প্রায় মৃত ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে কিছুটা প্রাণ ফিরিয়েছিলেন থিসারা পেরেরা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি খুলনা টাইগার্সের জয় ঠেকাতে।
Published : 03 Jan 2025, 11:49 PM
লড়াইটা ছিল যেন খুলনা টাইগার্সের সঙ্গে থিসারা পেরেরার। ১০ ওভারের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়া দলকে একাই লড়াইয়ে রেখেছিলেন ঢাকা ক্যাপিটালস অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত তিনি হারলেন না। শেষ বলের বাউন্ডারি মাঠ ছাড়লেন অপরাজিত সেঞ্চুরি নিয়ে। জুটিতেও ততক্ষণে হয়ে গেছে বিশ্বরেকর্ড। কিন্তু তিনি না হারলেও হেরে গেল তার দল।
ঢাকা শুরুতে এতটাই পিছিয়ে পড়েছিল যে, অধিনায়কের অমন সেঞ্চুরিও পারল না ম্যাচ খুব একটা জমাতে। খুলনা জিতে গেল ২০ রানে।
১৭৪ রানের লক্ষ্যে সপ্তম উইকেটে জুটির বিশ্ব রেকর্ড গড়েও ১৫৩ রানের বেশি করতে পারেনি ঢাকা।
দুই ম্যাচে দুটিই জিতে ঢাকার এই পর্ব শেষ করল খুলনা। তিন ম্যাচের সবকটি হেরে এবার সিলেট পর্ব শুরু করবে ঢাকা।
দুই দলের ব্যাটসম্যানদের হতাশার মাঝে গ্যালারিতে থেকে যাওয়া অল্প কিছু দর্শকের মনের খোরাক মেটান পেরেরা। ৯ চার ও ৭ ছক্কায় ৬০ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন ঢাকা অধিনায়ক। এছাড়া ম্যাচে আর কেউ ৩২ রানের বেশি করতে পারেনি।
সপ্তম উইকেটে আরেক শ্রীলঙ্কান চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে রান এসেছে ৬৩ বলে ১১২। সেখানে চাতুরাঙ্গার অবদান কেবল ২০ বলে ১১! চাতুরাঙ্গা আরেকটু চালিয়ে খেলতে পারলে হয়তো জয়ের আশাও জাগাতে পারত ঢাকা।
খুলনার পক্ষে মিতব্যয়ী বোলিং করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪ ওভারে এক মেইডেনসহ মাত্র ৬ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সেঞ্চুরিক ছাপিয়ে খুলনার অধিনায়ক জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
খুলনার ইতিবাচক শুরু
টস হেরে ব্যাটিং নেমে দারুণ শুরু করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তার চমৎকার ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ২৯ বলে ৪৯ রান পায় খুলনার। ৭ চারে ১৭ বলে ৩০ রান করা নাঈমকে পঞ্চম ওভারে ফেরান চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা।
খুলনার পিছিয়ে পড়া
নাঈমের বিদায়ের পর পেছনপানে হাঁটা ধরে খুলনার ইনিংস। ৮ ওভারের মধ্যে মাত্র ৪৪ রান করতে তারা হারায় ৬ উইকেট। দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি মিরাজ, আফিফ হোসেন, ইব্রাহিম জাদরান ও মোহাম্মদ নাওয়াজ।
একপ্রান্ত আগলে রেখে লম্বা সময় ব্যাটিং করলেও ২৮ বলে ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি আগের ম্যাচের নায়ক উইলিয়াম বোসিস্টো।
মাহিদুল-জিয়াউরের লড়াই
একশর আগে ৬ উইকেট হারানো দলকে পথে ফেরান মাহিদুল ইসলাম ও জিয়াউর রহমান। সপ্তম উইকেটে দুজন মিলে গড়ে তোলেন ২৯ বলে ৪৩ রানের জুটি।
আগের দিন রেকর্ডগড়া ফিফটি করা মাহিদুল এবার খেলেন ২২ বলে ৩২ রানের ইনিংস। জিয়ার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ২২ রান।
শেষে আবু হায়দারের ক্যামিও
শুভাম রঞ্জনের করা ইনিংসের শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন আবু হায়দার। ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি আসে নাসুম আহমেদের ব্যাট থেকে।
