অধিনায়কের ‘জোরালো দাবিতে’ দলে সাব্বির

নিষেধাজ্ঞা এক মাস কমানো হলো। নিউ জিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে রাখাও হলো। দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠল সাব্বির রহমানকে নিয়ে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন জানালেন, অধিনায়ক প্রবলভাবে দলে চেয়েছেন এই ব্যাটসম্যানকে, নির্বাচক কমিটিও তাতে একমত হয়েছে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2019, 02:37 PM
Updated : 23 Jan 2019, 06:49 PM

সাব্বির যে নিউ জিল্যান্ডে যাচ্ছেন, এই গুঞ্জন ছিল দল ঘোষণার বেশ আগে থেকেই। তাই বুধবার যখন স্কোয়াড ঘোষণায় সাব্বিরের নামটি উচ্চারিত হলো, খুব বেশি বিস্ময় জাগায়নি তা। কিন্তু জিজ্ঞাসা ছিল অনেক। একের পর এক প্রশ্নের তীর ছুটে গেল প্রধান নির্বাচকের দিকে।

শুঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন সাব্বির। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা ফেব্রুয়ারির শেষে। নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে ১৩ ফেব্রুয়ারি। তাকে দলে রাখা মানে তাই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো। কিন্তু মেয়াদ কমানোর ঘোষণা তো বিসিবি এখনও দেয়নি! প্রধান নির্বাচক জানালেন, বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও নির্বাচকদের জানিয়ে দিয়েছে দল নির্বাচনের আগে।

“এটা তো ডিসিপ্লিনারি কমিটির ব্যাপার (নিষেধাজ্ঞা কমানো)। আমাদের কাছে যা বলা হয়েছে, জানুয়ারির ৩১ তারিখে সে শেষ করে ফেলছে (নিষেধাজ্ঞা)। এটার পর থেকে সে অ্যাভেলেভল। এটা আপনাদের বলা হয়নি, ওর শাস্তি এক মাস কমিয়ে আনা হয়েছে। সুতরাং ওভাবেই আমরা চিন্তা করে তাকে নিয়েছি।”

নিষেধাজ্ঞা কমানো হলেও প্রশ্ন থাকে। ফর্ম দিয়ে কি দলে জায়গা প্রাপ্য সাব্বিরের? সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিলেন গত জুলাইয়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজে। তিন ম্যাচে করেছিলেন ২৭ রান। ফিফটি নেই সবশেষ ১৪ ওয়ানডে ইনিংসে।

প্রধান নির্বাচক জানালেন, লোয়ার মিডল অর্ডারে কার্যকর একজন ব্যাটসম্যানের ভাবনায় অধিনায়ক তীব্রভাবে দলে চেয়েছেন সাব্বিরকে।

“সাব্বিরের পারফরম্যান্স...আমি পরিষ্কার করে দেই। এটা সম্পূর্ণ আমাদের অধিনায়কের পছন্দ। ও খুব জোরালোভাবে আমাদেরকে দাবি জানিয়েছে। আমরা দুজনই (দুই নির্বাচক মিনহাজুল ও হাবিবুল বাশার) এটার সঙ্গে একমত হয়েছি।”

“ও (অধিনায়ক) এমন একজনকে চাচ্ছে, যে সাত-আট নম্বরে নেমে ফাস্ট বোলারকে সামলাতে পারবে। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে, বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করেই নিউ জিল্যান্ড সফর থেকে ওকে নেয়া হয়েচ্ছে। দেখা যাক, অধিনায়ক যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তার ব্যাপারে। আমিও আশাবাদী, সে ফিরে আসবে।”

অধিনায়কের তীব্রভাবে চাওয়া আরেকটি প্রশ্নও তুলে দিচ্ছে। সাব্বিরের নিষেধাজ্ঞা কমানোতেও অধিনায়কের কোনো সুপারিশ ছিল? দুই নির্বাচক প্রায় একসঙ্গেই জানালেন, তেমন কিছু হয়নি। নিষেধাজ্ঞা কমানোর পর অধিনায়ক জানিয়েছেন তার চাওয়া।

পারফরম্যান্সের দিক থেকে এবারের বিপিএলেও তেমন কিছু করতে পারেননি সাব্বির। প্রথম ছয় ম্যাচে ছিলেন ব্যর্থ। অবশেষে বুধবারের আগে সবশেষ ম্যাচে, করেছিলেন ৮৫ রান। প্রধান নির্বাচক জানালেন, সেই ইনিংসেরও খানিকটা ভূমিকা ছিল সাব্বিরকে বিবেচনায় আনার।

“কিছু কিছু ব্যাপার আছে। যারা আগে পারফর্ম করেছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যাচ্ছে, সেসব মাথায় রাখতে হবে। বিপিএল আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টের মতোই, এখানে অনেক বিদেশি ক্রিকেটার খেলছে। এখানে ওর পারফরম্যান্স একটু গণনা করা যায়। এমন না যে একদম ফেলে দেয়া যায়।”

“আর যদি অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা থাকে, তখন নির্বাচকদের সেই পরিকল্পনার সঙ্গে অবশ্যই যেতে হয়। অধিনায়ক, কোচ যখন জানিয়েছে তাদের চাওয়া, তখন আমাদের সে অনুযায়ী যেতে হয়েছে। এটি কিন্তু টিম এফোর্ট। দেশের ব্যাপার। দেশের ভালোটা চাচ্ছি আমরা সবাই। দল যেন ভালো করে, সেটাই আমরা চাই।”

এবারের আগে গত বছর আরও এক দফায় নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাব্বির। জাতীয় লিগের ম্যাচে রাজশাহীতে তাকে উত্যক্ত করায় এক কিশোরকে ডেকে এনে পিটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল সাব্বিরের বিরুদ্ধে। পরে রিপোর্ট না দেওয়ার জন্য শাসিয়েছিলেন ম্যাচ রেফারিকে। সে দফায় ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে। গত বিপিএলে মাঠের বাইরে শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় জরিমানা হয়েছিল মোটা অঙ্কের।

অতীতের যাবতীয় কুকীর্তির কারণে এই দফার নিষেধাজ্ঞার সময় সাব্বিরকে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা দিতে চেয়েছিল বিসিবি। পরে টিম ম্যানেজমেন্ট ও সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনুরোধে নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে ছয় মাসে। এবার নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ফেরানো হলো, কতটা শুধরেছেন নিজেকে? প্রধান নির্বাচক শোনালেন আশার কথা।

“না দেখলে তো বোঝার উপায় নেই (কতটা শুধরেছে আচরণ)। যতটুকু বাইরে থেকে জানতে পেরেছি, তা সন্তোষজনক।”