১৫৫ রানের লিডের পর সাকিব-তাইজুলের জোড়া আক্রমণে ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কায় আয়ারল্যান্ড।
Published : 05 Apr 2023, 05:58 PM
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও পুরো একদিন ব্যাটিং করা গেল না। রান স্পর্শ করল না চারশর সীমানা। বড় লিডের পরও তাই আক্ষেপের উপকরণ ছিল যথেষ্টই। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সেই আক্ষেপ আড়াল করে দেওয়ার ভাবনা নিয়েই যেন নামলেন বাংলাদেশের বোলাররা। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের স্পিন যুগলবন্দিতে এলোমেলো আইরিশদের টপ অর্ডার।
মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেই জয়ের ছবি স্পষ্ট বাংলাদেশের সামনে। ইনিংস পরাজয় এড়াতে আয়ারল্যান্ডের প্রয়োজন এখনও ১২৮ রান, উইকেট আছে ৬টি।
প্রথম ইনিংসে আইরিশদের ২১৪ রানের জবাবে ম্যাচের বুধবার বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অল আউট হয় ৩৬৯ রানে। ১৫৫ রানে পিছিয়ে থাকা আইরিশরা দ্বিতীয় দিন শেষ করে ৪ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে।
বাংলাদেশের ইনিংসের অর্ধেকের বেশি রান আসে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে। ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে মুশফিক করেন ১২৬ রান। সাকিব থমকে যান শতরান থেকে ১৩ রান দূরে। ইনিংস আরও বড় করতে না পারার দায় দেওয়া যায় দুজনকেই।
সেই দায় দেওয়া যায় আসলে দারুণ শুরুর পর আউট হয়ে যাওয়া লিটন কুমার দাস কিংবা বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডারের অন্য সব ব্যাটসম্যানকেই। আইরিশ বোলিং আক্রমণ ছিল একদমই অনভিজ্ঞ। বোলিংয়ে ধার বা শৃঙ্খলা, কিছুই খুব একটা দেখা যায়নি। তার পরও বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে স্রেফ ৮০.১ ওভারে। ইনিংসে সেঞ্চুরি স্রেফ একটি, শতরানের জুটিও একটিই।
আলগা বল পেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা টানা শট খেলে গেছেন যেমন, একের পর এক ব্যাটসম্যান আউটও হয়ে গেছেন আলগা শটে।
আয়ারল্যান্ডের প্রথম স্পিনার হিসেবে টেস্টে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়ে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট নিয়েছেন ১১৮ রানে। টেস্টে আইরিশদের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এখন তারই।
বাংলাদেশ দিন শুরু করে প্রথম বলেই বাউন্ডারি। স্টাম্পের বেশ বাইরের বল ড্রাইভ করে বাউন্ডারিতে পাঠান মুমিনুল। তবে বিদায় নেন তিনি তৃতীয় ওভারেই। মার্ক অ্যাডায়ারের বলে শাফল করে খেলার চেষ্টায় লেগ স্টাম্প হারান তিনি (১৭)।
সাকিব ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বাউন্ডারি মেরে বুঝিয়ে দেন মনোভাব। পেস-স্পিন, সবকিছুতেই শট খেলতে থাকেন তিনি। কিছু শটে ছিল ঝুঁকি, কিছু শটে দাপট, কিছু শটের প্রাপ্যই ছিল বাউন্ডারি। ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে মনে হচ্ছিল, কোনো একটা 'মিশন' নিয়ে যেন নেমেছেন তিনি।
পঞ্চাশে পা রাখেন তিনি ৪৫ বলে। এর চেয়ে কম বলে ফিফটি আছে তার আর কেবল একটিই, ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯ বলে।
