Published : 26 Mar 2025, 02:00 PM
২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপি পারিশ্রমিকের ওজন। আকাশচুম্বি প্রত্যাশার ভার। বছরের পর বছর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পারা দলের নতুন আশার সারথি। এবার আইপিল শুরুর আগেই শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গী প্রবল চাপ। প্রথম ম্যাচেই অসাধারণ পারফরম্যান্সে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, তার ভর বইতে প্রস্তুত তার ব্যাট। পাঞ্জাব কিংস অধিনায়কের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ নিউ জিল্যান্ড গ্রেট কেন উইলিয়ামসন বললেন, ইনিংসটি দুনিয়ার বাইরের কিছু।
গত আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া শ্রেয়াসকে এবার নিলাম থেকে চোখধাঁধানো অঙ্কে দলে নিয়েছে পাঞ্জাব। কোচ রিকি পন্টিং কদিন আগে বলেছেন, শ্রেয়াসকে অধিনায়ক হিসেবে দলে পেতে তারা মরিয়া ছিলেন।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে শ্রেয়াস জানান, এই মৌসুমে তিন নম্বরে ব্যাট করবেন তিনি। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার চতুর্থ ওভারে ক্রিজে যান পাঞ্জাব অধিনায়ক। মৌসুম শুরু করেন তিনি প্রথম বলেই কাগিসো রাবাদাকে বাউন্ডারি মেরে। দু বল পর রাবাদাকেই ছক্কায় উড়িয়ে দেন দারুণ এক ফ্লিক শটে।
এরপর আর থামাথামি নেই। রাশিদ খানের বলে ছক্কায় ফিফটি করার পরের বলেই ছক্কা মারেন মারেন আরেকটি। স্বয়ংক্রিয় কোনো যন্ত্রের মতো খেলে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৯ ছক্কায় ৪২ বলে ৯৭ রান করে।
সপ্তদশ ওভারে প্রাসিধ কৃষ্ণার বলে টানা চার বলের মধ্যে যখন তিনটি ছক্কা ও একটি চার মারেন তিনি, তার রান তখন ৩৭ বলে ৮৮।
শতরান তখন মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। তবে শেষ তিন ওভারে ততটা স্ট্রাইক পাননি তিনি। সেই সময়ে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন শাশাঙ্ক সিং। শেষ ওভারে পাঁচটি বাউন্ডারিসহ ১৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
তিন অঙ্ক ছুঁতে শেষ ওভারে শ্রেয়াসের প্রয়োজন ছিল তিন রানের। কিন্তু স্ট্রাইকই পাননি তিনি। ম্যাচের পরে শাশাঙ্ক বলেছেন, অধিনায়ক তাকে বার্তা দিয়েছিলেন তার সেঞ্চুরির দিকে না তাকিয়ে দলের জন্য খেলতে। তিন রানের জন্য সেঞ্চুরি না হলেও তাই শ্রেয়াসের ইনিংসের মাহাত্ম্য কমছে না।
নিলামে দল না পাওয়া উইলিয়ামসন এবারের আইপিএলে কাজ করছেন বিশেষজ্ঞ হিসেবে। জিওস্টারে আলোচনায় তিনি তুলে ধরলেন শ্রেয়াসের ইনিংসটির ওজন।
“এটা ছিল সর্বোচ্চ মানের ইনিংস। প্রথম বল থেকেই এটা ছিল অনেকটা হাইলাইট রিল… প্রতিটি বল এমনভাবে খেলেছে, যেভাবে হিট করা উচিত। অফ স্টাম্পের বাইরে বল পেলেই ব্যাট চালিয়েছে, বিশ্বের সেরা পেসারদের কয়েকজনকে কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কায় উড়িয়েছে।”
“এরপর রাশিদ খানের ওপরও চড়াও হয়েছে, ক্রিকেটে এখন সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর একটি এটি। দলের নেতা হিসেবে তিন নম্বরে নেমে ইনিংসের সুর বেঁধে দেওয়া, প্রতিপক্ষের সবচেয়ে বড় হুমকিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দেওয়া… ইনিংসটি সত্যিই ছিল যে যেন দুনিয়ার বাইরের কিছু।”
শরীর তাক করে আসা শর্ট বলে শ্রেয়াসের দুর্বলতা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে নানা সময়ে। সেখানেও এখন উন্নতির ছাপ দেখছেন উইলিয়ামসন।
“শ্রেয়াসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, নিজের খেলা সে ক্রমাগত বিকশিত করে চলেছে। একটা সময় ছিল, দলগুলি তাকে শর্ট বলে কাবু করতে চেয়েছে। এখন সে এখানেও মানিয়ে নিচ্ছে দারুণভাবে, ক্রিজের গভীরে গিয়ে সামনের পায়ের ওপর ভর কমিয়ে শর্ট পিচ ডেলিভারিতেও দাপট দেখাচ্ছে।”
“সবচেয়ে মুগ্ধতার ব্যাপার হলো, যেভাবে সে সামনের পায়ে আবার ভর দিয়ে ফেলে দ্রুতই। বোলারদের জন্য কাজটা তাতে কঠিন হয়ে ওঠে, একটা শর্ট পিচ দিয়ে আরেকটা ফুল লেংথে করতে ভাবতে হয় তাদের। সে এখন মাঠের সব জায়গায় খেলতে পারে। এটিই তাকে ভয়ঙ্কর এক ব্যাটসম্যান করে তুলেছে।”
ভারতের ওয়ানডে দলে শ্রেয়াস এখন নিয়মিত মুখ হলেও টেস্টে জায়গা পাকা করতে পারেননি। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের জার্সিতে তাকে দেখা যায়নি গত দেড় বছরে। তবে এখন তাকে সব সংস্করণের জন্যই উপযুক্ত মনে করেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি।
“গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা ব্যাটসম্যান শ্রেয়াস। সব সংস্করণের জন্য সে প্রস্তুত। লেংথে কিছু সমস্যার পর তার উন্নতি দেখাটা দারুণ।”