পাকিস্তান সুপার লিগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আপাতত বাংলাদেশের লেগ স্পিনার, তার দল লাহোর কালান্দার্স তাকে বলছে ‘বাংলাদেশের ম্যাজিক ম্যান।’
Published : 16 Apr 2025, 09:21 AM
করাচি কিংসকে হারানোর পর রিশাদ হোসেনের একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে লাহোর কালান্দার্সের সামাজিক মাধ্যমের পাতাগুলোয়। আঙুল উঁচিয়ে নিজের ক্যাপ দেখাচ্ছেন রিশাদ হোসেন। সেখানে ক্যাপশনে লেখা, “স্পিনিং ম্যাজিক। পিএসএল ১০-এর সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার পর ফাজাল মেহমুদ ক্যাপ গ্রহণ করলেন রিশাদ হোসেন।”
আগের ম্যাচে রিশাদ যখন প্রথম উইকেটের স্বাদ পেলেন, তখন দলের সামাজিক মাধ্যমে রিশাদকে তুলে ধরা হয়েছিল ‘বাংলাদেশের ম্যাজিক ম্যান’ হিসেবে। লাহোর কালান্দার্সের হয়ে তিনি জাদু দেখিয়ে চলেছেন বটে। পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন বাংলাদেশের তরুণ এই লেগ স্পিনার। লাহোরের প্রথম ম্যাচে তিনি একাদশে জায়গা পাননি। পরের দুই ম্যাচে তার শিকার তিনটি করে উইকেট।
আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির পুরস্কার যেমন ‘পার্পল ক্যাপ’, সর্বোচ্চ রানের স্বীকৃত ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’, পাকিস্তানে তেমনি নামকরণগুলো করা হয়েছে কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের নামে। পেস বোলিং গ্রেট ফাজাল মেহমুদ, ব্যাটিং গ্রেট হানিফ মোহাম্মাদকে সম্মান করা হয়েছে এখানে। রিশাদের সতীর্থ ফাখার জামানের মাথায় এখন সবচেয়ে বেশি রানের পুরস্কার ‘হানিফ মোহাম্মাদ ক্যাপ।’
রিশাদের সমান ছয় উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানি লেগ স্পিনার আবরার আহমেদও। সমান দুই ম্যাচ খেলে সমান আট ওভার বোলিং করেছেন তিনিও। তবে রিশাদের গড় স্রেফ ৯.৫০, ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৭.১২। আবরারের গড় ১২.৫০, ওভারপ্রতি রান গুনেছেন ৯.৩৭।
পাঁচটি করে উইকেট নিয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, জেসন হোল্ডার, শাদাব খান ও হাসান আলি।
দুই ম্যাচেই রিশাদের দারুণ পারফরম্যান্সকে আরেকটু বেশি কৃতিত্ব দেওয়া যায় আরেকটি কারণে, দেশের বাইরের লিগে এই প্রথম খেলছেন তিনি! এমনিতে তার আবির্ভাব বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছে আশীর্বাদ হয়ে। টি-টোয়েন্টি দল এখন তাকে ছাড়া ভাবাই যায় না। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিকার করেছেন ১৪ উইকেট, এক টুর্নামেন্টে যা বাংলাদেশের রেকর্ড। ব্যাটে-বলে দেখাচ্ছেন নিয়মিতই। ওয়ানডে দলেও থিতু হওয়ার অভিযানে আছেন।
দেশের বাইরের লিগে আগে দল পেলেও নানা কারণে খেলার সুযোগ পাননি। এবারের পিএসএল তার জন্য বড় সুযোগ অনেক কিছু শেখার, নিজেকের পরখ করার ও পোক্ত করার। ২২ বছর বয়সী স্পিনার প্রথম দুই ম্যাচেই জানিয়ে দিলেন, শুধু শিখতে নয়, রাজত্ব করতে এসেছেন তিনি।
ম্যাচ দুটি খেলেছেন তিনি ভিন্ন দুটি মাঠে ভিন্ন দুই দলের সঙ্গে। কিন্তু পারফরম্যান্স ছিল প্রায় একই। প্রথম ম্যাচে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৩১ রানে ৩ উইকেট, পরের ম্যাচে মঙ্গলবার করাচি কিংসের বিপক্ষে ২৬ রানে ৩ উইকেট।
দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য তার বোলিং ফিগার ভালো হতে পারত আরও। প্রথম ওভারেই তার শিকার ছিল দুটি। পরের ওভার শেষ তার বোলিং ফিগার ছিল ২-০-৪-৩। পরের দুই ওভারে হাসান আলির ব্যাটে দুটি ছক্কা ও দুটি চার হজম করেন। তার পরও দলের সফলতম বোলার তিনিই। ম্যাচ শেষে ‘সুপারপাওয়ার অব দা ডে’ পুরস্কার পেয়েছেন, যেটির মূল্যমান ৩ লাখ পাকিস্তানি রুপি।
দুটি ম্যাচেই অবশ্য কিছু ব্যাপার রিশাদের ভালো পারফরম্যান্সে সহায়ক হয়ে এসেছে। দুই ম্যাচেই আগে ব্যাট করে দুইশ ছাড়ানো স্কোর গড়েছে দল। পরে বোলিং ইনিংসে পেসাররা দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন দলকে। রিশাদ যখন বল হাতে এসেছেন, প্রতিপক্ষ তখন এমনিতেই প্রবল চাপে।
তবে নিজের কাজটুকু ঠিকই করেছেন রিশাদ। বোলিং স্কিলের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপনও মেলে ধরেছেন। বিশেষ করে, ধারাবাহিকভাবে টার্ন করানোর ক্ষমতা তার আরও বেড়েছে বলেই মনে হয়েছে। বাংলাদেশের স্পিনারদের জন্য যা বিরল।
মাত্রই দুটি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ আসবে। প্রত্যাশার চাপও বাড়বে। তার ব্যাটে ঝড় দেখার অপেক্ষাও থাকবে। তবে শুরুটা যেভাবে করেছেন, এবারের পিএসএলে দারুণ কিছুর আশা তার কাছ থেকে করাই যায়।