সুযোগটি এসেছিল নিয়মিত কয়েকজন না থাকায়। নুরুল হাসান সোহান তা কাজে লাগালেন পুরোপুরি। খুব বড় কিছু যদিও তিনি করেননি। তবে যেটুকু করেছেন, তাতে জায়গা পেয়ে গেছেন অধিনায়কের হৃদয়ে। বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে সোহান মোটামুটি থিতু হয়ে গেছেন বলেই মনে করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
Published : 17 Jul 2022, 11:32 AM
হজে যাওয়ার কারণে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাননি অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। ছুটি পেয়ে ওয়ানডে সিরিজে খেলেননি সাকিব আল হাসান। সবশেষ সিরিজে মিডল অর্ডারে ভালো করা ইয়াসির আলি চৌধুরি খেলতে পারেননি চোটের কারণে।
তাদের অনুপস্থিতি সুযোগ হয়ে আসে অন্যদের জন্য। গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অসাধারণ পারফর্ম করা সোহান যেমন সুযোগ পান তিন ম্যাচেই খেলার।
সিরিজ শেষে গায়ানায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অধিনায়ক তামিম ইকবাল নিজে থেকেই আলাদা করে বললেন সোহানের কথা।
“ব্যাটিং লাইন আপের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের তিনজনকেই পাইনি আমরা। অন্যদের জন্য এটি ছিল দারুণ সুযোগ। আমার মনে হয় ওরা দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরেছে। বিশেষ করে সোহান। যখনই সুযোগ পেয়েছে, সে ঠাণ্ডা মাথায় ও ধীরস্থির হয়ে খেলেছে। আজকেও যেমনটি দেখিয়েছে। খুব ভালো ব্যাট করেছে।”
রান তাড়ায় যে জায়গায় ব্যাট করেছেন সোহান, খুব বড় কোনো স্কোর গড়ার সুযোগ তার ছিল না। তবে দলের চাওয়া ও পরিস্থিতির দাবি মিটিয়েছেন তিনি পুরোপুরি। দুটি ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন, দুটিতেই অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে ফিরেছেন।
প্রথম ম্যাচে তিনি যখন উইকেটে যান, দলের তখন হারের শঙ্কা কম থাকলেও বিপদ হতেও পারত। কিন্তু অপরাজিত ২০ রান করে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটিতে দলকে জেতান।
শেষ ম্যাচে শনিবার যখন উইকেটে যান সোহান, ১১৬ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছে তখন পরাজয়। মাহমুদউল্লাহকেও এ দিন শেষ পর্যন্ত সঙ্গী পাননি সোহান। তবে ৩৮ বলে অপরাজিত ৩২ রান করে দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন তিনি।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫ ইনিংস খেলে এখন সোহানের গড় ৮২.৫০, স্ট্রাইক রেট ৯৪.৮২!
সঙ্গে তার দুর্দান্ত কিপিং তো আছেই। শনিবারের ম্যাচেই অসাধারণ দুটি স্টাম্পিং করেন তিনি।
সিরিজ থেকে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে অবশ্য সোহানের সঙ্গে নাসুম আহমেদের কথাও বললেন অধিনায়ক।
“নাসুম যেভাবে বল করেছে এবং সোহান যেভাবে ব্যাট করেছে… এই দুজন (প্রাপ্তি)। মিরাজ তো আমাদের হয়ে সবসময়ই ভালো করছে। তবে ওরা দুজন ছিল অন্য পর্যায়ের।”
এই সিরিজ দিয়েই ওয়ানডে অভিষেক নাসুমের। তিন ম্যাচে এই বাঁহাতি স্পিনারের শিকার ৫ উইকেট। অবিশ্বাস্যভাবে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ২.৬৭!
পারফরমারদের নিয়ে যখন কথা, অধিনায়কের কণ্ঠে আলাদা করে ফুটে উঠল তাইজুলের ইসলামের নামও। সফরের সেই শুরু থেকে দলের অংশ হয়েও প্রথম ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন তিনি সফরের শেষ দিনে। সুযোগটি দুহাতে লুফে নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনার ম্যাচ সেরা হয়ে যান ২৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করে।
অধিনায়ক তামিম তুলে ধরলেন তাইজুলের নিবেদনের কথা।
“তাইজুলের নামও বলতে হবে। সফরজুড়ে সে দলের সঙ্গে ছিল, ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। প্রতিটি অনুশীলন সেশনে সে ছিল। অবশেষে সে যখন আজকে খেলার সুযোগ পেল, নিজেকে মেলে ধরল। প্রাপ্তি তাই বেশ কিছু আছে।”
প্রাপ্তির পাশে কিছু অপ্রাপ্তিও আছে। ওয়ানডে সিরিজে একদমই ভালো ব্যাট করতে পারেননি আফিফ হাসেন। মোসাদ্দেক হোসেন বোলিং ভালো করলেও ব্যাটিংয়ে কাজ শেষ করে আসতে পারেননি শেষ ম্যাচে।
তামিম এখানে আবারও তুলে ধরলেন সোহানের উদাহরণ।
“আমি অবশ্যই খুশি হতাম যদি মোসাদ্দেক বা আফিফ খেলাটা শেষ করে আসত। আমি কিন্তু আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, এই সিরিজে সাকিব-মুশফিক নেই। ওরা ফিরলে কিন্তু এখান থেকে দুই জনকে বেরিয়ে যেতে হবে।”
“আপনি যদি সোহানের উদাহরণ দেখেন, সে প্রায় জায়গা পাকা করে ফেলছে। সামনে যদি ওকে খেলা মিস করতে হয় অন্যদের কারণে, অপেক্ষমান হিসেবে সবার আগে সে-ই থাকবে। এরকম সুযোগ এলে তাই যতটা সম্ভব কাজে লাগানো উচিত।”
সবার জন্য সবসময় সমান সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়, এটিও জানিয়ে দিয়েছেন তামিম।
“আমি নিশ্চিত, ওরা (আফিফ-মোসাদ্দেক) সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তবে সবসসময় একটা কথা বলি, কিছু ক্রিকেটার হয়তো ৫-৬টি সুযোগ পাবে, কিছু পাবে ২টি। সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া যাবে না হয়তো। যে ২টি সুযোগ পাচ্ছেন, তার উচিত সেটা কাজে লাগানো।”