চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া পারভেজ হোসেন করলেন দারুণ সেঞ্চুরি, হারতে বসা ম্যাচে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে নায়ক আলাউদ্দিন বাবু।
Published : 06 Mar 2025, 07:05 PM
ভালো ব্যাটিং করেও প্রথম রাউন্ডে পঞ্চাশ ছুঁয়েই ড্রেসিং রুমে ফিরে যান পারভেজ হোসেন। পরের ম্যাচেই তিনি দূর করলেন আক্ষেপ। চমৎকার ব্যাটিংয়ে পেলেন তিন অঙ্কের স্বাদ। তার ৮ ছক্কার ইনিংসে প্রথম জয় পেল আবাহনী লিমিটেড।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বৃহস্পতিবারের আরেক ম্যাচে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে অসাধারণ ইনিংস খেলেন আলাউদ্দিন বাবু। তার ৩২ বলে ৭৮ রানের ইনিংসে হারের মুখ থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মাহিদুল ইসলাম ও তাওহিদ হৃদয়ের ফিফটিতে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে অনায়াস জয় পায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
পারভেজের সেঞ্চুরিতে আবাহনীর প্রথম জয়
বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবকে ১৬২ রানে হারায় আবাহনী। ৩২৪ রানের লক্ষ্যে ১৬১ রানের বেশি করতে পারেনি প্রথম রাউন্ডে মোহামেডানকে হারিয়ে চমক দেখানো গুলশান।
অগ্রণী ক্রিকেট ক্লাবের কাছে লিগে যাত্রা শুরু করেছিল লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম জয় পেল তারা।
আবাহনীকে বড় সংগ্রহের মূল কারিগর পারভেজ হোসেন। লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিতে ১২৪ বলে ১২৬ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। ৯ চারের সঙ্গে ৮টি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ না পাওয়া ব্যাটসম্যান। লিগের প্রথম রাউন্ডে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৫০ রানের ইনিংস।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৫১ রান যোগ করেন পারভেজ ও জিসান। ৩৪ রান করে ফেরেন জিসান। আরও একবার হতাশ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত (২১ বলে ৯ রান)।
তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে ১৭১ রানের জুটি গড়েন পারভেজ। ৭০ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। পরের পঞ্চাশ করতে লাগে আর মাত্র ৩০ বল। পাঁচ ওভার বাকি থাকতে আউট হন তিনি।
মিঠুনের ব্যাট থেকে আসে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৫ বলে ৭৩ রান। এছাড়া মোসাদ্দেক হোসেনের ২৮ বলে ৩৫ ও মাহফুজুর রহমানের ১৪ বলে ২৮ রানের ইনিংসে তিনশ ছাড়ায় আবাহনী।
রান তাড়ায় জাওয়াদ আবরারের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় গুলশান। পাওয়ার প্লেতে তারা করে ফেলে ৬৯ রান। কিন্তু ১৮ বলে ৩৬ রান করা জাওয়াদের বিদায়ের পর আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি।
এবারের লিগে প্রথম খেলতে নেমে ২১ বলে ১৪ রান করেন লিটন। খালিদ হাসানের ব্যাট থেকে আসে দলের সর্বোচ্চ ৫৪ বলে ৪৯ রান। এছাড়া শেষ দিকে নিহাদউজজামান ৩৫ বলে ৩৫ রান করলে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমে।
