ক্যাম্পারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে আইরিশ ক্রিকেট

এলাম, দেখলাম, জয় করলাম - কার্টিস ক্যাম্পারের গল্পটা যেন এমনই। আবির্ভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটাকাশের উজ্জ্বল এক তারা। দলের অধিনায়ক ও সতীর্থরা মুগ্ধ এই তরুণের পরিণত পারফরম্যান্সে। ২১ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে নিয়ে এখন বড় স্বপ্ন দেখছেন আইরিশ ক্রিকেট।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2020, 07:46 AM
Updated : 3 August 2020, 07:46 AM

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ক্যাম্পারের। ২৮ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর উইকেটে গিয়ে তিনি খেলেন অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংস। পরে বল হাতে নেন টম ব্যান্টনের উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেছিলেন দল ৬৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর। এবার ৬৮ রানের ইনিংস খেলে উদ্ধার করেছেন দলকে। বল হাতে এই ম্যাচে তার শিকার জেমস ভিন্স ও আবারও ব্যান্টন।

ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই ফিফটির স্বাদ পাওয়া প্রথম আইরিশ ক্রিকেটার ক্যাম্পার। এর আগে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান যখন আইরিশদের হয়ে পা রেখেছিলেন ওয়ানেডে ক্রিকেটে, অভিষেকে করেছিলেন ৯৯, পরের ম্যাচে ৪১।

ক্যাম্পার অবশ্য আলোচনার জন্ম দিয়েছেন অভিষেকের আগে থেকেই। আয়ারল্যান্ডের হয়ে তার খেলতে পারাই যে রোমাঞ্চকর এক অধ্যায়!

১৯৯৯ সালের এপ্রিলে ক্যাম্পারের জন্ম জোহানেসবার্গে। বেড়ে ওঠা ও ক্রিকেটের শুরুও দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানেই অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৫ হয়ে উঠে এসেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে। তার আদর্শ জ্যাক ক্যালিস। এক পর্যায়ে জায়গা করে নেন দক্ষিণ আফ্রিকার মূল অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও। প্রোটিয়াদের হয়ে ২০১৭ সালে তিনটি যুব ওয়ানডে খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। পরের বছর দুটি যুব ওয়ানডে খেলেছেন ইংল্যান্ড সফরে। প্রথম ম্যাচে ৪৩ রান করার পর সেবারও নিয়েছিলেন ব্যান্টনের উইকেট!

ক্যাম্পারের সঙ্গে আইরিশ ক্রিকেটের সম্পর্কের সূচনা ২০১৮ সালেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রস্তুতি সফরে গিয়ে একটি প্রাদেশিক দলের সঙ্গে খেলছিল আয়ারল্যান্ড। সেই প্রাদেশিক দলে ছিলেন ক্যাম্পার। আইরিশদের সাবেক কিপার-ব্যাটসম্যান ও এখনকার ধারাভাষ্যকার নায়াল ও’ব্রায়েন খেলছিলেন সেই ম্যাচে। তার মাধ্যমেই গড়ে ওঠে যোগসূত্র। চলতি সিরিজ শুরুর আগে গল্পটি বলেছিলেন ও’ব্রায়েন।

“ ২০১৮ সালে প্রিটোরিয়ায় তার বিপক্ষে খেলেছিলাম। আমি নন-স্ট্রাইক প্রান্তে ছিলাম, একসময় সে ফিসফিস করে বলল, ‘আমার আইরিশ পাসপোর্ট আছে।’ আমি ভাবলাম, বেশ তো! ওই ম্যাচে সে ব্যাটিং-বোলিং ভালো করল। ম্যাচের পর কথা বললাম, সে খুবই আগ্রহ দেখাল আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলা নিয়ে।”

“ সে ক্লিন হিটার, স্কিডি মিডিয়াম পেস বোলিং করে এবং দক্ষিণ আফ্রিকানদের যে হার না মানা মানসিকতা, সেটিও পুরোপুরি আছে তার মধ্যে, যা আমি দারুণ পছন্দ করি।”

