মাহিদুলের লড়াই ছাপিয়ে গাজী গ্রুপের হ্যাটট্রিক জয়

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় রাউন্ডে রোমাঞ্চকর লড়াই উপহার দিয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব-গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ও লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জ-রুপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2024, 02:28 PM
Updated : 18 March 2024, 02:28 PM

শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণে প্রথম বলে ২ রান নিলেন মাহিদুল ইসলাম। এক বল পর মারলেন ছক্কা। পরের বল আবারও ডট। দুই বলে ৫ রানের প্রয়োজনে ডাবল নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়লেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কিপার-ব্যাটসম্যান। শেষটায় প্রতিপক্ষকে বেঁধে রেখে বাকি কাজ সারলেন বোলার আনিসুল। দারুণ এক জয় তুলে নিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।

ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে সোমবার রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৩ রানে জয় পেয়েছে গাজী গ্রুপ। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ১৯২ রানের লক্ষ্যে ১৮৮ রানে থেমেছে মোহামেডান।

তিন ম্যাচ খেলে সবগুলোই জিতল গাজী গ্রুপ। মোহামেডান পেল প্রথম পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ।

অল্প পুঁজিতে মোহামেডানকে আটকানোর বড় কারিগর রুয়েল আহমেদ। বাঁহাতি এই পেসার ৩২ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ১২ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে এই প্রথম কোনো ম্যাচে দুইয়ের বেশি উইকেট পেলেন রুয়েল। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

একপ্রান্ত আগলে রেখে প্রাণপণ চেষ্টা করেন মাহিদুল। চার নম্বরে নেমে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে তিনি খেলেন ৯৪ রানের ইনিংস। কিন্তু সতীর্থদের থেকে তেমন সমর্থন না পাওয়ায় বৃথা যায় তার চেষ্টা।

ম্যাচের শেষ ওভারে জয় নিশ্চিত করা আনিসুল ওপেনিংয়ে নেমে খেলেন দলের সর্বোচ্চ ৭১ রানের ইনিংস। অনিয়মিত বোলার হয়েও পরে পুরো ১০ ওভার বোলিং করেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে ৪০ রান ওঠার আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় গাজী গ্রুপ। চতুর্থ উইকেটে আল আমিন জুনিয়রের সঙ্গে ৯২ রানের জুটি গড়েন আনিসুল।

আল আমিন ৬৮ বলে ৩২ রান করে ফেরার পর আনিসুলও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। আসিফ হাসানের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন ২৬ বছর বয়সী ওপেনার। ৩৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে নবম ফিফটির ইনিংসে ৯১ বলে ৭ চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা মারেন তিনি।

এরপর মইন খান ২৭ ও মাহফুজুর রহমান ১৩ রান করলে কোনোমতে দুইশর কাছাকাছি যায় গাজী গ্রুপ।

নাঈম হাসান নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট।

রান তাড়ায় মোহামেডানও চল্লিশের আগে হারায় ৩ উইকেট। হতাশ করেন ইমরুল কায়েস, রনি তালুকদাররা। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা আরিফুল ইসলাম রান আউট হলে বিপদ আরও বাড়ে তাদের।

পঞ্চম উইকেটে মাহিদুল ও আরিফুল হক গড়েন ৬২ রানের জুটি। ৫৩ বলে ২৯ রান করা আরিফুলকে বোল্ড করে গাজী গ্রুপকে ম্যাচে ফেরান শেখ পারভেজ রহমান।

এরপর শুরু মাহিদুলের একার লড়াই। ৯২ বলে ক্যারিয়ারের ২০তম ফিফটি করেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ধীরে ধীরে দলকে নিয়ে যান জয়ের কাছাকাছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেননি। ৩ চার ও ২ ছক্কায় তিনি সাজান ১২৩ বলের ইনিংসটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪৭.৪ ওভারে ১৯১ (হাবিবুর ০, আনিসুল ৭১, মেহেদি ২, প্রিতম ১২, আল আমিন ৩২, মইন ২৭, ফয়সাল ৮, পারভেজ ৭, মাহফুজুর ১৩, রুয়েল ৪, জয়নুল ১*; আবু হায়দার ৮-১-৩১-২, মুশফিক ৭-১-২৮-২, নাসুম ৯-১-৩৩-০, আরিফুল ৭-০-৩৪-১, নাঈম ৬.৪-১-২৮-৩, আসিফ ১০-১-৩৩-২)

