ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ
ইডেন গার্ডেন্সে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটে-বলে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।
Published : 22 Jan 2025, 10:38 PM
আইপিএলে পাঁচ বছর ধরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সুবাদে ইডেন গার্ডেন্সের উইকেট থেকে শুরু করে মাঠের প্রতিটি কোণা খুব ভালো চেনা ভারুন চক্রবর্তির। কত ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স এখানে আছে তার। সেই মাঠে প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সিতে খেলতে নেমেও বল হাতে আলো ছড়ালেন এই লেগ স্পিনার। তার দারুণ বোলিংয়ের জবাব খুঁজে পেল না ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। পরে ছোট রান তাড়া অনায়াস হয়ে গেল আভিশেক শার্মার বিধ্বংসী ইনিংসে।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত।
ইংল্যান্ডের সাদা বলের কোচ হিসেবে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পথচলা শুরু হলো খুব বাজেভাবে হেরে। আগ্রাসী ও বিনোদনদায়ী ক্রিকেটের মন্ত্রে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলকে বদলে দেওয়া এই কোচ সাদা বলেও একইভাবে খেলার কথা বলেছিলেন সিরিজ শুরুর আগে। এক জস বাটলার ছাড়া দলের আর কারো পারফরম্যান্সে সেটা দেখা গেল না একেবারেই।
কলকাতায় বুধবার ইংল্যান্ড ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে করতে পারে স্রেফ ১৩২ রান।
অধিনায়ক বাটলার ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ বলে করেন ৬৮ রান। দুই অঙ্কে যেতে পারেন আর কেবল সহ-অধিনায়ক হ্যারি ব্রুক (১৭) ও পেসার জফ্রা আর্চার (১২)।
৪ ওভারে ২৩ রানে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার ভারুন। ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান তিনিই।
গত অক্টোবরে দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে প্রায় তিন বছর পর এই সংস্করণে ফেরার পর ৮ ম্যাচে ৩৩ বছর বয়সী ভারুনের উইকেট হয়ে গেল ২০টি।
বাঁহাতি স্পিনার আকসার প্যাটেল, পেসার আর্শদিপ সিং ও হার্দিক পান্ডিয়ার প্রাপ্তি ২টি করে উইকেট।
এই জোড়া শিকারে ইউজবেন্দ্রা চেহেলকে ছাড়িয়ে এই সংস্করণে ভারতের সফলতম বোলার এখন আর্শদিপ। চেহেলের ৯৬ উইকেট ৭৯ ইনিংসে। আর্শদিপের ৯৭ উইকেট হয়ে গেল ৬১ ইনিংসেই।
রান তাড়ায় ভারত জিতে যায় ৪৩ বল বাকি রেখে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই সংস্করণে ভারতের সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে জয় এটিই। এর আগে সর্বোচ্চ ১৩ বল হাতে রেখে জিতেছিল তারা দুই দফায়।
ওপেনার আভিশেক করেন ৩৪ বলে ৭৯ রান। তার ইনিংসে ৫টি চারের পাশে ছক্কা ৮টি।
স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় শুরু ম্যাচে রাতে শিশিরের প্রভাব থাকবে বলে টস জিতে অনুমিতভাবে বোলিং নেন ভারত অধিনায়ক সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ। স্বাগতিকরা একাদশ সাজায় তিন স্পিনার নিয়ে, ভারুন ও আকসারের সঙ্গে সুযোগ পান তরুণ লেগ স্পিনার রাভি বিষ্ণই। লম্বা সময় পর দলে ফিরলেও, এ দিন একাদশে রাখা হয়নি অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ শামিকে।
শুরুটাই বাজে হয় ইংল্যান্ডের। ম্যাচের তৃতীয় বলে ফিল সল্টকে হারায় তারা। আর্শদিপের শর্ট বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন তিনি। এই পেসার নিজের পরের ওভারে আরেক ওপেনার বেন ডাকেটকে বিদায় করে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডে ছাড়িয়ে যান চেহেলকে।
তৃতীয় উইকেটে ৪৮ রানের জুটি গড়েন বাটলার ও ব্রুক। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে থাকে ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি।
একই ওভারে তিন বলের মধ্যে ব্রুক ও লিয়াম লিভিংস্টোনকে বোল্ড করে দেন ভারুন। ৮ ওভারে ৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
এরপর এক প্রান্তে নিয়মিতই উইকেট হারায় সফরকারীরা। ৩৪ বলে ফিফটি করে এগিয়ে যান বাটলার। ভারুনকে ছক্কার পরের বলেই নিতিশ কুমার রেড্ডির দুর্দান্ত ক্যাচে থামে তার ইনিংস।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় সাঞ্জু স্যামসনের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। প্রথম ওভারে ৬ বলে ১ রান করা এই কিপার-ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ওভারে গাস আটকিনসনকে চারটি চার ও একটি ছক্কায় নেন ২২ রান। পরের ওভারে আর্চারকে চার ও ছক্কা মারেন আভিশেক।
প্রথম ৪ ওভারে ভারত তোলে ৩৯ রান। পরের ওভারে স্যামসনকে (২০ বলে ২৬) ফিরিয়ে শুরুর জুটি ভাঙেন আর্চার। একই ওভারে শূন্য রানে ফেরেন সুরিয়াকুমার।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ভারতকে। এক প্রান্তে তিলাক ভার্মাকে দর্শক বানিয়ে রেখে ঝড় তোলেন আভিশেক। মার্ক উডকে পরপর দুই ছক্কা মারেন তিনি। প্রথমবার আক্রমণে এসে তার ফিরতি ক্যাচ ফেলেন লেগ স্পিনার আদিল রাশিদ। ২৯ রানে জীবন পেয়ে, রাশিদের পরের তিন বলে একটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান আভিশেক।
জেমি ওভারটনকে ছক্কায় উড়িয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি স্রেফ ২০ বলে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হয়ে দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি এটি। ২০০৭ সালে ডারবানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ওভারে ছয় ছক্কা মারার ম্যাচে ১২ বলে ফিফটি করে রেকর্ডটা ইউভরাজ সিংয়ের।
জয় থেকে ৮ রান দূরে থাকতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় আভিশেকের খুনে ইনিংস। ৪২ বলে ৮৪ রানের জুটিতে তার একার অবদানই ৬৯।
উডকে চার মেরে ম্যাচের ইতি টেনে দেওয়া তিলাক অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ১৯ রান করে।
দ্বিতীয় ম্যাচ আগামী শনিবার চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩২ (সল্ট ০, ডাকেট ৪, বাটলার ৬৮, ব্রুক ১৭, লিভিংস্টোন ০, বেথেল ৭, ওভারটন ২, অ্যাটকিনসন ২, আর্চার ১২, রাশিদ ৮*, উড ১; আর্শদিপ ৪-০-১৭-২, পান্ডিয়া ৪-০-৪২-২, ভারুন ৪-০-২৩-৩, আকসার ৪-১-২২-২, বিষ্ণই ৪-০-২২-০)
ভারত: ১২.৫ ওভারে ১৩৩/৩ (স্যামসন ২৬, আভিশেক ৭৯, সুরিয়াকুমার ০, তিলাক ১৯*, পান্ডিয়া ৩; আর্চার ৪-০-২১-২, অ্যাটকিনসন ২-০-৩৮-০, উড ২.৫-০-২৫-০, রাশিদ ২-০-২৭-১, ওভারটন ১-০-১০-০, লিভিংস্টোন ১-০-৭-০)
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে প্রথমটির পর ভারত ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: ভারুন চক্রবর্তি