ১০, শানাকা ১৯; সামারাউইক্রামা ৭*; শরিফুল ৪-০-২৮-১, তাসকিন ৪-০-২৫-২, শেখ মেহেদি ৩-০-২২-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৭-১, রিশাদ ৪-০-৩৫-২, সৌম্য ১-০-১১-০)।

বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪৬ (লিটন ৭, সৌম্য ১১, শান্ত ১, হৃদয় ০, মাহমুদউল্লাহ ০, জাকের ৪, শেখ মেহেদি ১৯, রিশাদ ৫৩, তাসকিন ৩১, শরিফুল ৪, মুস্তাফিজ ৭*; ম্যাথিউস ১.১-০-৫-০, বিনুরা ৪-০-৩৯-০, ধানাঞ্জায়া ০.৫-০-২-১, থুশারা ৪-১-২০-৫, হাসারাঙ্গা ৪-০-৩২-২, থিকশানা ৪-০-৩৫-১ শানাকা ১.৪-০-১১-১)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ২৮ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে শ্রীলঙ্কা ২-১ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: নুয়ান থুশারা।

ম্যান অব দা সিরিজ: কুসাল মেন্ডিস।