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ১৮৮/৯ (ইমরুল ১৩, রনি ২২, রুবেল ০, মাহিদুল ৯৪, আরিফুল ইসলাম ১২, আরিফুল হক ২৯, আবু হায়দার ৪, নাসুম ৩, নাঈম ৭, মুশফিক ২*, আসিফ ০*; জয়নুল ১০-২-৪৪-১, রুয়েল ১০-১-৩২-৫, পারভেজ ১০-০-৩৫-১, মাহফুজুর ১০-১-২৬-০, আনিসুল ১০-০-৫১-০)

ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৩ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রুয়েল মিয়া

আমিনুলের ব্যাটে ১ উইকেটে জিতল রূপগঞ্জ

ছয় বলে জিততে প্রয়োজন ৬ রান, উইকেট বাকি ১টি। একটু ভুলেই সব শেষ হয়ে যেতে পারে। কাজি অনিকের প্রথম তিন বলে কোনো রান নিতে পারলেন না আমিনুল ইসলাম। তারপরও, স্নায়ুচাপকে পেয়ে বসতে দেননি তিনি। পরের ডেলিভারি বোলারের মাথার ওপর দিয়ে হাঁকিয়েই, ব্যাট-হেলমেট ফেলে মেতে উঠলেন শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের উল্লাসে।

বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে সোমবার রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ১ উইকেটে হারিয়েছে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। ২১০ রানের লক্ষ্য দুই বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছে মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন দল।

শেষ দিকে লড়াই করে দলকে জেতানোর কারিগর আমিনুল। ৭১ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনিই জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

রান তাড়ায় রূপগঞ্জকে দারুণ শুরু এনে দেন তৌফিক। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ঝড় তোলা কিপার-ব্যাটসম্যান এদিন খেলেন ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৭১ বলে ৬২ রানের ইনিংস।

চলতি লিগে তিন ম্যাচে তার দ্বিতীয় ফিফটি এটি। সব মিলিয়ে ২২ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে পঞ্চম।

তৌফিক ছাড়া ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা কেউ রান পাননি। তাতে, ১৩৩ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়েছিল রূপগঞ্জ।

অষ্টম উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন আমিনুল ও শহিদুল ইসলাম। জয় থেকে ২৭ রান দূরে থাকতে ফিরে যান ৩৪ রান করা শহিদুল। শঙ্কা জাগে আবারও। ৪৯তম ওভারে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে যান আব্দুল হালিমও।

তবে আমিনুল ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ম্যাচ জেতানো ইনিংসে একটি করে চার-ছক্কা হাঁকান তিনি।

এর আগে রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন মাহফিজুল ইসলাম ও ফরহাদ হোসেন। তবে দুজনের কেউই দ্রুত রান তুলতে পারেননি।

৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫১ রান করতে ১০৭ বল খেলেন মাহফিজুল। অধিনায়ক ফরহাদ ৭ চারে ১১৮ বলে করেন ৭৪ রান।

আরাফাত সানি জুনিয়র অপরাজিত ২৩, সোহাগ গাজী ১৭ রানের ইনিংস খেললে দুইশ পেরোয় রূপগঞ্জ টাইগার্স। যা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।

আব্দুল হালিম নেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২০৯/৮ (মামুন ০, মাহফিজুল ৫১, আইচ ৫, শামসুর ০, ফরহাদ ৭৪, সালমান ১৩, আরাফাত ২৩*, সোহাগ ১৭, অনিক ৭, সালমান ১*; আল আমিন ১০-১-৩৫-২, হালিম ১০-১-৪০-৪, আলাউদ্দিন ৮-০-৬০-১, শহিদুল ১০-১-২৩-১, শুভাগত ৮-১-২৮-০, মুমিনুল ৩-০-১৪-০, আমিনুল ১-০-৪-০)

