তার এমন রুদ্ররূপ বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব চেনা। বিপিএলে তার ব্যাটের উত্তাল ঢেউ দেখা গেছে তো কতবারই।
Published : 27 Oct 2022, 01:03 PM
সাকিব আল হাসানের বলটি পয়েন্টের দিকে আলতো করে ঠেলেই ছুট লাগালেন রাইলি রুশো। মাঝ উইকেটেই শুরু হলো তার উদযাপন। তবে সেটুকু ছিল স্রেফ ‘ট্রেলার।’ উদযাপনের পুরো ছবি দেখালেন রান পূর্ণ করার পর। হেলমেট ও ব্যাট উঁচিয়ে ধরার পরিচিত দৃশ্য তো ছিলই। এরপর মেম্বার্স প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটু গেড়ে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। সিডনির দুপুরের কোমল রোদে চোখ বন্ধ করে যেন পুরোপুরি অবগাহন করতে চাইলেন মুহূর্তটিতে। তার চোখে-মুখে আবেগ আর তৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠল স্পষ্টই।
এমন নয় এটিই রুশোর প্রথম সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতে নিজের আগের ইনিংসটিতেই দেখা পেয়েছেন শতরানের। তবে তার আবেগময় উদযাপনে ফুটে উঠল, এই ইনিংসটি তার জন্য বিশেষ কিছু।
রুশোর এই উদযাপন একটু ভিন্ন। তবে ব্যাট হাতে তার এমন রুদ্ররূপ বাংলাদেশের ক্রিকেটে খুব চেনা। বিপিএলে তার ব্যাটের উত্তাল ঢেউ দেখা গছে তো কতবারই। বাংলাদেশের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সফলতম বিদেশি ব্যাটসম্যান তিনি। সেই অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে এবার তিনি কচুকাটা করলেন বাংলাদেশের বোলারদের। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে উপহার দিলেন প্রথম সেঞ্চুরি।
সিডনির ২২ গজে বৃহস্পতিবার যখন গার্ড নেন রুশো, বাংলাদেশ তখন তেতে আছে প্রথম ওভারে উইকেট নিয়ে। কিন্তু রুশো ও কুইন্টন ডি কক মিলে দ্রুতই বাংলাদেশকে মিইয়ে দেন নিজেরা জ্বলে উঠে। চার-ছক্কার ঝড় তুলে যখন তিনি শেষ পর্যন্ত থামলেন ১৯তম ওভারে, নামের পাশে তখন জ্বলজ্বল করছে ৫৬ বলে ১০৯ রান। সেখানে চার ৭টি, ছক্কা ৮টি।
ডি ককের সঙ্গে তার জুটি ১৬৮ রানের। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দেড়শ রানের জুটি হলো এই প্রথম।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুই ইনিংস আগেও কোনো সেঞ্চুরি ছিল না রুশোর। ম্যাচও অবশ্য খুব বেশি খেলেননি। স্রেফ ১৫ টি-টোয়েন্টি খেলেই জাতীয় দলের ক্যারিয়ারকে থমকে দিয়ে কলপ্যাক চুক্তিতে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে। সেই সময়ে ফিফটি ছিল কেবল দুটি, সর্বোচ্চ ৭৮।
৬ বছরের নির্বাসন শেষে আবার দেশের জার্সি গায়ে চাপান তিনি গত জুলাইয়ে। ফেরার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ইংলিশ বোলিং গুঁড়িয়ে অপরাজিত থেকে যান সেঞ্চুরি থেকে ৪ রান দূরে। সেই দূরত্ব পরে ঘুচিয়ে দিতেও সময় নেননি খুব একটা। তিন ম্যাচ পরই ভারতের বিপক্ষে ইন্দোরে পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত সেই তিন অঙ্কের দেখা। ৪৮ বলে অপরাজিত ১০০! সেঞ্চুরি সংখ্যা আরেকটি বাড়িয়ে নিলেন এবার পরের ইনিংসেই।
কলপ্যাক চুক্তির দীর্ঘ সময়টায় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট তাকে না পেলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় আলোকিত করতে থাকেন তিনি ব্যাটের দ্যুতিতে। সেই ঝলকানি দেখা যায় বিপিএলেও। ২০১৮-১৯ আসরে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৫৮ রান, পরের আসরে ৪৯৫ রান।
সব মিলিয়ে ৩৬ ইনিংস খেলে তার রান ১ হাজার ২৪০। ব্যাটিং গড় ৪৪.২৮, স্ট্রাইক রেট ১৪৮.৮৫। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে বিপিএলে তার চেয়ে বেশি রান আছে কেবল ক্রিস গেইলের। তবে গড় ও স্ট্রাইক রেট দুটিই বেশি রুশোর।
বাংলাদেশের এই ম্যাচে খেলা সব বোলারের বিপক্ষেই ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতা তার আছে বিপিএলে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ ভাণ্ডার তো আছেই। সব মিলিয়ে দলের আবশ্য জয়ের ম্যাচে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে পার্থক্য গড়ে দিলেন তিনিই।