ক্যাম্পারের দাদি আইরিশ, সেই সূত্রেই ৯ বছর বয়সে তিনি পেয়ে যান আইরিশ পাসপোর্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলেই সেই পরিচয় ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন পূরণে। ও’ব্রায়ানের সঙ্গে কথোপকথন থেকে প্রক্রিয়ার শুরু, এই বছরের শুরুর দিকে পেয়ে যান আইরিশ বোর্ডের ‘ইমার্জিং’ চুক্তি।

এরপর আইরিশদের ‘এ’ দলের হয়ে (আয়ারল্যান্ড উলভস) গত ফেব্রুয়ারিতে সুযোগ পান নামিবিয়ার বিপক্ষে সিরিজে। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক তখনই। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে খেলেন ৩৩ বলে ৪৫ রানের ইনিংস, শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১ উইকেট নেওয়ার পর ২০৭ রান তাড়ায় দলকে জয় এনে দেন ৩১ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে। এরপর লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে অভিষেকে ৮ নম্বরে নেমে করেন ৫৪।

‘এ’ দলের হয়ে পারফরম্যান্স তাকে দ্রুতই নিয়ে আসে জাতীয় দলের বিবেচনায়। মার্ক অ্যাডায়ারের চোটের সুযোগ আর নিজে ক্যাম্পে ভালো করায় জায়গা পেয়ে যান চলতি ইংল্যান্ড সফরের দলে। নেটে নজর কাড়েন আইরিশ কোচ ও অধিনায়কের। অভিষেকও হয়ে যায় সিরিজের শুরুতেই। এরপর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দুই ম্যাচে তাক লাগানো পারফরম্যান্স।

রান করেছেন, উইকেট নিয়েছেন, তবে তার চেয়ে বেশি চমকে দিয়েছেন তিনি অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের মতোই পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলে। আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্র বালবার্নি বেশি মুগ্ধ এই কারণেই।

“ অধিনায়কের জন্য সে দারুণ এক ক্রিকেটার, কারণ তার সঙ্গে যখন কথা বলি, সে নিখুঁতভাবে বলে দেয় যে কী করতে চায়, তাই সেভাবেই মাঠ সাজানো যায়। বল হাতে খেলার মোড় বদলে দেওয়ার সামর্থ্য তার আছে। খুব দীর্ঘদেহী নয় সে, কিন্তু বল বাউন্স ও স্কিড করাতে পারে।”

“ ব্যাটিংয়ের কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মধ্যেই আমাদের জন্য দারুণ প্রভাববিস্তারী ক্রিকেটার হয়ে উঠেছে সে। তার কোনো খুঁত তো চোখে পড়ে না আমার। লড়াই করার মানসিকতা আছে তার। অন্যরা তার সঙ্গে খেলতে চায়, তাকে ঘিরে ব্যাট করতে চায়, তার সঙ্গে বোলিং জুটি গড়তে চায়।”

আয়ারল্যান্ডে এখনও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ক্যাম্পার। তার পরও দল তাকে যেভাবে গ্রহণ করেছে, যেভাবে হয়ে উঠেছেন আইরিশদের ভরসা, অভিষেক ম্যাচের পর স্কাই স্পোর্টসে সেসব নিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া।

“ আমার মতো মনে হয়, এর চেয়ে ভালো অভিষেক আর চাইতে পারতাম না। দু-একটি ব্যাপার এদিক-সেদিক হতে পারত, কিন্তু আমার জন্য ব্যাপারটি ছিল মুহূর্তটিকে দুহাতে ভরে নেওয়া। দলের সবাই আমাকে বলেছে উপভোগ করতে এবং চ্যালেঞ্জ লুফে নিতে।”

“ এই দলের আবহের সঙ্গে মিশে যাওয়া ছিল সবচেয়ে সহজ, সবাই সাদরে গ্রহণ করেছে আমাকে, খুবই আন্তরিক ছিল সবাই। অধিনায়ক, সাপোর্ট স্টাফসহ দলের সবার এই সমর্থন আসলে স্বপ্নের মতো।”