আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডারকে, তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলবেন এবং ভবিষ্যতে কোচিং করানোর প্রস্তুতি নেবেন তিনি।
Published : 08 Sep 2024, 12:27 PM
ইংল্যান্ড দলে পালাবদলের হাওয়া অনুভব করছিলেন মইন আলি। দলের পক্ষ থেকে তা বুঝিয়েও দেওয়া হয়েছে তাকে। সময়ের ডাকে তাই শেষ পর্যন্ত সাড়া দিলেন ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পাওয়া ক্রিকেটার অবসর নিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।
এই মাসেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের ইংল্যান্ড দলে জায়গা হয়নি মইনের। ইঙ্গিতটা মিলেছিল তখনই। ডেইলি মেইলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়ে দিলেন, ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
“ইংল্যান্ডের হয়ে অনেক ক্রিকেট খেলেছি আমি। সময় এখন পরের প্রজন্মের, আমাকে তা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েও দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, সময়টা উপযুক্তই। আমার কাজ আমি করে ফেলেছি।”
“আমি খুবই গর্বিত। ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম খেলার সময় কেউ জানে না, কতগুলি ম্যাচ খেলতে পারবে। সেখান থেকে তিনশর মতো ম্যাচ খেলতে পারা দারুণ।”
২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে মইনের আন্তর্জাতিক অভিষেক। পরের মাসেই পা রাখেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। ওই বছরের জুনে টেস্ট অভিষেকও হয়ে যায় লর্ডসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এক দশকের ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ৬৮ টেস্ট, ১৩৮ ওয়ানডে ও ৯২ টি-টোয়েন্টি।
একসময় ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তবে গত কয়েক বছরে হয়ে উঠেছিলেন মূলত সীমিত ওভারের ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞ। ২০২১ সালে তিনি বিদায় জানান টেস্ট ক্রিকেটকে। পরে গত বছর অ্যাশেজের আগে বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচ চোটে পড়ায় দলের প্রয়োজনে টিম ম্যানেজমেন্টের অনুরোধে অবসর ভেঙে ফেরেন তিনি। অ্যাশেজের চারটি টেস্ট খেলে পারফর্মও করেন মোটামুটি। এরপর আবার টেস্ট থেকে অবসরে চলে যান।
এবার সব সংস্করণেই পথচলা থামিয়ে দিলেন। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালটিই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
নিজেকে অবশ্য এখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রাত্য মনে করেন না তিনি। তবে বাস্তবতা অনুধাবন করতেও পারছেন।
“এই সময়ে এসেও চেষ্টা করেছি বাস্তবতা বোঝার। আরেকটু অপেক্ষা করা ও ইংল্যান্ডের হয়ে আবার খেলার চেষ্টা করে যেতে পারি। তবে এটাও জানি, বাস্তবে তা সম্ভব নয়।”
“অবসর নিচ্ছি মানেই এই নয় যে আমি যথেষ্ট ভালো নই। এখনও ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারি বলেই মনে করি। কিন্তু এটাও অনুভব করতে পারি যে, সবকিছু কীভাবে এগোচ্ছে। দল একটা নতুন একটা চক্রের দিকে যাচ্ছে। ব্যাপারটি তাই নিজের প্রতি বাস্তবিক থাকার।”
বিদায় বেলায় দলীয় ও ব্যক্তিগত দিক থেকে ক্যারিয়ারের স্মরণীয় অর্জন ও প্রাপ্তিগুলোয় পেছন ফিরে তাকিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি এটিও বলেছেন, পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি তৃপ্তি তার প্রভাব রাখতে পারায় ও বিনোদন দেওয়ায়।
“অ্যাশেজ (২০১৫) ও দুটি বিশ্বকাপ জিততে পারা ছিল দারুণ। তবে ব্যক্তিগত জায়গা থেকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে টেস্ট জয় স্মরণীয়। ইংল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম টি-টোয়েন্টি ফিফটি (১৬ বলে) নিয়েও আমি গর্বিত।”
“লোকে অনেক সময়ই ভুলে যায়, ম্যাচে কার কেমন প্রভাব থাকে। অনেক সময় হয়তো ২০-৩০ রান করেছি, কিন্তু সেটা গুরুত্বপূর্ণ ২০-৩০ ছিল। আমাদের কাছে খেলাটাই এমন, প্রভাব রাখতে পারা। মাঠের ভেতরে-বাইরে দলের জন্য কী বয়ে এনেছি, আমি তা জানি। আমি ভালো করি বা খারাপ, যতক্ষণ বুঝেছি যে লোকে আমার খেলা উপভোগ করেছে, সেটিই আমার কাছে ছিল খুশির উপলক্ষ। আশা করি লোকে আমাকে মুক্ত ও বাঁধনহীন হিসেবে মনে রাখবে। কিছু ভালো শট খেলেছি, কিছু বাজে। তবে আশা করি, লোকে আমার খেলা উপভোগ করেছে।
ইংল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট খেলে মইন এখন ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলার অপেক্ষায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। ভবিষ্যতে কোচিংয়ে নাম লেখানোর ইচ্ছের কথাও তিনি জানিয়ে রেখেছেন।