দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত সিরিজ
কম রানের ম্যাচে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ভারতকে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা।
Published : 11 Nov 2024, 12:01 AM
আর্শদিপ সিংকে পরপর দুটি চার মেরে এক ওভার বাকি থাকতে ম্যাচের ইতি টেনে দিলেন ট্রিস্টান স্টাবস। অথচ শেষ চার ওভারে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ৩৭ রান। কঠিন হয়ে যাওয়া সেই সমীকরণ আগ্রাসী এক জুটিতে মিলিয়ে দিলেন স্টাবস ও জেরল্ড কুটসিয়া। রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল প্রোটিয়ারা।
বিফলে গেল ভারুন চক্রবর্তির চমৎকার বোলিং। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নেওয়ার উপলক্ষ জয়ে রাঙানো হলো না ৩৩ বছর বয়সী লেগ স্পিনারের। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত হেরে গেল ৩ উইকেটে।
এই সংস্করণে টানা ১১ ম্যাচ জয়ের পর হারের তেতো স্বাদ পেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
ডারবানে প্রথম ম্যাচে ২০২ রানের পুঁজি গড়ে বড় জয় পাওয়া ভারত রোববার গেবেখায় ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে করতে পারে কেবল ১২৪ রান। হার্দিক পান্ডিয়া সর্বোচ্চ ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ৪৫ বলে।
রান তাড়ায় ষোড়শ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ৮৬। সেখান থেকে মাত্র ২০ বলে ৪২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলের জয় নিয়ে ফেরেন স্টাবস ও কুটসিয়া।
৭ চারে ৪১ বলে ৪৭ রান করে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান স্টাবস। পেসার কুটসিয়া ৯ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় খেলেন ১৯ রানের মূল্যবান ইনিংস।
ভারুন ৫ উইকেট নেন ১৭ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতীয় কোনো স্পিনারের যৌথভাবে সেরা বোলিং এটি। ২০২৩ সালে ১৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদিপ ইয়াদাভও।
গত মাসে দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে প্রায় তিন বছর পর এই সংস্করণে ফেরার পর ৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিলেন ভারুন।
সেন্ট জর্জেস পার্কে হালকা বৃষ্টি হয় ম্যাচ শুরুর আগে। টস জিতে বোলিং নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুরুতে উইকেটে সিম মুভমেন্ট পান পেসাররা। সেটাই কাজে লাগান মার্কো ইয়ানসেন, কুটসিয়ারা।
প্রথম চার ওভারের মধ্যেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। টানা দুই সেঞ্চুরির পর এবার শূন্য রানে ফেরেন সাঞ্জু স্যামসন। আভিশেক শার্মা ও অধিনায়ক সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ বিদায় নেন ৪ রান করে।
চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন তিলাক ভার্মা ও আকসার প্যাটেল। ৩০ রানের জুটি গড়েন দুজন। ২০ বলে ২০ রান করে বিদায় নেন তিলাক। আকসার রান আউট হন ২১ বলে ২৭ রান করে।
রিঙ্কু সিং টিকতে পারেননি। সপ্তম উইকেটে আর্শদিপের সঙ্গে ২৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৭ রানের জুটিতে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন পান্ডিয়া। তার ৩৯ রানের ইনিংস গড়া ৪টি চার ও একটি ছক্কায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে হাত ঘোরানো ছয় জনের সবাই করেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। একটি করে উইকেট নেন পাঁচ জন।
লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে রায়ান রিকেলটন ও রিজা হেনড্রিকস যোগ করেন ২২ রান। রিকেলটনকে ফিরিয়ে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন আর্শদিপ।
তিনে নেমে টিকতে পারেননি অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তাকে গুগলিতে বোল্ড করে শিকার ধরা শুরু ভারুনের। নিজের পরের ওভারে আরেকটি গুগলিতে হেনড্রিকসকে (২১ বলে ২৪) বোল্ড করে দেন তিনি।
দশম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে ইয়ানসেনকেও বোল্ড করেন ভারুন। নিজের পরের ওভারে প্রথম দুই বলে আরও দুই শিকার ধরে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন তিনি।
হাইনরিখ ক্লসেন ক্যাচ দেন বাউন্ডারিতে। গুগলিতে বোল্ড হয়ে শূন্য রানে বিদায় নেন ডেভিড মিলার। তখন ৬৬ রানে ৬ উইকেট নেই দক্ষিণ আফ্রিকার।
আরেক লেগ স্পিনার রাভি বিষ্ণইয়ের শিকার হয়ে আন্দিলে সিমেলানে যখন ফিরলেন, ম্যাচ তখন অনেকটাই ভারতের মুঠোয়। কিন্তু ম্যাচ বের করে নেন কুটসিয়া ও স্টাবস।
২৪ বলে দরকার যখন ৩৭ রান, সপ্তদশ ওভারে আর্শদিপকে ১০৩ মিটার ছক্কায় ওড়ান কুটসিয়া। ওই ওভারে একটি চার মারেন স্টাবস।
পরের ওভারে আভেশ খানের প্রথম দুই বলে দুই বাউন্ডারিতে সমীকরণ অনেকটা সহজ করে ফেলেন কুটসিয়া। পরের ওভারে আর্শদিপকে চারটি বাউন্ডারিতে ম্যাচের ইতি টেনে হুঙ্কার ছাড়েন স্টাবস।
আগামী বুধবার তৃতীয় ম্যাচ হবে সেঞ্চুরিয়নে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১২৪/৬ (স্যামসন ০, আভিশেক ৪, সুরিয়াকুমার ৪, তিলাক ২০, আকসার ২৭, পান্ডিয়া ৩৯*, রিঙ্কু ৯, আর্শদিপ ৭*; ইয়ানসেন ৪-১-২৫-১, কুটসিয়া ৪-০-২৫-১, সিমেলানে ৩-০-২০-১, মহারাজ ৪-০-২৪-০, মার্করাম ১-০-৪-১, পিটার ৪-০-২০-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯ ওভারে ১২৮/৭ (রিকেলটন ১৩, হেনড্রিকস ২৪, মার্করাম ৩, স্টাবস ৪৭*, ইয়ানসেন ৭, ক্লসেন ২, মিলার ০, সিমেলানে ৭, কুটসিয়া ১৯*; আর্শদিপ ৪-০-৪১-১, আভেশ ৩-০-২৩-০, পান্ডিয়া ৩-০-২২-০, ভারুন ৪-০-১৭-৫, বিষ্ণই ৪-০-২১-১, আকসার ১-০-২-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৪ ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুটির পর ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: ট্রিস্টান স্টাবস