সং সাজার প্রথম ম্যাচ থেকে বিশ্বকাপের ফাইনাল

পরচুলা আর নকল দাঁড়ি-গোঁফ নিউ জিল্যান্ড দলের সবার। গায়ে সেই আশির দশকের ‘রেট্রো’ জার্সি। অস্ট্রেলিয়ানদের জার্সির পেছনে লেখা তাদের ডাক নাম কিংবা দলের ভেতরের আদুরে নাম। সব মিলিয়ে যেন ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতা। প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আবহে লড়াইয়ের চেয়ে মজাই ছিল বেশি!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2021, 11:15 AM
Updated : 13 Nov 2021, 07:29 PM

সময়ের পরিক্রমায় ২০ ওভারের ম্যাচও এখন ‘সিরিয়াস ক্রিকেট। ক্রিকেটের সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণও। ১৪ বছরের মধ্যে ৭টি বিশ্বকাপ কী আর এমনি এমনি হয়! অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডও সেই বাস্তবতা জানে ভালো করেই।

প্রথম ম্যাচের ‘কৌতুক’ থেকে এই দুই দল রোববার মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্বকাপের ফাইনালে। তাসমান সাগর পাড়ের এই দুই দেশ মরুর বুকে লড়াই করবে ২০ ওভারের ক্রিকেটে প্রথম বিশ্ব শিরোপার স্বাদ পাওয়ার আশায়।

২০ ওভারের ক্রিকেটের প্রস্তাব প্রথম করেন ইংল্যান্ডের বোর্ডের সেই সময়কার বিপণন ব্যবস্থাপক স্টুয়ার্ট রবিনসন, ২০০১ সালে। সেটির পথ ধরেই ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে এটি চালু হয়। দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ায় আইসিসিও আগ্রহী হয়ে ওঠে। ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অকল্যান্ডে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড।

এমনিতে এই দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ঝাঁঝ থাকে যথেষ্টই। শুধু ক্রিকেট বা ক্রীড়ায় নয়, এই দুই দেশের লড়াইটা তীব্র আরও অনেক ক্ষেত্রেই। তবে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মজাই ছিল মুখ্য। পোশাক বা সাজে তো বটেই, তাদের ভাবনায় ও আচরণেও।

দুই দলের কোনো ক্রিকেটারের ওই ম্যাচের আগে কখনও টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না ঘরোয়া ক্রিকেটেও। তবে বিনোদনের কমতি ছিল না ব্যাট-বলের লড়াইয়ে। দুই ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও মাইকেল ক্লার্ককে ২ ওভারের মধ্যে হারালেও অস্ট্রেলিয়া ২০ ওভারে তোলে ২১৪ রান।

চারে নেমে অধিনায়ক রিকি পন্টিং অপরাজিত থাকেন ৫৫ বলে ৯৮ রান করে। ১৩ বলে ৩২ করেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস, ১৮ বলে ৩১ মাইক হাসি।

নিউ জিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটিতে স্টিভেন ফ্লেমিং ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ৫ ওভারে ৪৯ তুললেও পরে তারা উইকেট হারায় নিয়মিত বিরতিতে। ২৪ বলে ৩৬ করেন ম্যাককালাম। চারে নেমে স্কট স্টাইরিস করেন ৩৯ বলে ৬৬।

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম দুই বলেই উইকেট নেন মাইকেল ক্যাসপ্রোইচ। ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শেষ করেন এই পেসার। অস্ট্রেলিয়া জেতে ৪৪ রানে।

২ বলে যখন নিউ জিল্যান্ডের প্রয়োজন ৪৬ রান, গ্লেন ম্যাকগ্রা তখন ১৯৮১ সালে ট্রেভর চ্যাপেলের কুখ্যাত আন্ডারআর্ম ডেলিভারির অনুকরণে একইরকম ডেলিভারি করার চেষ্টা করেন মজা করে। আম্পায়ার বিলি বাউডেন ফুটবল রেফারির মতো পকেট থেকে কার্ড বের করে উঁচিয়ে ধরে মাঠ ছাড়তে বলেন ম্যাকগ্রাকে।

এভাবেই ম্যাচ জুড়ে ছিল রঙ-রসের আবহ। ম্যাচের পর রিকি পন্টিং বলেছিলেন, “এই ফরম্যাট সিরিয়াসলি খেলা কঠিন।”

কিন্তু দ্রুতই এটা সিরিয়াস হয়ে ওঠে এবং শুরুর মাত্র দুই বছর পরই এই সংস্করণের বিশ্বকাপ আয়োজন করে আইসিসি। ওই বিশ্বকাপে ভারতের শিরোপা এবং সেই পথ ধরে আইপিএলের আবির্ভাবে ক্রিকেট বিশ্বের চিরন্তর বাস্তবতাই বদলে যায় অনেকটা। প্রথম তিন বছরের মধ্যেই তিনটি বিশ্বকাপ, নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও সিরিজ, একের পর এক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি এখন ক্রিকেটের আকর্ষণীয় সংস্করণ এবং ক্রিকেটের বিশ্বায়নের মূল হাতিয়ার। যদিও এটিকে নিয়ে সংশয়, প্রশ্ন আছে অনেক। ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনাও চলে তুমুল। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বাস্তবতা এটি।

শুরুতে যিনি সিরিয়াস হতে পারছিলেন না, সেই রিকি পন্টিং এখন টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের নির্ভরযোগ্য ও অনেক দলের আকাঙ্ক্ষিত কোচ। তার দেশ রোববার মাঠে নামবে বিশ্বসেরা হওয়ার লড়াইয়ে।

শুরুর ম্যাচ থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ১৪টি টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল। অস্ট্রেলিয়ার জয় ৯টি, নিউ জিল্যান্ডের ৪টি। একটি ম্যাচ হয় ‘টাই’, যেটিতে সুপার ওভারে জেতে নিউ জিল্যান্ড।

মজার ব্যাপার হলো, আগের ৬টি বিশ্বকাপে মাত্র একবারই মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল। ধর্মশালায় ২০১৬ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে নিউ জিল্যান্ড জয় পায় ৮ রানে।

সেটি ছিল গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। এবার শিরোপার মঞ্চে মুখোমুখি দুই দল। মাঠে নামবে তারা স্বপ্নপূরণের আশায়।

১৬ বছর আগে যখন প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছিল দল দুটি, জয়-হারের মূল্য খুব একটা ছিল না কারও কাছেই। সময় বদলে দিয়েছে চিত্র। দুবাইয়ে রোববার একদল ভাসবে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে, আরেকদল পুড়বে হতাশায়।