টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দেওয়া বোলিংয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে আকসার প্যাটেল বললেন, উইকেটের আচরণ বুঝে স্বাভাবিক বোলিংয়ের প্রক্রিয়া ধরে রেখেই সফল তিনি।
Published : 28 Jun 2024, 10:24 AM
আকসার প্যাটেল যখন আক্রমণে এলেন, ইংল্যান্ড তখন মোটামুটি একটা শুরু পেয়ে গেছে। ৩ ওভারে রান ২৬। জস বাটলার বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আকসার এসেই সব পাল্টে দিলেন। প্রথম বলেই আউট বাটলার। সেটি কেবলই শুরু। নিজের পরের দুই ওভারেও তিনি উইকেট নিলেন প্রথম বলে। একটিতে শিকার জনি বেয়ারস্টো, আরেকটি মইন আলি। অন্য প্রান্তে চোখধাঁধানো এক স্লোয়ারে ততক্ষণে ফিল সল্টকেও বোল্ড করে দিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ব্যস, ইংলিশ ইনিংসের আর বাকি থাকে কী!
আকসারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে রান তাড়ার শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে ইংলিশ ব্যাটিং। সেমি-ফাইনালের ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। অথচ ম্যাচ শেষে তিনি বলছেন, দারুণ কিছুর চেষ্টা তার ছিল না। স্রেফ স্বাভাবিক বোলিংই করে যেতে চেয়েছেন।
গায়ানার স্পিন সহায়ক উইকেটে ১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন বাটলার। তৃতীয় ওভারে আর্শদিপ সিংয়ের বলে তিনটি বাউন্ডারিতে রানের গতি বাড়ান ইংল্যান্ড অধিনায়ক। পরের ওভারে আকসার বোলিংয়ে আসতেই রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু উইকেটে কিছুটা গ্রিপ করা ডেলিভারি ব্যাটে লাগাতে পারেননি বাটলার। তার গ্লাভস ছুঁয়ে যাওয়া বল সহজেই ক্যাচ নেন রিশাভ পান্ত।
এমনিতে গড়পড়তা ৯৫ থেকে ৯৮ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে করলেও এ দিন গতি গড়ে ৫ থকে ৭ কিলোমিটার কম করেন তিনি। বাটলারকে আউট করা ডেলিভারিতেও গতি ছিল তুলনামূলক কম। নিজেদের ব্যাটিংয়ের সময়ই তিনি বুঝে নেন, এই উইকেটে বাড়তি গতির বদলে সঠিক জায়গায় বোলিং করাই হতে পারে সাফল্যের চাবি।
সেই ভাবনা ধরে রেখে আর্ম ডেলিভারিতে তিনি বোল্ড করেন বেয়ারস্টোকে। টার্ন বা গ্রিপ না করে পিচ করার পর কিছুটা পিছলে যাওয়া বলের লাইনে খেলতে পারেননি বেয়ারস্টো। আর পরে লেংথ ডেলিভারিতে অন সাইডে খেলার চেষ্টার তালগোল পাকিয়ে ফেলেন মইন। বল তার প্যাডে লেগে উইকেটের পেছনে যেতেই সেটি খেয়াল না করে রানের জন্য বেরিয়ে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সুযোগ পেয়ে দ্রুততার সঙ্গে স্টাম্পিং করেন পান্ত।
আকসারের তিন ওভারে ৩ উইকেটে ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ৮ ওভারে ৪ উইকেটে ৪৯ রান। পরে কুলদিপ ইয়াদাভও উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দিলে ২০ বল বাকি থাকতেই ১০৩ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশরা। গত বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের প্রতিশোধ নেওয়ার ম্যাচে ৬৮ রানের সহজ জয় পায় ভারত।
২০০৭ সালে প্রথম আসরে শিরোপা জেতার পর ২০১৪ সালে সবশেষ ফাইনাল খেলে ভারত। প্রায় দশ বছর পর আবার ট্রফি ঘরে তোলার খুব কাছে পৌঁছে গেল তারা। ২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দলকে ফাইনালে তোলার নায়ক আকসার। এর আগে ব্যাট হাতে ৬ বলে ১০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার গ্রহণ করে আকসার শোনালেন তার বোলিংয়ের পরিকল্পনা।
"আমি আসলে প্রথম বলেই উইকেট নেব এমন কিছু চিন্তা করিনি (হাসি)। সঠিক জায়গায় বল করার পরিকল্পনা ছিল। অবশ্যই নকআউট ম্যাচ খেলার সময় সবাই চায় প্রথম ও শেষ বলটা ভালোভাবে করতে।"
"আমার পরিকল্পনা সবসময়ের মতোই স্বাভাবিক ছিল। এমনিতে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করা কঠিন। তবে যখন জানা আছে পিচ থেকে সাহায্য পাব, খুব বেশি কিছু চিন্তা না করে, অসাধারণ কিছুর চেষ্টা না করে আমার মনে হয়েছে, সবকিছু যতটা স্বাভাবিক রাখব, আমার জন্য তত সহজ হবে।"
ভারতের ব্যাটিংয়ের সময়ই দেখা গেছে, উইকেটে স্পিনারদের জন্য আছে যথেষ্ট সহায়তা। প্রায় নিয়মিতই গ্রিপ করছিল বল, নিচু হচ্ছিল কিছু ডেলিভারি। পেসারদের বলও পিচ করার পর থেমে যাচ্ছিল। এমনকি লিয়াম লিভিংস্টোনও বেশ কঠিন সময়ই উপহার দেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের।
এর সঙ্গে যোগ হয় বৃষ্টির বাগড়া। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন রোহিত শার্মা। সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ বলে ৪৭ রান। তাদের ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই উইকেট সম্পর্কে ধারণা নেন বোলাররা। পরে সেটি কাজে লাগানোর কথা বলেন আকসার।
"ড্রেসিং রুমে আমাদের কথা হচ্ছিল যে, এই উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ নয়। জানতাম, ব্যাটসম্যানরা আমার ওভারে আক্রমণ করতে পারে। আমার বলে সোজা ব্যাটে কিংবা পেছনের পায়ে খেলা সহজ হতো না, কারণ বল ব্যাটে ভালোভাবে আসছিল না। তাই আমার পরিকল্পনা ছিল, তাদের কাজটা যত কঠিন করা যায়। তাদেরকে ভিন্ন কিছু করার চিন্তা করতে বাধ্য করা। প্রথম বলে ঠিক সেটাই হয়েছে।"
"(ব্যাটিংয়ের সময়) আমার একটা ধারণা হয়েছিল যে কী করতে হবে বা কী করা যাবে না। গতি দিয়ে বোলিং করলে তাদের কাজটা হয়তো সহজ হয়ে যেত। ভালো জায়গায় বোলিং করাটা আদর্শ ছিল। গুড লেংথে পিচ করানোর পর কেউ আমার বলে মারতে পারিনি। তাই ভালো লাইন ও লেংথে পিচ করানো জরুরি ছিল। পাওয়ার প্লেতে সেটিই চেষ্টা করেছি।"
বারবাডোজে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে ভারত। আগামী শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে খেলা।