শুরু থেকে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করলেন জহুরুল ইসলাম। ইমরুল কায়েস জবাব দিলেন স্ট্রোকের দ্যুতিতে গড়া সেঞ্চুরিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই সেঞ্চুরিয়ানের ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। অসাধারণ বোলিংয়ে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক জেতালেন আবাহনীকে।
Published : 29 Mar 2019, 04:10 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ২৯ রানে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড। সাত ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এটি ষষ্ঠ জয়।
বিকেএসপিতে শুক্রবার জহুরুলের ১৩০ রানের ইনিংসে আবাহনী তোলে ৫০ ওভারে ২৮৬ রান। ইমরুলের ১২৬ রানের ইনিংসে গাজী গ্রুপ ছিল রান তাড়ার পথেই। কিন্তু পেরে ওঠেনি তারা মাশরাফির সঙ্গে।
শুরু, মাঝে ও শেষে, তিন স্পেলে দুটি করে উইকেট নিয়ে মাশরাফি শেষ করে দিয়েছেন গাজী গ্রুপের আশা। ৪৬ রানে নিয়েছেন ৬ উইকেট।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এ নিয়ে ছয়বার ৫ উইকেট বা এর বেশি নিলেন মাশরাফি। এর চারবারই নিয়েছেন ৬ উইকেট। এতবার ৬ উইকেট নেই বাংলাদেশের আর কোনো বোলারের।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আবাহনী শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত টেনেছেন জহুরুল। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের প্রথম সেঞ্চুরি এসেছিল তার ব্যাট থেকেই। সেদিন খেলেছিলেন পুরো ৫০ ওভার। এই ম্যাচেও ওপেন করতে নেমে আউট হয়েছেস ৫০তম ওভারে। ছাড়িয়ে গেছেন সেই ম্যাচেই করা নিজের সেরা ১২১ রানকে।
জহুরুল ও সৌম্য সরকারের উদ্বোধনী জুটিতে এসেছে ৬৬ রান। টানা চতুর্থ ম্যাচে থিতু হয়ে আউট হয়েছেন সৌম্য। ৫ চারে ২৯ করেছেন ৩৬ বলে।
ওয়াসিম জাফর ও নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি জহুরুলকে লম্বা সময় সঙ্গ দিতে। তবে সেটি দারুণভাবে পেরেছেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। ২৮তম ওভারে জুটি বেঁধে দুজন উইকেটে কাটিয়েছেন ৪৯তম ওভার পর্যন্ত। জুটিতে এসেছে ১৪৫ রান।
আগের ম্যাচে ৯০ রানে আউট হয়েছিলেন জহুরুল। এবার ভুল করেননি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে চতুর্থ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ১২৪ বলে।
সেঞ্চুরির পর বাড়িয়েছেন রানের গতি। শেষ ওভারে আউট হয়েছেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৮ বলে ১৩০ করে। মোসাদ্দেক ফিরেছেন ৭৬ বলে ৭১ করে।
নিউ জিল্যান্ড সফরের পর এবারের লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজের ছক্কায় শেষ হয় আবাহনীর ইনিংস।
গাজী গ্রুপের রান তাড়ার শুরু থেকেই বারবার বাঁধার দেয়াল হয়েছেন মাশরাফি। ইনিংসের প্রথম ওভারে ফিরিয়েছেন বিপজ্জনক রনি তালুকদারকে।
দ্বিতীয় উইকেটে মাইশুকুর রহমানকে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন ইমরুল। মাইশুকুরকে থামিয়ে ৫৩ রানের এই জুটিও ভেঙেছেন মাশরাফি। ৬ ওভারের প্রথম স্পেলে ২০ রান দিয়ে তার উইকেট ছিল দুটি।
দারুণ ব্যাটিংয়ে এরপরই ম্যাচের লাগাম নেন ইমরুল। শামসুর রহমানকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৯৩ রানের জুটি, তাতে শামসুরের রান ছিল কেবল ৩০।
শামসুরের রান আউটে থেমেছে এই জুটি। ভারতীয় অলরাউন্ডার পারভেজ রসুলকে শুরুতেই ফেরান সানজামুল ইসলাম।
কিন্তু ইমরুল ছুটছিলেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ৫২ বলে ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ। স্পিনে খেলেছেন দারুণ। ফিফটির পর মিরাজকেই মেরেছেন তিনটি ছক্কা। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দশম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ঠিক ১০০ বলেই।
এবারের লিগে এই ম্যাচের আগে খুব সুবিধা করতে পারছিলেন না ইমরুল। আগের ৬ ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন ৯৩ রান। এ দিন এক ইনিংসেই ছাড়িয়ে গেলেন আগের মোট রানকে।
ইমরুলের ব্যাটে যখন জয়ের পথে এগোচ্ছে গাজী গ্রুপ, আবার সেই মাশরাফির আঘাত। জুটি ভাঙতে ফিরলেন দ্বিতীয় স্পেলে। প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরেছিলেন ইমরুল। পরের বলেই তাকে বিদায় করে দেন মাশরাফি।
১১৮ বলে ১২৬ রানের ইনিংসে ইমরুল চার মেরেছেন ১৫টি, ছক্কা ৫টি। তবে তাকে হারিয়েই পথ হারায় গাজী গ্রুপ। নিজের পরের ওভারে মাশরাফির শিকার মেহেদি হাসান।
শেষ দিকে দারুণ কিছু শট খেলে আবার গাজী গ্রুপকে খানিকটা আশা দেখিয়েছিলেন তৌহিদ তারেক। শেষ স্পেলে ফেরা মাশরাফির এক ওভারে চার ও ছক্কা মেরে চমকে দেন। তবে শেষ পর্যন্ত জিতেছেন মাশরাফিই। ৩৯ করা তৌহিদকে নিজের শেষ ওভারে ফিরিয়ে ধরেন পঞ্চম শিকার। ওই ওভারেই উইকেট নেন আরেকটি।
গাজী গ্রুপ আর পেরে ওঠেনি। দুই সেঞ্চুরিয়ানের দাপুটে পারফরম্যান্সেও বোলিং দিয়ে ম্যাচ সেরা মাশরাফি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (জহুরুল ১৩০, সৌম্য ২৯, ওয়াসিম ১৯, শান্ত ১১, মোসাদ্দেক ৭১, সাব্বির ১, সাইফ ০*, মিরাজ ৬*; আবু হায়দার ৯-১-৬১-১, কামরুল রাব্বি ৯-০-৭০-২, মেহেদি ১০-০-৫১-০, মাইশুকুর ১-০-১০-০, রসুল ১০-১-৩৪-১, সাজ্জাদুল ১-০-৮-০, নাসুম ১০-২-৪৭-২)।
গাজী গ্রুপ: ৪৮.৪ ওভারে ২৫৭ (রনি ০, মাইশুকুর ১৫, ইমরুল ১২৬, শামসুর ৩০, রসুল ১, তৌহিদ ৩৯, মেহেদি ১০, সাজ্জাদুল ১৪, আবু হায়দার ১৬*, কামরুল রাব্বি ১, নাসুম ০; মাশরাফি ১০-১-৪৬-৬, সাইফ ৯.৪-০-৬৩-২, মিরাজ ৯-১-৫৪-০, নাজমুল অপু ৭-০-৩১-০, সৌম্য ৮-০-৩৮-০, সানজামুল ৪-১-১৭-১, শান্ত ১-০-৭-০)।
ফল: আবাহনী লিমিটেড ২৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাশরাফি বিন মুর্তজা