বিপিএলের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পারিশ্রমিক, দেশের সামগ্রিক বাস্তবতা মাথায় রাখলেও হতাশা লুকাননি ক্রিকেটাররা।
Published : 23 Feb 2025, 08:03 PM
‘সব জায়গায় উন্নতি হয়, আমাদের নিচের দিকে যাচ্ছে’- আক্ষেপমাখা কণ্ঠে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারিশ্রমিকের বিষয়ে বলছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। বিপিএলের পর এবার দেশের লিস্ট 'এ' ক্রিকেটের একমাত্র টুর্নামেন্টেও ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকে লেগেছে বড়সড় ধাক্কা। নিজের হতাশা তাই লুকাননি এবার আবাহনীতে যোগ দেওয়া অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চলমানা নানা বাস্তবতায় প্রিমিয়ার লিগে সব দলই ক্রিকেটারদের সঙ্গে আগের তুলনায় কম টাকায় চুক্তি করেছে। দেশের সামগ্রিক বাস্তবতা মানছেন ক্রিকেটাররাও। তবু পরপর দুটি টুর্নামেন্টে পারিশ্রমিক কমে যাওয়ায় ভীষণ হতাশ তারা।
প্রিমিয়ার লিগে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের অঙ্ক সাধারণত কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় না। এমনকি বেশিরভাগ সময় মৌখিকভাবেই সেরে নেওয়া হয় আর্থিক চুক্তি। তবে এবার কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পরও একাধিক ক্লাব অন্তত দুবার পারিশ্রমিক কমানোর অনুরোধ করেছে ক্রিকেটারদের।
কোনো উপায় না দেখে কমানো পারিশ্রমিকেই খেলতে রাজি হয়েছেন ক্রিকেটাররা। দল বদলের প্রক্রিয়া সেরে রোববার আক্ষেপের কথা শোনালেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব থেকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে যোগ দেওয়া তাইজুল ইসলাম।
"আল্টিমেটলি টাকার জন্যই খেলে ক্রিকেটাররা। প্রত্যেক টুর্নামেন্ট থেকেই যখন টাকা কমে যায়, অবশ্যই এটা একটা দুঃখজনক বিষয়। শুধু জাতীয় দলের ক্রিকেটার নয়, অনেক ক্রিকেটার আছে যাদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে পরিবার চালাতে হয়। তাদের অনেক কঠিন হয়ে যায়। আমার মনে হয়, ইনশাল্লাহ এই পরিস্থিতি দ্রুত কেটে যাবে।"
এবারের বিপিএলেও উল্লেখযোগ্য কমেছিল ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক। ২০২৪ সালের আসরে সর্বোচ্চ ক্যাটাগরির ক্রিকেটাররা পেয়েছিলেন ৮০ লাখ টাকা। এবার তাদের খেলতে হয়েছে ৬০ লাখ টাকায়। একইভাবে অন্যান্য ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকও কমেছিল।
তখন দেশের সাম্প্রতিক অবস্থার কথা বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ। এমনকি অন্যান্য টুর্নামেন্টেও টাকার পরিমাণ কমতে পারে, সেই আভাসও দিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
সময় সেটিতেই সত্যি করেছে। তাইজুলের মতোই কম পারিশ্রমিকেই নতুন ঠিকানা বেছে নিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। এবার আবাহনী লিমিটেডের হয়ে খেলবেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকা লিগের সফলতম ও দাপুটে দলটি থেকে বেশিরভাগ ক্রিকেটারই চলে গেছেন অন্য গন্তব্যে।
কঠিন এই সময়ে হাল ধরতে এবার আবাহনীতে যোগ দিয়েছেন মিঠুন, মুমিনুল হক, পারভেজ হোসেন ইমনরা। দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা সেরে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের উগ্রগতি নিয়েই প্রশ্ন তুললেন মিঠুন।
"সত্যি বলতে আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে (পারিশ্রমিকের বিষয়ে) কোনো উন্নতি দেখছি না। সেটা বিপিএল হোক বা ডিপিএল, এটা প্রতিনিয়ত নিচের দিকেই যাচ্ছে। প্রত্যেকটা জায়গায় উন্নতি হয়। আমাদের এখানে অবনতি হচ্ছে।"
দেশের সামগ্রিক অবস্থার কথা জানা থাকলেও পারিশ্রমিক কমে যাওয়া যেন মানতে পারছেন না মিঠুন।
"যতই দেশের প্রেক্ষাপট বলেন বা অজুহাতের চেষ্টা করেন, দিন শেষে যখন চাকরি করবেন, আপনি যথাযথ পারিশ্রমিকই আশা করবেন। আমাদেরও পেশা কিন্তু ক্রিকেট। আমরা আশা করি, গত বছর যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে উন্নতি করার।"
“সব ক্রিকেটারের পারিশ্রমিক কমেছে, বড় অঙ্কে কমেছে। যেটা পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমরা আশা করি না। কত কমেছে, সেটা বলব না। সার্বিকভাবে যদি চিন্তা করেন, গত বছরের তুলনায় এবার ক্রিকেটাররা ৩০ শতাংশ পারিশ্রমিক পাচ্ছে কি না, সন্দেহ আছে।"
দলবদলে অংশ নেওয়া অন্তত দশ জন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গত আসরের তুলনায় এবার প্রায় অর্ধেক বা কিছু ক্ষেত্রে এর চেয়েও কম টাকায় খেলতে হচ্ছে তাদের। নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি তারা।
ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেও পাওয়া গেছে এর সত্যতা। রোববার দলবদলের প্রক্রিয়া শেষ করে মোহামেডানের ম্যানেজার সাজ্জাদ আহমেদও মেনে নিয়েছেন পারিশ্রমিক সমস্যার কথা।
"দিন শেষে সব দলেরই (পারিশ্রমিকের) সমস্যাটা চলছে, চলবে। কারণ এখন তো সরকারের অবস্থানটা একটু ভিন্ন অবস্থায় আছে। নতুন কোনো সরকার আসেনি। তাই পারিশ্রমিকের একটা সমস্যা থাকবেই। এর মধ্যেই যেভাবে পারা যায়, এডজাস্ট করার চেষ্টা করছি।"
তবে বেশিরভাগ ক্রিকেটারই অবশ্য যথাসময় লিগ আয়োজন হওয়ায় খুশি। তাই পারিশ্রমিক কমিয়ে হলেও খেলতে রাজি তারা। সব ঠিক থাকলে আগামী ৩ মার্চ শুরু হবে এবারের লিগ। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে যাবে বেশ কয়েকটি দলের অনুশীলন।