রানখরায় ভুগতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত অবশেষে পেলেন তিন অঙ্কের স্বাদ, আদ্যন্ত ব্যাটিংয়ে দেড়শ ছুঁইছুঁই ইনিংস খেললেন এনামুল হক বিজয়।
Published : 18 Mar 2025, 08:00 PM
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ঘরোয়া ক্রিকেট, এক সংস্করণ থেকে আরেক সংস্করণ, দেশের ভেতরে আর বাইরে, পেরিয়ে গেছে একের পর এক ম্যাচ। পঞ্জিকার পাতায় হতে চলেছে বছর। সেঞ্চুরির স্বাদ হয়তো ভুলেই যেতে বসেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুঃসময়ের আঁধার পেরিয়ে অবশেষে আলোর দেখা পেলেন তিনি। স্বীকৃত ক্রিকেটে ৪৭ ইনিংস পর দেখা পেলেন শতরানের। অধিনায়কের ব্যাটে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা পেল আরেকটি জয়।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মঙ্গলবারের আরেক ম্যাচে ১৪৯ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন এনামুল হক। বল হাতে তাসকিন আহমেদের রান খরচের সেঞ্চুরির দিনে টানা পঞ্চম জয় পায় এনামুলের গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
এছাড়া দুই ম্যাচ পর মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে জয়ে ফিরল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব।
শান্তর সেঞ্চুরিতে আবাহনীর জয়
শুরুতে সাইফ হাসান, পরে মাহমুদুল হাসান জয়, ফিফটি পেরিয়ে আটকে গেলেন দুজনই। বাকিদের সম্মিলিত অবদানে তিনশর কাছাকাছি গেল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। তবে জয়ের জন্য যথেষ্ট হলো না সেই। নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে ম্যাচ জিতে নিল আবাহনী লিমিটেড।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রূপগঞ্জকে ৪ উইকেটে হারায় আবাহনী। ২৯৩ রানের লক্ষ্য ৮ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
পরাজয়ে যাত্রা শুরুর পর টানা পাঁচ ম্যাচ জিতল আবাহনী। দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া দলটিই এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। এক ঝাঁক তারকা ক্রিকেটার নিয়ে গড়া রূপগঞ্জের ছয় ম্যাচে এটি তৃতীয় পরাজয়।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই তানজিদ হাসানের উইকেট হারায় রূপগঞ্জ। ২০ বলে ২৪ রান করে ফেরেন ছন্দে থাকা ওপেনার। তিন নম্বরে নেমে সৌম্য সরকার কিছু দারুণ শট খেললেও ৩১ বলে ২৭ রানের বেশি করতে পারেননি।
তৃতীয় উইকেটে ৯৪ রানের জুটি গড়েন সাইফ ও জয়। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৪ বলে ৫৮ রান করে ফেরেন জয়। ১০৩ বলে ৬৭ রান করেন সাইফ। আফিফ হোসেন, জাকের আলি ও শেখ মেহেদি হাসানের ছোট ছোট ইনিংসে তিনশ ছুঁইছুঁই পুঁজি পায় রূপগঞ্জ।
প্রথম দুই ওভার মেডেন করলেও ২ উইকেটের জন্য ১০ ওভারে ৭১ রান খরচ করেন নাহিদ রানা। এছাড়া মোসাদ্দেক হোসেনও নেন ২ উইকেট।
রান তাড়ায় প্রথম ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন পারভেজ হোসেন। তবে চাপ বাড়তে দেননি জিসান আলম ও শান্ত। দুজন মিলে ১০৪ বলে গড়ে তোলেন ১০৭ রানের জুটি।
সাইফ হাসানের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৪৬ বলে ৪৩ রান করা জিসান। এরপর ভালো শুরু করেও বেশি দূর যেতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন।
তবে শান্ত ছিলেন আস্থা হয়ে। লিগে আগের ৪ ইনিংস মিলিয়ে তিনি করেছিলেন ৭৮ রান। এই এক ইনিংসেই তিনি ছাড়িয়ে যান সেই রানকে। ৫২ বলে ফিফটি করে একই ছন্দে এগোতে থাকেন জাতীয় দলের অধিনায়ক। আরও এগিয়ে তিন অঙ্ক পূর্ণ করেন তিনি ১০৬ বলে।
স্বীকৃত ক্রিকেটে তার সবশেষ শতরান ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেই, গত এপ্রিলে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে।
লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে ত্রয়োদশ সেঞ্চুরির ইনিংসটি অবশ্য বড় করতে পারেননি আবাহনী অধিনায়ক। তবে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে রাখেন অনেকটা।
এরপর মোসাদ্দেক হোসেন ও এসএম মেহেরব হাসান অল্পে আউট হলে কিছুটা শঙ্কায় পড়ে যায় আবাহনী। তবে মুমিনুল হক ৩২ বলে ৩৫ ও মাহমুজুর রহমান রাব্বি ২৫ বলে ৩১ রান করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২৯২/৬ (তানজিদ ২৪, সাইফ ৬৭, সৌম্য ২৭, জয় ৫৮, আফিফ ২৫, জাকের ৩৫*, আকবর ১২, মেহেদি ২৮*; নাহিদ ১০-২-৭১-২, মোসাদ্দেক ৯-০-৫৭-২, মেহেরব ৬-০-১৪-১, মৃত্যুঞ্জয় ৯-০-৬৫-০, রকিবুল ১০-১-৪৫-১, রাব্বি ৬-০-৩৭-০)
আবাহনী লিমিটেড: ৪৮.৪ ওভারে ২৯৩/৬ (জিসান ৪৩, পারভেজ ০, শান্ত ১০১, মিঠুন ৩৪, মোসাদ্দেক ১৯, মুমিনুল ৩৫*, মেহেরব ১৮, রাব্বি ৩১*; শরিফুল ৫-১-৩৭-২, তানজিম ৭-০-৩৭-০, তানভির ১০-০-৩৯-০, মেহেদি ১০-০-৫৩-২, সাইফ ১০-১-৫০-১, জয় ৩-০-৩১-০, আফিফ ৩.৪-০-২২-১)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত
এনামুলের সেঞ্চুরি, তাসকিনের অনাকাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ৩৩৭ রানের লক্ষ্যে ১১ বল বাকি থাকতে ২৭১ রানে গুটিয়ে যায় তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাত্র ৯৩ রানে গুটিয়ে ১০ উইকেটে হেরেছিল গাজী গ্রুপ। এরপর টানা পাঁচ ম্যাচ জিতল তারা। আবাহনী লিমিটেডের সমান ১০ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটের হিসেবে দুই নম্বরে তারা।
ছয় ম্যাচে মোহামেডানের এটি দ্বিতীয় পরাজয়। টানা চার জয়ের পর হারের স্বাদ পেল তারা।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা গাজী গ্রুপের বড় পুঁজির মূল কারিগর এনামুল হক। ইনিংস সূচনা করতে নেমে শেষ পর্যন্ত খেলে ১৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ কিপার-ব্যাটসম্যান। ১৪৩ বলের ইনিংসে ১২ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন তিনি।
সাদিকুর রহমানের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ১৪১ রান যোগ করেন এনামুল। ৭৫ বলে ৬০ রান করে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার সাদিকুর। পরে শোভন মোড়ল, শামসুর রহমানরা বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হলে তিনশ ছোঁয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গাজী গ্রুপ।
চতুর্থ উইকেটে মাত্র ৪৩ বলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন এনামুল ও তোফায়েল আহমেদ। শেষ দিকে ঝড় তুলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ২৯ বলে ৬৩ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন তোফায়েল।
এনামুল-তোফায়েলের শেষের তাণ্ডবে নিজের স্পেলের শেষ ২ ওভারে ৪৫ রান খরচ করেন তাসকিন আহমেদ। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ১০৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। দেশের লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে এটিই সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড।
রান তাড়ায় শুরুতে কিছুটা সময় নিয়ে পরে হাত খোলেন তামিম ইকবাল। একের পর এক বাউন্ডারিতে পাওয়ার প্লেতে ৭২ রান করে মোহামেডান।
একাদশ ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করা তামিম। এবার ৫ চার ও ৩ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে ৪৮ রান। আরেক ওপেনার রনি তালুকদার ৪টি করে চার-ছক্কায় ৯০ বলে খেলেন ৭৪ রানের ইনিংস।
পরে তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। বড় লক্ষ্য তাড়া করার সম্ভাবনাও তাই জাগাতে পারেনি মোহামেডান। মুশফিক ৪৬ বলে ৪৯ ও হৃদয় ৫২ বলে ৩৬ রান করে আউট হন।