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৪৯.৪ ওভারে ২১০/৯ (তৌফিক ৬২, সাদমান ১০, মুমিনুল ২, রিজওয়ান ১২, আমিনুল ৫১*, শুভাগত ৮, শামিম ১, আলাউদ্দিন ৮, শহিদুল ৩৪, হালিম ৮, আল আমিন ০*; সালমান ৭-০-৩০-১, নাবিল ১০-০-৪১-১, সোহাগ ১০-১-২৫-২, আরাফাত ৮-১-৪৭-২, অনিক ৯.৪-০-৪১-১, আইচ ৩-০-১০-০, মামুন ২-০-১০-১)

ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আমিনুল ইসলাম

পারটেক্সের প্রথম জয়

প্রথম দুই ম্যাচে হেরেছিল দুই দলই। এবার মুখোমুখি লড়াইয়ে গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমিকে হারিয়ে চলতি লিগের প্রথম জয়ের দেখা পেল পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব।

বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে ৫২ রানে জিতেছে পারটেক্স। ১৯৮ রানের লক্ষ্যে ২৭ বল বাকি থাকতে ১৪৫ রানে গুটিয়ে গেছে গাজী টায়ার্স।

হিসেবি বোলিংয়ে পারটেক্সের জয়ের নায়ক রাকিবুল আতিক। বাঁহাতি স্পিনে ১০ ওভারে দুই মেইডেনসহ স্রেফ ১৫ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। ২৪ বছর বয়সী এই স্পিনারের হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় গাজী টায়ার্স। প্রথম পাঁচ উইকেটে হয়নি বলার মতো কোনো জুটি।

ষষ্ঠ উইকেটে ৪০ রান যোগ করেন আশরাফুল আলম ও শামিম মিয়া। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন আশরাফুল। শামিমের ব্যাট থেকে আসে ৩১ রান। ওপেনার আশিকুর রহমান খেলেন ৩০ রানের ইনিংস।

আর কেউ তেমন কিছু করতে না পারায় ছোট লক্ষ্যও তাড়া করতে পারেনি গাজী টায়ার্স।

রাকিবুল ছাড়াও ৩ উইকেট নেন মুক্তার আলি।

পারটেক্সের হয়ে চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন তিন ব্যাটসম্যান। কিন্তু পঞ্চাশ করতে পারেননি কেউই। ৬৯ বলে ম্যাচের সর্বোচ্চ ৪৯ রানে অপরাজিত থাকেন তানবির হায়দার।

এছাড়া আজমির আহমেদ ৫২ বলে ৪৪ ও আহরার আমিন খেলেন ৯৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস।

তানবিরের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৫৩ রান যোগ করার পথে কিপার-ব্যাটসম্যান জাহিদুজ্জামান করেন ২৭ রান।

গাজী টায়ার্সের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার মারুফ মৃধা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ১৯৭/৯ (মিজানুর ০, আজমির ৪৪, তুফায়েল ০, আহরার ৪১, মাইশুকুর ৪, তানবির ৪৯*, জাহিদুজ্জামান ২৭, মুক্তার ০, রাজিবুল ০, মোহর ১০, রাকিবুল ০*; মারুফ ৮-০-৪৩-৩, তৌফিক ৮-০-৩৮-২, ইফতেখার ১০-০-২৮-১, শামিম ১০-১-৪৩-০, আরিফুল ১০-১-২০-২, হাফিজুর ১-০-৫-০, সাইদ ৩-০-১৪-০)

গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি: ৪৫.৩ ওভারে ১৪৫ (আশিকুর ৩০, ইফতেখার ১, হাফিজুর ২, আশরাফুল ৩৭, তাহজিবুল ০, সাইফ ৭, শামিম ৩১, ইফতেখার ৬, আরিদুল ২, তৌফিক ২, মারুফ ২*; তুফায়েল ৮-০-২৭-১, মোহর ৭.৩-০-২৭-২, মুক্তার ১০-০-৩২-৩, রাজিবুল ১০-২-১৫-৩, আহরার ১-০-৩-০)

ফল: পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব ৫২ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রাকিবুল আতিক