ফরচুন বরিশালের ব্যাটিং লাইন আপ ধসিয়ে স্রেফ ১২ রানে ৫ উইকেট নিলেন রংপুর রাইডার্সের বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার।
Published : 19 Feb 2024, 08:25 PM
ইয়র্কার ধরনের ডেলিভারি ব্যাটে লাগাতে পারলেন না ওবেড ম্যাককয়। বল কিপারের গ্লাভসে জমা পড়তেই জোরাল আবেদন রংপুর রাইডার্সের। আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় রিভিউ নিলেন তারা। লাভ হলো না তাতে। হতাশ হলেন বোলার আবু হায়দার। অসাধারণ এক অর্জন তার ধরা দিল না। তবে ওই আক্ষেপ সাময়িক। আগেই যা করে ফেলেছেন তিনি, সেটিও তো কম নয়। ফরচুন বরিশালের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে এই বাঁহাতি পেসার নাম লিখিয়েছেন রেকর্ড বইয়ে।
রংপুরের একাদশে ফেরার ম্যাচটি অসাধারণ বোলিংয়ে রাঙান ২৮ বছর বয়সী পেসার। চট্টগ্রামে সোমবার ৪ ওভারে স্রেফ ১২ রান খরচায় তিনি নেন ৫ উইকেট।
বিপিএলে বাংলাদেশের বোলারদের সেরা বোলিং এটিই। আগের সেরা ছিল সাকিব আল হাসানের ১৬ রানে ৫ উইকেট।
সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এর চেয়ে কম রানে ৫ উইকেটের নজির আছে স্রেফ দুটি।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকে বেঞ্চে বসে থাকা আবু হায়দার প্রথম সুযোগ পান রংপুরের ষষ্ঠ ম্যাচে। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সেদিন এক ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৬ রান খরচ করেন তিনি, পাননি কোনো উইকেট। এরপর আবার ছিটকে যান একাদশের বাইরে। চার ম্যাচ পর এই ম্যাচ দিয়ে ফিরলেন একাদশে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিজের অস্তিত্বও আরেকবার প্রবলভাবে জানিয়ে দিলেন স্মরণীয় পারফরম্যান্সে।
বিপিএল দিয়েই দেশের ক্রিকেটে সাড়া জাগিয়েছিলেন তিনি ৯ বছর আগে। ২০১৫ আসরে ২১ উইকেট নিয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন কুমিল্লার শিরোপা জয়ে। এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এ দিন আবার জ্বলে উঠলেন তিনি বল হাতে।
৮৭ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ক্যারিয়ারে এটিই তার সেরা বোলিং। আগের সেরা ২০১৫ সালের বিপিএলে রংপুরের বিপক্ষে ১৯ রানে ৪ উইকেট। ওই আসরেই আরও একবার ৪ উইকেট নেন তিনি।
এই ম্যাচে বল হাতে পেতেই অনেকটা অপেক্ষা করতে হয় তাকে। বরিশাল তখন ছুটছে প্রবল গতিতে। তিনি আক্রমণে এসেই চোখের পলকে বদলে দেন ইনিংসের চিত্র। ত্রয়োদশ ওভারে বোলিংয়ে এসে এক ওভারেই উইকেট নেন তিনটি!
প্রথম বলে তিনি ফেরান মুশফিকুর রহিমকে। রাউন্ড দা উইকেট থেকে করা ডেলিভারি পিচ করার পর সোজা যাওয়ার মুখে ছুঁয়ে যায় মুশফিকের ব্যাটের বাইরের কানা। উইকেটের পেছনে বাকি কাজ অনায়াসে সারেন সোহান।
এক বল পর ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে বোল্ড সৌম্য সরকার। ওভারের পঞ্চম বলে ইনিংসের সবচেয়ে বড় উইকেটটি নেন আবু হায়দার। লো ফুল টসে গতির বৈচিত্রে বিভ্রান্ত হয়ে আগে ব্যাট চালিয়ে ফেলেন কাইল মেয়ার্স। সহজেই ফিরতি ক্যাচ নেন আবু হায়দার। বিদায়ঘণ্টা বাজে ২৭ বলে ৪৬ রান করা বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানের।
পরের ওভারে শর্ট লেংথ ডেলিভারি পুল খেলার চেষ্টায় টাইমিংয়ে গড়বড় হয় মাহমুদউল্লাহর। মিড উইকেট সীমানার অনেকটা ভেতরে এসে ক্যাচ নেন শামীম হোসেন। পরে মেহেদী হাসান মিরাজকে বিদায় করে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
ওই ওভার শেষে আবু হায়দারের বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড়ায় ৩-০-৫-৫! বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে বিপিএলে ৬ উইকেট শিকারের হাতছানিও তখন তার সামনে। সেই সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত পারেননি অল্পের জন্য। দেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড তবু হয়ে যায়।
শেষ ওভারে একটি বাউন্ডারি হজম করায় একটু বিবর্ণ হয় বোলিং ফিগার। তার পরও তা চোখধাঁধানো।
অসাধারণ শুরুর পরও বরিশাল এলোমেলো হয়ে পড়ে আবু হায়দারের বোলিংয়ে। এক পর্যায়ে ১২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান করা দলটির রান হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১২৯। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত থামে তারা ১৫১ রানে।