গাজী গ্রুপের পক্ষে ৪ উইকেট নেন আব্দুল গাফফার সাকলাইন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৫০ ওভারে ৩৩৬/৫ (৬০, এনামুল ১৪৯*, শোভন ১০, শামসুর ৩২, তোফায়েল ৬৩, সাকলাইন ১০, আমিনুল ১*; তাসকিন ১০-০-১০৭-৩, নাসুম ১০-০-৪১-১, তাইজুল ১০-০-৩৯-০, সাইফ ১০-০-৭৭-০, মিরাজ ১০-০-৬৬-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৮.১ ওভারে ২৭১ (রনি ৭৪, তামিম ৪৮, মাহিদুল ৩, হৃদয় ৩৬, মুশফিকুর ৪৯, আরিফুল ১৮, সাইফ ১২, মিরাজ ৩, নাসুম ১৮, তাসকিন ১, তাইজুল ২*; লিওন ১০-১-৩৭-১, পারভেজ ৮.১-০-৭১-১, শামসুর ১-০-৬-০, হাশিম ১০-০-৩৬-২, শামীম ৮-০-৪৬-০, গাফফার ৯-০-৫৯-৪, তোফায়েল ২-০-১২-০)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৬৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক
চার ফিফটিতে জয়ে ফিরল প্রাইম ব্যাংক
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট ক্লাবে ৪২২ রানের ইতিহাস গড়ার পর বিকেএসপিতে গিয়ে পরপর দুই ম্যাচ হেরেছিল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। মিরপুরে ফিরেই তারা আবার পেল জয়ের দেখা। ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের বিপক্ষে তাদের জয় ৫৫ রানে।
সাব্বির হোসেন, জাকির হাসান, ইরফান শুক্কুর ও শামীম হোসেনের ফিফটির সৌজন্যে ৫ উইকেটে ৩০৮ রান করে প্রাইম ব্যাংক। জবাবে ২৫৩ রানে গুটিয়ে যায় ধানমন্ডি।
টস হেরে ব্যাটিং নেমে প্রথম ওভারেই ঝড় তোলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। প্রথম বল 'ওয়াইড' করেন কামরুল ইসলাম। পরে বৈধ প্রথম দুই ডেলিভারিই ছক্কায় ওড়ান নাঈম। এক বল পর আবার মারেন ছক্কা।
ওভারের শেষ দুই বলে বাউন্ডারিসহ মোট ২৭ রান পায় প্রাইম ব্যাংক। পরে অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নাঈম। ১৮ বলে ৩৭ রান করে কামরুলের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন বাঁহাতি ওপেনার।
আরেক ওপেনার সাব্বিরের ব্যাট থেকে আসে ৭০ বলে ৫০ রান। তিন নম্বরে নামা জাকির ৬৪ রান করতে খেলেন ৮৬ বল। পরে শাহাদাত হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুনও দ্রুত আউট হয়ে যান।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দ্রুত রান তোলেন ইরফান ও শামীম। দুজন মিলে ৬২ বলে গড়েন ৯৬ রানের জুটি। ইরফান ৫২ বলে করেন ৫৬ রান। ৬ চারের সঙ্গে ২ ছক্কায় ৩৭ বলে ৬২ রান করেন শামীম।
বড় লক্ষ্যে কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি ধানমন্ডি। তৃতীয় উইকেটে ফজলে মাহমুদ ও ইয়াসির আলি চৌধুরি ৯৩ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে ব্যর্থ হন।
ইয়াসির ৫৬ বলে করেন ৪৬ রান। ফজলে মাহমুদের ব্যাট থেকে আসে ১০৪ বলে ৭৯ রান।
শেষ দিকে সানজামুল ইসলামের ৩৭ রানের ইনিংস পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩০৮/৫ (নাঈম ৩৭, সাব্বির ৫০, জাকির ৬৪, শাহাদাত ১৪, ইরফান ৫৬*, মামুন ৭, শামীম ৬২*; কামরুল ৮-০-৭৮-১, এনামুল ১০-০-৬৩-০, মইন ১০-০-৪৬-৩, মুরাদ ৯-০-৪০-১, জিয়া ৬-০-৩৬-০, সানজামুল ৬-১-৩১-০, ইয়াসির ১-০-৮-০)
ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব: ৪৯.৫ ওভারে ২৫৩ (হাবিবুর ৪, জাকিরুল ১৯, ফজলে মাহমুদ ৭৯, ইয়াসির ৪৬, সোহান ৮, মইন ৭, জিয়াউর ১৭, এনামুল ৫, সানজামুল ৩৭, কামরুল ২, মুরাদ ৯*; হাসান ১০-১-৩৮-৩, খালেদ ৯-০-৩২-২, আরাফাত ১০-০-৪৫-৩, মামুন ১০-০-৫৫-১, শামীম ৫-০-২১-০, রিশাদ ৫-০-৪৫-০, শাহাদাত ০.৫-০-৮-১)
ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৫৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামীম হোসেন