এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদন থেকে বেঁচে যাওয়ার পর চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ, একই ম্যাচে ঝড় তুলে শতরানের ঠিকানা ছুঁলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
Published : 15 Apr 2024, 01:55 PM
মোহাম্মদ মিঠুনের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি ব্যাটে লাগাতে পারলেন না মোহাম্মদ নাঈম শেখ। বল পেছনের পায়ে লাগতেই জোরাল আবেদন। আউট দিলেন না আম্পায়ার। সিদ্ধান্তে নাখোশ প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের খেলোয়াড়রা এগিয়ে এলেন প্রতিবাদে। খেলা বন্ধ থাকল কিছুক্ষণ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত তো আর বদলায় না! তখন রক্ষা পেয়ে আরও এগিয়ে গিয়ে তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পেলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তার বিদায়ের পর ঝড়ো সেঞ্চুরি উপহার দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে সোমবার প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে আম্পায়ারিং বিতর্কের সেই রেশ নিয়েই রানের জোয়ার বইয়ে দিল আবাহনী লিমিটেড। আম্পায়ারের যে সিদ্ধান্তে ৬৯ রানে টিকে গেলেন নাঈম, সেটিতে প্রাইম ব্যাংকের আপত্তি জানানোর কারণ আছে বলেই মনে হয়েছে ভিডিও দেখে।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কিপিং গ্লাভস ছেড়ে ইনিংসের ২২তম ওভারে অফ স্পিন করতে আসেন নিয়মিত উইকেটরক্ষক মিঠুন। আলোচিত ঘটনাটির জন্ম তার চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে। বিসিবির ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত ম্যাচটির ওই ডেলিভারির রিপ্লে দেখে খালি চেখে মনে হয়েছে, বল হয়তো স্টাম্পে লাগত ভালোভাবেই।
বল নাঈমের পায়ে লাগার পরই প্রবল আত্মবিশ্বাসে আবেদন করতে থাকেন মিঠুন। কিন্তু পক্ষে পাননি আম্পায়ায়ারের সিদ্ধান্ত। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মিঠুনের চোখে-মুখে হতাশার সঙ্গে ফুটে ওঠে ক্ষোভ। কিপার জাকির ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান মুষ্টিবদ্ধ হাত বাতাসে ছুড়ে। তাদের মতোই আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে পারছিলেন না প্রাইম ব্যাংকের অন্যরাও।
আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসেন তামিম ইকবাল। বোলিং প্রান্তের ক্রিজের কাছে জড়ো হন দলের বাকি ক্রিকেটাররা। এসময় মাঠের দুই আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় তামিমকে। দুই দলের ডাগ আউটের কাছে দেখা যায় কোচ-কর্মকর্তাদের।
এই ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৪ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। আম্পায়ারদের সঙ্গে তামিমের আলোচনা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তার পিঠ চাপড়ে কিছু বলতে দেখা যায় আম্পায়ারদের। একটু পর শুরু হয় খেলা।
তখন ৬৯ রানে থাকা নাঈম খেলা শুরুর পর ওই ওভারেই ছক্কা মেরে প্রাইম ব্যাংকের হতাশা আরও বাড়ান। পরে তিনি করেন চলতি লিগের নিজের প্রথম সেঞ্চুরি।
আম্পায়ারিং বিতর্কের অংশ ছাড়া পুরো ইনিংসে দাপট দেখান আবাহনীর ব্যাটসম্যানরা। নাঈমের পর ঝড়ো শতক করেন শান্ত। অধিনায়কের সঙ্গে বড় জুটি গড়ে স্রেফ ৩৫ বলে ৬৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তাওহিদ হৃদয়। প্রাইম ব্যাংকের বোলারদের তুলাধুনা করে ৪ উইকেটে ৩৪১ রানে পৌঁছায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
গত বছরের লিগে সর্বোচ্চ রান করা নাঈম এবার প্রথম ৯ রাউন্ডে তেমন দারুণ কিছু করতে পারেননি। তিনটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেললেও ৬৩ রানের বেশি করতে পারেননি কোনো ম্যাচে। দশম রাউন্ডে এসে অবশেষে বড় ইনিংস খেলতে পারলেন।
লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে একশতম ইনিংসে তিনি করেন ১০৪ বলে ১০৫ রান। ১০ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ওপেনার।
শুরু থেকেই ইতিবাচক ব্যাটিং করেন নাঈম। দ্বিতীয় বলেই তিনি মারেন বাউন্ডারি। নবম ওভারে রেজাউর রহমান রাজার পরপর তিন বলে দুই চারের পর ছক্কা মারেন ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৪২ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন তিনি। ১১০ রানে এনামুল হক রান আউট হলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
নব্বইয়ে পৌঁছে কিছুটা খোলসবন্দী হয়ে পড়েন নাঈম। ৮১ বলে ৯৫ রান করলেও সেখান থেকে তিন অঙ্ক ছুঁতে খেলেন আরও ১৬ বল।
লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি করার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। রাজার বলে লং অনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন আবাহনীর ওপেনার।
নাঈম ফেরার পর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন এবারের লিগে প্রথমবার ব্যাটিংয়ে নামা শান্ত। সঙ্গী হিসেবে পান তাওহিদ হৃদয়কে। দুজন মিলে কচুকাটা করেন প্রাইম ব্যাংকের বোলারদের। তৃতীয় উইকেটে স্রেফ ৬২ বলে তারা গড়েন ১২৩ রানের জুটি।
৫ চারের সঙ্গে ১ ছক্কায় পঞ্চাশ ছুঁতে ৫৬ বল খেলেন আবাহনী অধিনায়ক। এরপর ডানা মেলে দেন তিনি। পরের পঞ্চাশ করতে খেলেন স্রেফ ২১ বল। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে একাদশ সেঞ্চুরি করতে আরও ৬টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ২টি ছক্কা।
প্রায় প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি মারেন শান্ত। সবচেয়ে বেশি চড়াও হন তিনি হাসান মাহমুদের ওপর। জাতীয় দলের এই পেসারের ১৯ বলে ৭ চারে নেন ৩৭ রান। আরেক পেসার রাজার ৮ বলে করেন ১৯ রান। ৪৯তম ওভারে হাসানের দারুণ ইয়র্কারে সমাপ্তি ঘটে শান্তর ১৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৫ বলে ১১৮ রানের ইনিংসের।
পরে শেষটা দারুণ করেন হৃদয়। শেষ ওভারে রাজার শেষ দুই বলে ছক্কা মারেন তরুণ ব্যাটসম্যান। ২ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় তিনি সাজান নিজের ৬৫ রানের ইনিংস।