আবাহনীর পক্ষে বাঁহাতি স্পিনে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন রকিবুল হাসান। বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির শিকার ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ৩২৩/৬ (পারভেজ ১২৬, জিসান ৩৪, শান্ত ৯, মিঠুন ৭২, মোসাদ্দেক ৩৫*, মাহফুজুর ২৮, মৃত্যুঞ্জয় ২, রকিবুল ১*; মেহেদি ১০-০-৪৮-১, রায়হান ৪-০-২১-০, নিহাদ উজ জামান ৬-০-৪২-০, আসাদুজ্জামান ১০-০-৬৫-৩, ইফতেখার ১০-০-৪৯-০, আজিজুল ৭-০-৬৭-২, শাহাদত ৩-০-২২-০)
গুলশান ক্রিকেট ক্লাব: ২৯.৪ ওভারে ১৬১/৯ ( জাওয়াদ ৩৬, লিটন ১৪, খালিদ ৪৯, ইফতেখার ১৪, হাবিবুর ২, আজিজুল ২, শাহাদত ০, নিহাদ উজ জামান ৩৫, মেহেদি ২, আসাদুজ্জামান ০*, রায়হান আহত অনুপস্থিত; মেহেদি ৪-০-৩১-১, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-২৯-৩, রকিবুল ৫.৪-০-৪০-৪, মোসাদ্দেক ৬-০-১৭-১, জিসান ৫-০-২১-০, এনামুল ৩-০-৯-০, মাহফুজুর ২-০-৯-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ১৬২ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: পারভেজ হোসেন
আলাউদ্দিনের তাণ্ডবে বেসামাল প্রাইম ব্যাংক
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে তিন উইকেটে জেতে পারটেক্স। ৩০০ রানের লক্ষ্য ১২ বল হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
তবে মোটেও সহজ ছিল না পারটেক্সের জয়। সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে সালেহিনের বিদায়ের পরও ৮৬ রান বাকি ছিল তাদের।
পরের পথটুকু বলতে গেলে একাই পাড়ি দেন আলাউদ্দিন। মোহর শেখকে নিয়ে মাত্র ৪৬ বলে ৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ পেস অলরাউন্ডার। যেখানে তার একার অবদান ২৮ বলে ৭৭ রান।
সব মিলিয়ে ৫ চার ও ৭ ছক্কায় ৩২ বলে ৭৮ রান করেন আলাউদ্দিন। হাসান মাহমুদের ওপর মূল ঝড়টা বইয়ে দেন তিনি। ৪৪তম ওভারে ৩ ছক্কা ও ২ চারে নেন ২৮ রান। হাসানের পরের ওভারেও ২ চারের সঙ্গে মারেন ১টি ছক্কা।
আলাউদ্দিনের শেষের ঝড়ের আগে পারটেক্সকে কিছুটা এগিয়ে সাব্বির রহমান ও আহরার আমিন। পাঁচ নম্বরে নেমে ৪টি করে চার-ছক্কায় ৪৩ বলে ৫৩ রান করেন সাব্বির। আহরারের ব্যাট থেকে আসে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩৬ বলে ৪৪ রান।
প্রথম ৮ ওভারে মাত্র ৩৭ রান খরচ করা হাসান মাহমুদ শেষ ২ ওভারে দেন ৪৩ রান। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে তার খরচ ৮০ রান।
ম্যাচের প্রথম ভাগে প্রাইম ব্যাংককে তিনশ ছুঁইছুঁই পুঁজি এনে শাহাদাত হোসেন, শামীম হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম শেখরা। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৬২ বলে ৪৬ রান করেন নাঈম।
টানা দ্বিতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ৬১ বলে ৬৪ রান করেন শাহাদাত। ৩ চারের সঙ্গে তিনি ২টি ছক্কা। আগের রাউন্ডে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলা শামীম এদিন করেন ৬০ বলে ৬৯ রান। ৫ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় সাজান ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৯৯/৮ (নাঈম ৪৬, সাব্বির ২৮, জাকির ৩৯, শাহাদাত ৬৪, মামুন ৯, শামীম ৬৯, নাহিদুল ৫, খালেদ ১৭, নাজমুল ৩*, হাসান ১০*; মোহর ১০-০-৬০-২, আলাউদ্দিন ৯-০-৬১-২, নাঈম ৫-০-১৭-১, গাফফার ১০-১-৫৬-১, রুবেল ৫-০-৩৮-১, আহরার ৬-০-২৯-০, রাকিব ২-০-১২-০, সাব্বির ৩-০-২৪-০)
