বাবরের বিধ্বংসী সেঞ্চুরি আর রিজওয়ান ঝড়ে পিষ্ট ইংল্যান্ড

রেকর্ড গড়া জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা ফেরাল পাকিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2022, 05:55 PM
Updated : 22 Sept 2022, 05:55 PM

মোহাম্মদ রিজওয়ান আউট হতে পারতেন ২৩ রানে। শুরুর জুটি ভাঙতে পারত ৪৬ রানে। হলো না তার কিছুই। জীবন পেয়ে বিস্ফোরক এক ইনিংস খেললেন রিজওয়ান। দুঃসময় পেছনে ফেলে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি উপহার দিলেন বাবর আজম। তাদের রেকর্ড জুটিতে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল পাকিস্তান।

করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের জয় ১০ উইকেটে। ২০০ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে যায় ৩ বল হাতে রেখে।

এই সংস্করণে কোনো উইকেট না হারিয়ে সর্বোচ্চ রান তাড়ায় জয়ের রেকর্ড এটি। ২০১৬ সালে হ্যামিল্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নিউ জিল্যান্ডের ১০ উইকেটে জয় ছিল আগের সর্বোচ্চ।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই প্রথম দেড়শর বেশি রান তাড়ায় জিতল পাকিস্তান। ২০১০ সালে দুবাইয়ে ১৪৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জয় ছিল তাদের আগের রেকর্ড।

২০ ওভারের ক্রিকেটে যে কোনো উইকেটে এই প্রথম দুইশ রানের (২০৩*) জুটি পেল পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে রান তাড়ায় প্রথম দুইশ রানের জুটিও এটিই।

আগের রেকর্ড জুটিও ছিল বাবর ও রিজওয়ানের। গত বছর সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার ২০৩ রান তাড়ায় দলের ৯ উইকেটের জয়ে উদ্বোধনী জুটিতেই দুজন তুলেছিলেন ১৯৭ রান।

সেই ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন বাবর। আরেকটি দুর্দান্ত রান তাড়ায় এবার তিনি করলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।

৬৬ বলে ১১ চার ও ৫ ছক্কায় ১১০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা পাকিস্তান অধিনায়ক। কিপার-ব্যাটসম্যান রিজওয়ান ৫১ বলে করেন ৮৮ রান। ৫ চার ও ৪ ছক্কায় গড়া তার ইনিংসটি।

দুই বাঁহাতি মইন আলি ও বেন ডাকেটের বিধ্বংসী দুটি ইনিংসে বড় পুঁজি গড়েছিল ইংল্যান্ড। সেটিকে অনায়াস বানিয়ে ফেললেন বাবর ও রিজওয়ান।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অ্যালেক্স হেলস ও ফিল সল্টের ব্যাটে ইংল্যান্ডের শুরুটা হয় ভালো। প্রথম পাঁচ ওভারে তারা তুলে ফেলে ৪২ রান।

এরপরই জোড়া ধাক্কা খায় ইংলিশরা। পরপর দুই বলে হেলস ও দাভিদ মালানকে বোল্ড করে দেন শাহনাওয়াজ দাহানি।

তিন বছর পর দলে ফিরে আগের ম্যাচে ফিফটি করা হেলস এবার ২১ বলে ৩ চার ও একটি ছক্কায় করেন ২৬। প্রথম ম্যাচে ২০ রান করা মালান এবার পান ‘গোল্ডেন ডাক’ এর তেতো স্বাদ।

চার নম্বরে নেমে রানের গতিতে দম দেন ডাকেট। সুইপ, প্যাডল সুইপ, রিভার্স-সুইপ, দারুণ সব শটে চার মারেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে সল্টের সঙ্গে গড়েন ৫৩ রানের জুটি।

পরপর দুই ওভারে অবশ্য দুই জনকেই হারায় ইংল্যান্ড। ২৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় সল্ট করেন ৩০ রান। ডাকেটের ২২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস গড়া ৭টি চারে।

এরপর হ্যারি ব্রুকের সঙ্গে ২৭ বলে ৫৯ ও স্যাম কারানের সঙ্গে ১৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৯ রানের বিস্ফোরক দুটি জুটিতে দলের স্কোর দুইশর কাছে নিয়ে যান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মইন।

ব্রুক ১৯ বলে ৩ চার ও একটি ছক্কায় করেন ৩১। ৩২ রানে মইনকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল। কিন্তু ডিপ মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ ফেলেন খুশদিল শাহ।

ইনিংসের শেষ দুই বলে মোহাম্মদ হাসনাইনকে দুটি ছক্কা মেরে ২৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন মইন। ৪টি করে চার ও ছক্কায় তিনি করেন ৫৫ রান।

রান তাড়ায় রিজওয়ান ও বাবরের ব্যাটে ছুটতে থাকে পাকিস্তান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে জুটি ভাঙার সুযোগ এসেছিল। লিয়াম ডসনের বলে তুলে মেরেছিলেন রিজওয়ান। মিড-অফ থেকে খানিকটা পেছনে দৌড়ে ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি হেলস। জীবন পেয়ে পরের বলেই ছক্কা মারেন রিজওয়ান।

এ দিন ২১ রানে পৌঁছতেই ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৮ হাজার রান পূর্ণ হয়ে যায় বাবরের, ২১৮ ইনিংসে। ক্রিস গেইলের (২১৩ ইনিংস) পর যা দ্বিতীয় দ্রুততম।  

টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান রিজওয়ান তুলে নেন টানা তৃতীয় ফিফটি, ৩০ বলে। সাত ইনিংস পর বাবর পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৩৯ বলে। ৬৮ বলে স্পর্শ করে তাদের জুটির শতরান। কোনো বোলারই পাত্তা পাননি দুজনের সামনে।

ফিফটির পর মইনকে একই ওভারে তিনটি ছক্কা মেরে এগিয়ে যান বাবর। ৯২ রানে তাকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল একটি। ডিপ মিডউইকেট লাফিয়ে এক হাতে ক্যাচ নিতে পারেননি কারান। বল তার হাতে পড়ে হয়ে যায় ছক্কা। পরের ওভারেই বাবর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৬২ বলে।

পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি হলো রেকর্ড ১০টি। তিনি ছাড়িয়ে গেলেন সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হককে (৯ সেঞ্চুরি)।

শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল স্রেফ ৩ রান। প্রথম দুই বলে দুটি সিঙ্গেল-এর পর ডেভিড উইলিকে কাভার দিয়ে চার মেরে দলের জয়ে তুলির শেষ আঁচরটাও দেন বাবর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৯৯/৫ (সল্ট ৩০, হেলস ২৬, মালান ০, ডাকেট ৪৩, ব্রুকস ৩১, মইন ৫৫*, কারান ১০*; হাসনাইন ৪-০-৫১-০, নাওয়াজ ৪-০-৪০-১, দাহানি ৪-০-৩৭-২, রউফ ৪-০-৩০-২, কাদির ৪-০-৪১-০)

পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ২০৩/০ (রিজওয়ান ৮৮*, বাবর ১১০*, উইলি ৩.৩-০-৪৪-০, ডসন ৪-০-২৬-০, কারান ৪-০-২৯-০, উড ৪-০-৪৯-০, রশিদ ৩-০-৩৪-০, মইন ১-০-২১-০)

ফল: পাকিস্তান ১০ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৭ ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটির পর ১-১ সমতা

ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম

Also Read: দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ইনজামামকে ছাড়িয়ে বাবর