মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ২২১ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানের লিড মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে ২৬৪ রানে।
উইকেটে পায়ের ক্ষত বেড়েছে আরও, টার্নও করছে অনেক। অসমান বাউন্স তো আছেই। ২৬৫ রানের লক্ষ্য তাই যথেষ্ট কঠিন হওয়ার কথা। রান তাড়ার শুরুতে কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশই।
অবশ্য তামিম ইকবাল দেখিয়েছেন, স্কিল থাকলে এই উইকেটেও ভালো ব্যাট করা যায়। তার সঙ্গে মুশফিকের জুটির সময় মনে হচ্ছিলো, আরও বড় লক্ষ্য দিতে পারবে বাংলাদেশ।
তামিম শুরু করেছিলেন দিনের প্রথম বলে চার মেরে। প্যাট কামিন্সের ওই ওভারে চার মারেন আরও একটি। নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলামকে দ্রুতই ফেরান লায়ন।
ইমরুলকেও জমে ওঠার আগে ফিরিয়ে দেন লায়ন। তবে যে বলটিতে আউট হলেন, আচমকা লাফানো সেই বলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের করার ছিল সামান্যই। ওপেনিংয়ে জায়গা হারানো ইমরুলের জন্য দলে জায়গা ধরে রাখাও হয়ে উঠছে চ্যালেঞ্জিং। সবশেষ ১৩ ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি মোটে একটি।
শুরুর ধাক্কা বাংলাদেশ অনেকটাই সামাল দেয় তামিম ও মুশফিকের জুটিতে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মুশফিক শুরুতেই চার-ছক্কায় আলগা করেন ফাঁস।
তামিম ছিলেন আস্থার প্রতিমূর্তি। ব্যাটিং দুরূহ উইকেটেও যেভাবে ব্যাট করেছেন, সেটিই আরও একবার ফুটিয়ে তুলেছে ব্যাটসম্যান হিসেবে তার জাত। পেস হোক বা স্পিন, খেলেছেন দারুণ সব শট। ডিফেন্স ছিল পোক্ত।
১০৯ বলে স্পর্শ করেছেন হাফসেঞ্চুরি। ৫০তম টেস্টে দুই ইনিংসেই স্পর্শ করলেন পঞ্চাশ। ৬ বার একই টেস্টে জোড়া পঞ্চাশ করে ছুঁলেন হাবিবুল বাশারের রেকর্ড। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশিবার একই টেস্টে জোড়া পঞ্চাশ।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে উদযাপন করেননি তামিম, হয়তো জমা রেখেছিলেন সেঞ্চুরির জন্য। খেলছিলেন সেভাবেই, এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেদিকেই। মনে হচ্ছিলেন না আউট হতে পারেন। এই তামিমকে ফেরাতে প্রয়োজন ছিল অসাধারণ কোনো ডেলিভারি। সেটিই বের হলো কামিন্সের হাত থেকে।
লাঞ্চের পরপর নতুন স্পেলের প্রথম বল। রাউন্ড দা উইকেটে কামিন্স ছুড়লেন গোলা তামিমের বুক সমান লাফিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে গেল গ্লাভস। প্রথম ইনিংসে ৭১ রানের পর তামিম এবার ৭৮।
চতুর্থ উইকেটে জুটি ছিল ৬৮ রানের। টেস্টে ৭ ইনিংস একসঙ্গে ব্যাট করে তামিম ও মুশফিকের এটি প্রথম অর্ধশত জুটি।
প্রথম ইনিংসের সেরা ব্যাটসম্যান সাকিব এবার ব্যর্থ। লায়নকে মিড অফের ওপর দিয়ে চার মারার এক বল পরই আবার উড়িয়ে মারতে চাইলেন। টাইমিংয়ের গড়বড়ে হলেন ক্যাচ।
সাতে নেমে সাব্বির খেলছিলেন নিজের সহজাত খেলা। তামিম-সাকিবকে হারানোর ধাক্কা সামলে এগিয়ে যাচ্ছিলো দল। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ফিরল সৌভাগ্যের ছোঁয়ার।
লায়নকে বেরিয়ে এসে গুলির বেগে ড্রাইভ করেছিলেন সাব্বির। লায়নের হাতে লেগে বল উড়িয়ে দেয় ননস্ট্রাইক প্রান্তের বেলস, মুশফিক তখন ক্রিজের বাইরে! দুর্ভাগ্য তো বটেই; তবে ব্যাট প্লেস না করায় আলসেমির দায় কিছুটা দেওয়া যায় মুশফিককেও। সম্ভাবনাময় ইনিংসটি শেষ ৪১ রানে।
সেটিই ছিল শেষের শুরু। আবারও রিভিউতে তালগোল পাকালেন সাব্বির। প্রথম ইনিংসে ব্যাটে লাগার পরও রিভিউ নেয়েছিলেন। এবার ব্যাট-প্যাড কাচ আউট দেওয়ার পর রিভিউ না নিয়ে হাঁটা দিলেন। টিভি রিপ্লে দেখাল, বল স্পর্শ করেনি ব্যাট!
সেটির রেশ থাকতে থাকতেই শূন্য রানে বিদায় দলে ফেরা নাসির হোসেন। ১৮৬ রানেই দল হারাল তিন উইকেট!
শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ২৬ রান দলকে নিয়ে গেল ২২০ রানের কাছাকাছি। শেষ দুটি উইকেট নিয়ে লায়ন শেষ করলেন ৮২ রানে ৬ উইকেট নিয়ে।
চোটের কারণে জশ হেইজেলউড বোলিং করতে না পারায় একটু ভুগেছে অস্ট্রেলিয়া। তবে লায়ন ছিলেন দুর্দান্ত। বাংলাদেশের কন্ডিশনে লায়নের ওপর ভরসা করেছিল দল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নিয়ে দিলেন আস্থার প্রতিদান।
চ্যালেঞ্জটা এবার অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের। স্পিন-বান্ধব উইকেটে আশায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৬০
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২১৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৪৫/১) ৭৯.৩ ওভারে ২২১ (তামিম ৭৮, সৌম্য ১৫, তাইজুল ৪, ইমরুল ২, মুশফিক ৪১, সাকিব ৫, সাব্বির ২২, নাসির ০, মিরাজ ২৬, শফিউল ৯, মুস্তাফিজ ০; হেইজেলউড ০/৩, কামিন্স ১/৩৮, লায়ন ৬/৮২, ম্যাক্সওয়েল ০/২৪, অ্যাগার ২/৫৫, খাওয়াজা ০/১)