সাকিবের মতো বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে না হলেও বেশ দ্রুত পঞ্চাশে পা রাখেন মুশফিকও। তার ফিফটি ছুঁতে লাগে ৬৯ বল।
ফিফটির পরও দুজন একই গতিতে ছুটতে থাকেন আইরিশ বোলিংকে পাত্তা না দিয়ে। তাদেরকে বিপাকে ফেলার মতো কিছু করতেও পারেননি আয়ারল্যান্ডের কোনো বোলার। ধারাবাহিকভাবে এক জায়গা বলই করতে পারেননি তারা।
সাকিব নিজেকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন নিজেই। ম্যাকব্রাইনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে প্যাডল সুইপের মতো খেলার চেষ্টায় ধরা পড়েন তিনি উইকেটের পেছনে।
১৪ চারে তার ইনিংস থামে ৯৪ বলে ৮৭ রান করে। এই নিয়ে টেস্টে ১৩ বার ৮০ রান ছুঁয়েও সেঞ্চুরি করতে পারলেন না তিনি।
মুশফিকের সঙ্গে তার ১৫৯ রানের জুটি আসে ১৮৮ বলে।
মুশফিক অবশ্য মসৃণ ব্যাটিংয়েই এগিয়ে যান শতরানের পথে। ১৩৫ বলে পূর্ণ তার সেঞ্চুরি। ১০ সেঞ্চুরি নিয়ে এখন তিনি তামিম ইকবালের পাশে। বাংলাদেশের হয়ে তাদের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি শুধু মুমিনুল হকের (১১টি)।
সাকিবের বিদায়ের পর রানের গতি আরও বাড়ে মুশফিকের সঙ্গে লিটন কুমার দাসের জুটিতে। লিটন গিয়েই নান্দনিক সব শট খেলতে থাকেন।
৮৪ বলে ৮৭ রানের জুটির শেষটা হয় হতাশায়। আইরিশ কিপার লর্কান টাকারের ভুলে নিশ্চিত রান আউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার এক বল পরই সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিটন। ৮ চারে ৪৩ রান করেন তিনি ৪১ বলে।
মুশফিক ও মিরাজ জুটি এরপর দলকে এগিয়ে নেন আরেকটু। চা-বিরতির পর মড়ক লাগে ইনিংসে। ম্যাকব্রাইনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মুশফিক বিদায় নেন ১৬৬ বলে ১২৬ রানে। লং অন থেকে সামনে এগিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মারি কমিন্স।
এরপর লোয়ার অর্ডার ধসে পড়ে দ্রুতই। আরেকপাশে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মিরাজ পূরণ করেন ফিফটি।
৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ রান করে মিরাজের বিদায়েই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ৫ উইকেট হারায় তারা ৩৮ রানে।
প্রথম ইনিংসে ৬৫ ওভারের আগে বোলিংয়ে না আসায় যিনি ছিলেন আলোচিত, সেই সাকিব এবার বল হাতে নেন প্রথম ওভারেই। জেমস ম্যাককলামকে ফিরিয়ে দলকে সাফল্যও এনে দেন প্রথম ওভারেই।
এরপর দুই পাশ থেকে চলতে থাকে সাঁড়াশি আক্রমণ। মারি কমিন্স ও অ্যান্ডি বালবার্নিকে টিকতে দেননি তাইজুল ইসলাম। সাকিবের দ্বিতীয় শিকার কার্টিস ক্যাম্পার। সপ্তম ওভারে আয়ারল্যান্ডের রান তখন ৪ উইকেটে ১৩।
হ্যারি টেক্টর ও পিটার মুর এরপর বাকি সময়টা পার করে দেন কোনোরকমে। তবে আইরিশদের সামনে আশার আলো খুব একটা নেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩৪/২) ৮০.৩ ওভারে ৩৬৯ (মুমিনুল ১৭, মুশফিক ১২৬, সাকিব ৮৭, লিটন ৪৩, মিরাজ ৫৫, তাইজুল ৪, শরিফুল ৪, ইবাদত ০, খালেদ ৪*; অ্যাডায়ার ১৭-২-৬৪-২, হিউম ১১-২-৩৭-০, ম্যাকব্রাইন ২৮-২-১১৮-৬, ক্যাম্পার ৮-১-৫৪-০, হোয়াইট ১৩.৩-০-৭১-২, টেক্টর ৩-০-২১-০)।
আয়ারল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১৭ ওভারে ২৭/৪ (কমিন্স ১, ম্যাককলাম ০, বালবার্নি ৩, টেক্টর ৮*, ক্যাম্পার ১, মুর ১০*; সাকিব ৭-২-১১-২, তাইজুল ৭-৪-৭-২, মিরাজ ২-১-১-০, ইবাদত ১-০-৪-০)।