ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের শেষ দুই দিন বাগড়া দিতে পারে বৃষ্টি, সেই শঙ্কা থেকেই হয়তো আগেভাগে ম্যাচ শেষ করতে চায় নিউ জিল্যান্ড। তাই প্রথম সেশনে চার উইকেট হারালেও লাঞ্চের পর বোলাদের ওপর চড়াও হলেন টম ল্যাথাম ও টম ব্লান্ডেল। দ্বিতীয় সেশনে কেবল এক ঘণ্টা ব্যাটিং করে ইনিংস ছেড়ে দিল নিউ জিল্যান্ড।
Published : 10 Jan 2022, 07:33 AM
হ্যাগলি ওভালে সোমবার ৬ উইকেটে ৫২১ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তাদের আবার ব্যাটিংয়ে পাঠাতে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করতে হবে অন্তত ৩২২ রান।
দিনের প্রথম সেশনে ৭৪ রান যোগ করা নিউ জিল্যান্ড পরের এক ঘণ্টায় ১৬.১ ওভারে যোগ করে ৯৮ রান। এতে বড় অবদান ব্লান্ডেলের। আগের টেস্টে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ এই কিপার-ব্যাটসম্যান ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে করেন ফিফটি।
নিউ জিল্যান্ডের রান পাহাড় গড়ায় সবচেয়ে বড় অবদান অধিনায়ক ল্যাথামের। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়বারের মতো আড়াইশ ছুঁয়ে তিনি ফিরেন ২৫২ রান করে। বাঁহাতি এই ওপেনারের ৩৭৩ বলের ইনিংস গড়া দুই ছক্কা ও ৩৪ চারে।
প্রথম সেশনে আগের দিনের চেয়ে এদিন লাইন ও লেংথে বেশ ধারাবাহিক ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। তবে ল্যাথাম ও ব্লান্ডেল পাল্টা আক্রমণ শুরুর পর রানের গতিতে বাধ দিতে পারেননি কেউই।
এর আগে হ্যাগলি ওভালে দিনের প্রথম বলেই বাউন্ডারিতে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পৌঁছে যান ডেভন কনওয়ে। প্যাডে ইবাদত হোসেনের হাফ-ভলি পেয়ে অনায়াসে সিরিজে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি। সেই ওভারে মারেন আরেকটি বাউন্ডারি।
৯৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা কনওয়ে অবশ্য এরপর যেতে পারেননি বেশিদূর। বিদায় নেন মেহেদী হাসান মিরাজের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে।
দর্শক ও পরিবারের সদস্যদের তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে মাঠে আসেন রস টেইলর। বাংলাদেশ দল ও আম্পায়ারদের গার্ড অব অনার পেরিয়ে ক্রিজে যান নিজের বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
১৮৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা ল্যাথাম এগোতে থাকেন বাউন্ডারিতে। তাসকিন আহমেদকে চমৎকার এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে বাঁহাতি এই ওপেনার ৩০৫ বলে পৌঁছান দুইশ রানে।
অধিনায়ক হিসেবে এর আগে ছিল না কোনো ফিফটি, এবার পেয়ে গেলেন ডাবল সেঞ্চুরি।
ক্রিজে গিয়েই রানের জন্য ছটফট করছিলেন টেইলর। রান চাইছিলেন প্রতি বলেই। আউট হন সেই চেষ্টাতেই। ইবাদতের অফ স্টাম্পের বল টেনে লেগে ঘুরানোর চেষ্টায় স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন শরিফুলের হাতে। তার ইনিংস থামে চারটি চারে ২৮ রানে।
পরের ওভারে মিলতে পারত ল্যাথামের উইকেট। কিন্তু ঝাঁপিয়েও তার ফিরতি ক্যাচ মুঠোয় রাখতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। সে সময় ২০৮ রানে ছিলেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক।
পরের উইকেট দ্রুতই হারায় নিউ জিল্যান্ড। ইবাদতের বল কট বিহাইন্ডের সফল রিভিউ নিয়ে হেনরি নিকোলসকে শূন্য রানে ফেরায় বাংলাদেশ। রাচিন রবীন্দ্রর জায়গায় খেলতে নামা ড্যারিল মিচেল টিকেননি বেশিক্ষণ। শরিফুল ইসলামের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরেন তিনি। প্রথম সেশনে সেটিই হয়ে থাকে শেষ বল।
দ্বিতীয় সেশনে দ্রুত রান তোলায় মন দেন ল্যাথাম ও ব্লান্ডেল। কিছু রিভার্স সুইপও খেলতে দেখা যায় নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ককে। মুমিনুল হকের এক ওভারে দুই ছক্কা ও এক চার মেরে তিনি পৌঁছান আড়াইশ রানে। পরের বলে আবার ছক্কার চেষ্টায় স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ইয়াসির আলির হাতে। ভাঙে ৭৮ বল স্থায়ী ৭৬ রানের জুটি।
শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করা ব্লান্ডেল খেলেন চমৎকার কিছু পুল শট। এগিয়ে এসে তাসকিনকে মারেন দুটি চার। ৫৬ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া কিপার ব্যাটস্যান ৮ চারে ৬০ বলে অপরাজিত থাকেন ৫৭ রানে।
৭৯ রানে ২ উইকেট নেন শরিফুল, কেবল তার রান রেটই চারের নিচে। ইবাদত ২ উইকেট নেন ১৪৩ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন শেষে ৩৪৯/১) ১২৮.৫ ওভারে ৫২১/৬ ডিক্লে. (ল্যাথাম ২৫২, কনওয়ে ১০৯, টেইলর ২৮, নিকোলস ০, মিচেল ৩, ব্লান্ডেল ৫৭*, জেমিসন ৪*; তাসকিন ৩২.৫-৫-১১৭-০, শরিফুল ২৮-৯-৭৯-২, ইবাদত ৩০-৩-১৪৩-২, মিরাজ ৩১-২-১২৫-০, শান্ত ৪-০-১৫-০, মুমিনুল ৩-০-৩৪-১)