প্রথম তিন ম্যাচের একটিতেও লড়াই জমাতে পারল না বাংলাদেশ, দুই ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জিতে গেল ভারত।
Published : 02 May 2024, 08:13 PM
কখনও ধস নামে টপ অর্ডারে, কখনও ভেঙে পড়ে মিডল অর্ডার। ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যাটিং ব্যর্থতার নানা রূপ খুঁজে নেয় বাংলাদেশ। আরও একবার তারা ঘুরপাক খেল চেনা সেই চক্রেই। সঙ্গে এবার যোগ হলো বোলারদের বাজে দিন। দুটির যোগফল-আরও একটি বড় পরাজয়। টানা তিন জয়ে অনায়াসেই সিরিজ জিতে গেল ভারত।
সিলেটে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হারমানপ্রিত কৌরের দল জিতে নিল দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে ১১৭ রানে আটকে রেখে ৯ বল বাকি রেখে জিতে যায় ভারত।
এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচির বাইরে সিরিজটি খেলছে দুই দল। কিন্তু প্রস্তুতিটা হচ্ছে কেবল ভারতেরই। ব্যাটিং-বোলিংয়ে উন্নতির ছাপ রাখতে পারছে না বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের একটিতেও ১২০ পেরোয়নি স্কোর। বোলাররাও পারেননি দারুণ কিছু করতে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে একবার হতাশার গল্প রচনা করেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। মিডল-অর্ডারের ব্যর্থতায় ভালো শুরুর পরও লড়াইয়ের পুঁজি মেলেনি।
অথচ দিলারা আক্তারের সৌজন্যে এ দিন শুরুটা শুরুটা ভালোই করছিল বাংলাদেশ। সাত ম্যাচ পর পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট পড়েনি। এতে অবশ্য বড় অবদান ভারতের ফিল্ডারদেরও।
দিলারার দারুণ ব্যাটিংয়ের প্রথম ৪ ওভারে ৩০ রান করে বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে পুজা ভাস্ত্রাকারের বলে মিড অনে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন হারমানপ্রিত কৌর। ২৭ রানে বেঁচে যান বাংলাদেশের ওপেনার।
পরের বলে ভুল বোঝাবুঝিতে ক্রিজের মাঝেই দাঁড়িয়ে পড়েন দিলারা। এবার রান আউটের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে ভারত। শ্রেয়াঙ্কা পাতিলের করা পরের ওভারেও ভাগ্যের ছোঁয়া পান দিলারা। এবার হাত ছোঁয়ালেও বল জমাতে পারেননি সাজিভান সাজানা।
সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে ফের রান আউটের হাত থেকে বাঁচেন দিলারা। সেটি ছিল নো বল। ফ্রি-হিটে স্ট্রাইক পান মুর্শিদা। বড় শটের চেষ্টায় কভারে দিপ্তি শার্মার হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ফ্রি-হিট হওয়ায় তাতে কোনো বিপদ ঘটেনি। কিন্তু কোনো দিকে না তাকিয়েই মুর্শিদা রানের জন্য ছোটেন। দিলারা তাতে সাড়া না দিলে আর ক্রিজে ফিরতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার। রান আউটে ভাঙে ৪৬ রানের উদ্বোধনী জুটি।
দুবার করে ক্যাচ ও রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া দিলারা এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রেনুকা সিংয়ের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন ৫ চারে ২৭ বলে ৩৯ রান করা তরুণ ওপেনার।
রানের গতি ধরে রাখতে পারেননি পরের ব্যাটাররা। তৃতীয় উইকেটে ৩৬ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েন নিগার সুলতানা ও সোবহানা মোস্তারি। অনেকটা খামখেয়ালি করে নিজের উইকেট হারান ২০ বলে ১৫ রান করা সোবহানা। ক্রিজ পেরোলেও ব্যাট বাতাসেই থাকায় রান আউট হন তিনি।
শ্রেয়াঙ্কার পরের বলে এলবিডব্লিউ হন ফাহিমা খাতুন। সিরিজে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার প্রথম বলে ফিরলেন তিনি।
সব মিলিয়ে এই সংস্করণে চারবার পেলেন তিনি ‘গোল্ডেন ডাক’-এর তোতো স্বাদ,। যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি (১০ বার) শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ডও ফাহিমার।
উইকেটে টিকে থাকলেও পরিস্থিতির দাবি সেভাবে মেটাতে পারেননি নিগারও। ২৮ রান করতে ৩৬ বল খেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
২ উইকেটে ৮৫ রান থেকে বাংলাদেশ যেতে পারে স্রেফ ১১৭ পর্যন্ত।
সহজ রান তাড়ায় প্রথম ওভার থেকে নিয়মিত বাউন্ডারি মারতে থাকেন শেফালি ঘোষ ও স্মৃতি মান্ধানা। চতুর্থ ওভারে শরিফা খাতুনের বলে তিন চার মারেন শেফালি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে নাহিদা আক্তারের পরপর তিন বলে চার মারেন তরুণ ওপেনার।
৬ ওভারে ৫৯ রান করে ফেলে ভারত। ছন্দ ধরে রেখে এগোতে থাকেন দুই ওপেনার। নবম ওভারে রাবেয়া খানের বলে ম্যাচের একমাত্র ছক্কা মারেন স্মৃতি। এক ওভার পর অল্পের জন্য রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যান তিনি।
দ্বাদশ ওভারে ৩৬ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন শেফালি। এরপর আর টিকতে পারেননি ২০ বছর বয়সী ওপেনার। রিতু মনির চমৎকার ফিরতি ক্যাচে ভাঙে ৯১ রানের উদ্বোধনী জুটি।
এই জুটির পথে দারুণ এক মাইলফলকও স্পর্শ করেন শেফালি ও স্মৃতি। টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে দুই হাজার রান পেরিয়ে যান দুজন। তাদের আগে এই কীর্তি ছিল কেবল অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি ও বেথ মুনি জুটির।
দলের একশ পূর্ণ হওয়ার পর ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন স্মৃতি। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ বলে ৪৭ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটার।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর কিছুটা কমে আসে ভারতের রানের গতি। আগের ম্যাচের নায়ক দায়ালান হেমালাথাকে এলবিডব্লিউ করেন রাবেয়া। তাতে অবশ্য ভারতের তেমন সমস্যা হয়নি। রিচা ঘোষকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন হারমানপ্রিত।
সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ আগামী সোমবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৭/৮ (দিলারা ৩৯, মুর্শিদা ৯, নিগার ২৮, সোবহানা ১৫, ফাহিমা ০, রিতু ৮, শরিফুল ০, রাবেয়া ৭*, নাহিদা ২; রেনুকা ৪-০-২৫-১, পুজা ৪-০-২৬-১, দিপ্তি ৪-০-১৮-০, শ্রেয়াঙ্কা ৪-০-২৪-১, রাধা ৪-০-২২-২)
ভারত: ১৮.৩ ওভারে ১২১/৩ (স্মৃতি ৪৭, শেফালি ৫১, হেমালাথা ৯, হারমানপ্রিত ৬*, রিচা ৮*; মারুফা ২-০-১৭-০, তৃষ্ণা ২-০-১৭-০, শরিফা ২-০-১৯-০, নাহিদা ৩.৩-০-২৪-১, রাবেয়া ৪-০-২৪-১, ফাহিমা ৩-০-১০-০, রিতু ২-০-১০-১)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ভারত ৩-০তে এগিয়ে
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: শেফালি ভার্মা