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৮ ওভারে ৩০৩/৭ (জয়রাজ ৪ আহত অবসর, জসিম ৯, রুবেল ৪১, আদিল ১৫, সাব্বির ৫৩, রাকিব ২২, আহরার ৪৪, সালেহিন ১৩, আলাউদ্দিন ৭৮*, মোহর ৯*; হাসান ১০-০-৮০-০, খালেদ ৯-০-৪৭-০, আরাফাত ৯-০-৫০-২, সাব্বির ৩-০-২০-০, নাজমুল ৯-০-৬১-২, নাহিদুল ৮-০-৪০-১)
ফল: পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আলাউদ্দিন বাবু
মাহিদুল-হৃদয়ের ব্যাটে মোহামেডানের জয়
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৭ উইকেটে জয় পায় মোহামেডান। মাহিদুল ইসলাম ও তাওহিদ হৃদয়ের ফিফটিতে ২২৩ রানের লক্ষ্য ৭৩ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে লিগের বর্তমান রানার্স-আপরা।
ম্যাচে বাড়তি আগ্রহ ছিল আগের রাতে ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়া মুশফিকুর রহিমকে ঘিরে। খেলা শুরুর আগে সতীর্থরা তাকে 'গার্ড অব অনার' দেন। পরে মাঠে নেমে দুইটি স্টাম্পিং ও একটি ক্যাচ নেন অভিজ্ঞ কিপার।
ওপরের ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ায় ব্যাটিংয়ে নামার প্রয়োজন পড়েনি মুশফিকের। খেলা শেষে দুই দলের ক্রিকেটাররা মিলে কেক কেটে মুশফিককে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান।
ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তেমন সুবিধা করতে পারেনি রূপগঞ্জ টাইগার্স। মাত্র ৬০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে পিছিয়ে পড়ে তারা। আল আমিন জুনিয়র ৪১, তানবীর হায়দার ৩৭ ও বাকিদের ছোট ছোট ইনিংসে কোনোমতে দুইশ পেরোয় দলটি।
মোহামেডানের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
রান তাড়ায় শুরুতেই ফেরেন তামিম ইকবাল। ১৭ বলে ১৪ রান করে তিনি আউট হন অনেক বাইরের বল তাড়া করে। রনি তালুকদার ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৫ চারে ৪৪ বলে খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস। চার নম্বরে নেমে হতাশ করেন আরিফুল (২৪ বলে ১৫)।
চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মাহিদুল ও হৃদয়। শুরু থেকে রয়েসয়ে ব্যাটিংয়ে ৯৭ বলে ৮১ রান করেন মাহিদুল। ৫ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন সবশেষ বিপিএলে ঝড় তোলা ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৪৭ বলে ৭৪ রান করেন হৃদয়। ১১ চারের সঙ্গে তার ব্যাট থেকে আসে ১টি ছক্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২২২/৯ (অমিত ০, মজিদ ১৯, মহব্বত ১২, মইনুল ১৭, আল আমিন ৪১, মাহমুদুল ২৩, তানবীর ৩৭, গালিব ২৪, শরিফ ২০, এনামুল ১০*, ফাহাদ ১*; আবু হায়দার ১০-০-৫৬-১, ইবাদত ১০-০-৩৭-২, তাইজুল ১০-২-২৯-২, মিরাজ ১০-১-৩৪-২, মুশফিক ১.৩-০-১৪-১, রনি ৮.৩-১-৪১-১)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৩৭.৫ ওভারে ২২৫/৩ (তামিম ১৪, রনি ৩৬, মাহিদুল ৮১*, আরিফুল ১৫, হৃদয় ৭৪*; ফাহাদ ৫.৫-১-৪৬-১, শরিফ ৬-০-৩৮-০, এনামুল ৭-০-৩৯-১, মইনুল ১০-০-৩৮-০, মাহমুদুল ৭-০-৩৯-১, তানবীর ১-০-৯-০, গালিব ১-০-১৪-০)
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহিদুল ইসলাম