শাইনপুকুরের ইনিংসের ৪৪ ওভার পর্যন্ত সবকিছু মোহামেডানের অনুকূলেই ছিল। এরপরই খুনে ব্যাটিংয়ে দলকে আড়াইশ রানের সংগ্রহ এনে দেন আলাউদ্দিন বাবু ও সাজ্জাদুল হক। ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেই লক্ষ্যের কাছাকাছিও যেতে পারেনি মোহামেডান।
Published : 16 Mar 2022, 04:41 PM
বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডে বুধবার ৪১ রানে জিতেছে তারুণ্যনির্ভর দল শাইনপুকুর। ২৫০ রান তাড়ায় ২০৯ রানে গুটিয়ে গেছে মোহামেডানের ইনিংস।
সোহরাওয়ার্দী শুভ ও ইয়াসিন আরাফাত শেষ দিকে ব্যবধান পঞ্চাশের নিচে নামিয়ে আনতে পারলেও কার্যত ম্যাচের ফল নিয়ে অনিশ্চয়তা শেষ হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই।
বিস্ফোরক ইনিংসের সঙ্গে দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন আলাউদ্দিন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে চমৎকার ফিফটি উপহার দেন সাজ্জাদুল। ব্যাট হাতে দায়িত্বশীল ইনিংসের পর দুটি উইকেট নেন সিকান্দার রাজা। মূলত এই তিন জনের সঙ্গেই পেরে ওঠেনি ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শাইনপুকুরের শুরুটা ছিল সাবধানী। আনিসুল ইসলাম ও রাকিন আহমেদ মনোযোগী ছিলেন উইকেট ধরে রাখায়। রানের চিন্তা খুব একটা করেননি দুই ওপেনার। মনে হচ্ছিল কঠিন সময় পার করে ফেলেছেন তারা, ঠিক সেই সময়ে আঘাত হানেন সৌম্য সরকার। আনিসুলকে ফিরিয়ে ভাঙেন ৩০ রানের উদ্বোধনী জুটি।
তাসামুল হক ও মাহিদুল ইসলামকেও কট বিহাইন্ড করে সৌম্য ফেরালে শক্ত অবস্থান পায় মোহামেডান। কিন্তু মোমেন্টাম ধরে রাখতে পারেনি দলটি। রাকিন ও সিকান্দার রাজার সাবধানী ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধ গড়ে শাইনপুকুর।
রাকিনকে বোল্ড করে ৪৭ রানের জুটি ভাঙেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। দুটি করে ছক্কা ও চারে ৪২ রান করা রাজাকে থামান মোহাম্মদ হাফিজ।
৩৮তম ওভারে ১২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা শাইনপুকুরের ইনিংস গতি পায় সাজ্জাদুল ও আলাউদ্দিনের ওই শেষের ঝড়ে। ছয়ে নেমে ৫৯ বলে দুই ছক্কা ও ছয়টি চারে ৭০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন সাজ্জাদুল। তাকেও যেন ছাড়িয়ে যান আলাউদ্দিন। ১৯ বলে তিন ছক্কা ও চারটি চরে এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে।
শেষ ৬ ওভারে সাজ্জাদুল ও আলাউদ্দিনের ব্যাটে ৭৭ রান যোগ করে শাইনপুকুর। শুরুতে দারুণ বোলিং করা সৌম্য ৪৯তম ওভারে দেন ২০ রান।
দ্বিতীয়ভাগে ব্যাটিং তুলনামূলক সহজ ছিল। কিন্তু দুটি রান আউট ও বাজে কিছু আউটে বিপদে পড়ে যায় মোহামেডন। সেখান থেকে দলকে আর উদ্ধার করতে পারেননি কেউ।
নাঈম হাসানের স্টাম্প সোজা বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন রনি তালুকদার। ১৮ বলে অভিজ্ঞ এই ওপেনার করেন কেবল ৩।
এবারের যুব বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি হাঁকানো আরিফুল ইসলাম শুরুটা ভালোই করেছিলেন। কিন্তু দুটি চার মেরে তিনিও কাটা পড়েন রান আউটে।
চাপে পড়া দলকে টানতে পারেননি অধিনায়ক শুভাগত হোম চৌধুরি। জিম্বাবুয়ের অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার রাজাকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় দেন সহজ ক্যাচ। বেশি দূর যেতে পারেননি কিপার-ব্যাটসম্যান জাহিদুজ্জামান খানও।
অনেকটা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা পারভেজ হোসেন স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে পঞ্চাশ ছুঁয়েই বিদায় নেন। ৮৮ বলে খেলা তার ৫৪ রানের ইনিংসে তিন চারের সঙ্গে ছিল একটি ছক্কা।
১২৬ রানে ৭ উইকেট হারানো মোহামেডান দুইশ ছাড়ায় সোহরাওয়ার্দী ও ইয়াসিনের দৃঢ়তার। নবম উইকেটে তারা গড়েন ৫১ রানের জুটি। ৫ চারে ৫২ বলে ৫১ রান করেন বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার সোহরাওয়ার্দী। দুই ছক্কা ও তিন চারে ৪২ বলে ৩৮ রান করেন ইয়াসিন। তার আউট দিয়েই শেষ হয় মোহামেডানের ইনিংস।
শিরোপা খরা কাটানোর লক্ষ্যে মোহামেডান এবার তারকাসমৃদ্ধ দল গড়লেও তাদের অধিকাংশ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জাতীয় দলে আছে। তারপরও দলের শক্তি একেবারে খারাপ নয়, কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারল না তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫০/৭ (আনিসুল ১৪, রাকিন ৩৯, তাসামসুল ৬, মাহিদুল ১, রাজা ৪২, সাজ্জাদুল ৭০, নাঈম ১০, আলাউদ্দিন ৪৬*, রাহাতুল ১*; ইয়াসিন ৮-০-৩২-০, সালাউদ্দিন ৯-১-৪৯-২, নাজমুল অপু ১০-১-৩৬-০, সৌম্য ৯-১৫২-৩, সোহরাওয়ার্দী ৬-০-৪৪-১, হাফিজ ৮-০-৩৩-১)
মোহামেডান: ৪৮.৩ ওভারে ২০৯ (রনি ৩, পারভেজ ৫৪, সৌম্য ৭, হাফিজ ৪, আরিফুল ৯, শুভাগত ১০, জাহিদ ১৮, সোহারাওয়ার্দী ৫১, নাজমুল অপু ৩, ইয়াসিন ৩৮, সালাউদ্দিন ৩*; রিপন ৯-১-৩৪-০, নাঈম ১০-১-২৬-০, আলাউদ্দিন ৮-০-৫৫-২, রাজা ১০-০-৩৬-২, মুরাদ ৬-০-৩০-০, তাসামুল ৪-০-১৩-১, আনিসুল ১.৩-০-১৪-২)
ফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ৪১ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আলাউদ্দিন বাবু