শেষের ঝড়ে ৪ ওভারে ৬৩ রান পায় খুলনা। আবু হায়দার ৮ বলে ২১ ও নাসুম ৪ বলে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
মিতব্যয়ী মুস্তাফিজ-আলাউদ্দিন, খরুচে আবু জায়েদ
৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচায় জিয়ার উইকেট নেন মুস্তাফিজ। আলাউদ্দিন বাবু ৩ ওভারে দেন ১৫ রান। একাদশে সুযোগ পাওয়ার ম্যাচে ৪৯ রান খরচ করেন অভিজ্ঞ পেসার আবু জায়েদ।
শুরুতেই ঢাকার ব্যাটিং ধস
রান তাড়ায় শুরুতেই ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে যায় ঢাকা। পাওয়ার প্লেতে তারা হারায় ৪ উইকেট। দশ ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে ফেরেন ৬ জন।
আগের ম্যাচে খালি হাতে ফেরা লিটন কুমার দাস এবার করতে পারেন ২ রান। স্টিফেন এসকেনাজি, শাহাদাত হোসেন, শুভামও দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। তানজিদ হাসান ১৫ বলে করেন ১৯ রান।
দশ ওভারের মধ্যে তিন ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ২ রানে ৩ উইকেট নেন মিরাজ। আবু হায়দার ধরেন ২ শিকার।
শেষের আগে পেরেরার ঝড়ো সেঞ্চুরি
মাত্র ৪১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলের আশা কিছুটা জিইয়ে রাখেন পেরেরা। চাতুরাঙ্গাকে সঙ্গে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তিনি যোগ করেন ১১২ রান। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সপ্তম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড।
আগের রেকর্ডও বিপিএলেই। গত আসরে ৪০ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর ১০৮ রানের জুটি গড়েছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের আরিফুল হক ও বেনি হাওয়েল।
১০ ওভার শেষে পেরেরার রান ছিল ১৯ বলে ১১। পরে রানের গতি একটু একটু করে বাড়ান তিনি। তাণ্ডব চালান মূলত শেষ ছয় ওভারে।
আবু হায়দারের পরপর দুই ওভারে দুইটি করে ছক্কার সঙ্গে মারেন একটি করে চার। ৩৯ বলে তিনি করেন ফিফটি। পরের পঞ্চাশ করতে লাগে ২১ বল।
ম্যাচের শেষ বলে বোসিস্টোর বলে সোজা চার মেরে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূরণ করেন অভিজ্ঞ লঙ্কান অলরাউন্ডার।
বিপিএলে ছয় বা এর নিচে নেমে সেঞ্চুরি করা দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান তিনি। ২০২৩ সালে ফরচুন বরিশালের হয়ে ছয়ে নেমে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন ইফতিখার আহমেদ।
মিতব্যয়ী মিরাজ
৪ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ৬ রানে ৩ উইকেট নেন মিরাজ। বিপিএলে পুরো ৪ ওভার বোলিং করে এর চেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড আছে শুধু শাহিদ আফ্রিদি ও নাহিদুল ইসলামের। দুজনই খরচ করেছিলেন ৫ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৭৩/৮ (নাঈম ৩০, বোসিস্টো ২৬, আফিফ ১, জাদরান ৫, মিরাজ ৮, নাওয়াজ ৫, মাহিদুল ৩২, জিয়াউর ২২, আবু হায়দার ২১*, নাসুম ৯*; আবু জায়েদ ৪-০-৪৯-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, নাজমুল ৩-০-২৯-১, চাতুরাঙ্গা ২-০-২২-২, শুভাম ৩-০-৩৩-১, আলাউদ্দিন ৩-০-১৫-১, পেরেরা ১-০-২-১)
ঢাকা ক্যাপিটারলস: ২০ ওভারে ১৫৩/৬ (তানজিদ ১৯, লিটন ২, এসকেনাজি ০, শাহাদাত ৩, শুভাম ৬, পেরেরা ১০৩*, আলাউদ্দিন ০, চাতুরাঙ্গা ১১*; নাসুম ২-০-১০-০, হাসান ৪-০-২৯-০, মিরাজ ৪-১-৬-৩, আবু হায়দার ৪-০-৪৭-২, জিয়াউর ৪-০-৩৪-১, বোসিস্টো ২-০-২৫-০)
ফল: খুলনা টাইগার্স ২০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