এই প্রথম একই ওয়ানডেতে চার উইকেট নিতে পারলেন বাংলাদেশের একাধিক পেসার।
Published : 06 Nov 2024, 09:20 PM
ফাজালহাক ফারুকির পায়ে বল লাগতেই জোরাল আবেদন করলেন তাসকিন আহমেদ। আবেদন তো নয়, যেন প্রবল আকাঙ্ক্ষায় প্রার্থনা! একটু ভেবে আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়লেন তাসকিন। কিন্তু রিভিউয়ে দেখা গেল, বল চলে যাচ্ছিল স্টাম্পের ওপর দিয়ে। রক্ষা পেলেন ফারুকি। পাঁচ উইকেটের উদযাপন করলেও শেষ পর্যন্ত পাঁচ শিকার হলো না তাসকিনের।
যা হলো, সেটাও অবশ্য খুব কম নয়। ওই ডেলিভারির আগেই ওভারে জোড়া শিকার ধরেন তিনি। তাতে চার উইকেট হয়ে যায় তার।
তাসকিনের আগেই এ দিন চার উইকেটের স্বাদ পেয়ে যান মুস্তাফিজুর রহমান। পাঁচ উইকেটের হাতছানি ছিল তার সামনেও। কিন্তু শেষ দুই ওভারে উইকেটের দেখা পাননি।
শেষ পর্যন্ত পাঁচের পূর্ণতা না হলেও চারের প্রাপ্তিতেই দুজনের নাম যৌথভাবে উঠে গেছে রেকর্ড বইয়ের একটি পাতায়। ওয়ানডে ক্রিকেটে এই প্রথম একই ম্যাচে চার উইকেট পেলেন বাংলাদেশের একাধিক পেসার।
এর আগে চার দফায় একই ওয়ানডেতে চার বা ততোধিক উইকেট পেয়েছেন বাংলাদেশের একাধিক বোলার। তবে কখনও সেই দুজন ছিলেন স্পিনার, কখনও একজন স্পিনার আরেকজন পেসার।
শারজাহতে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে বুধবার দুজনের এই কীর্তির পরও অবশ্য শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে ২৩৫ রানের স্কোর গড়েছে আফগানিস্তান। তবে এই দুজনের পারফরম্যান্স কৃতিত্বের দাবিও রাখে।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট ছিল কিছুটা মন্থর। মুস্তাফিজের ঘরানার বোলারদের জন্য যা দারুণ সহায়ক। নিজের শেষ দুই ওভারের আগে তা কাজেও লাগান তিনি।
তবে শুরুটা হয়েছিল তাসকিনের হাত ধরে। বিপজ্জনক রাহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তিনিই। ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আফগান ওপেনার।
তাসকিনের সঙ্গে নতুন বলে শরিফুল ইসলামের আঁটসাঁট বোলিংয়ে উড়ন্ত শুরু পায়নি আফগানরা। ৭ ওভারে তাদের রান যখন ১ উইকেটে ৩০, মুস্কাফিজ আক্রমণে আসেন তখন। চাপে থাকা প্রতিপক্ষকে আরও চেপে ধরেন তিনি শুরুতেই।
প্রথম ওভারেই রহমাহ শাহকে ফেরান তিনি। এক প্রান্ত আগলে রেখে আফগান ব্যাটিং লাইন আপকে এক সুতোয় গেঁথে রাখার কাজটি মুলথ করেন এই ব্যাটসম্যানই। তাকে দ্রুত ফেরানো তাই জরুরি ছিল বাংলাদেশের জন্য।
দ্বিতীয় ওভারে তো মুস্তাফিজ জ্বলে ওঠেন আরও। অভিষেক ওয়ানডেতে দারুণ কয়েকটি শটে শুরুটা ভালো করা তরুণ ওপেনার সেদিকউল্লাহ আটালকে ২১ রানে থামান তিনি। তিন বল পরই তিনি শূন্য রানে বিদায় করেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাইকে।
দুই ওভারে মুস্তাফিজের উইকেট তখন তিনটি। ৩৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে আফগানিস্তান।
দুই অভিজ্ঞ হাশমাতউল্লাহ শাহিদি ও গুলবাদিন নাইব সেখান থেকে চেষ্টা করেন দলকে উদ্ধার করতে। জুটি ভাঙতে দ্বিতীয় স্পেলে ডাক পড়ে তাসকিনের। অধিনায়কের আশা পূরণ করেন তিনি শর্ট বলে নাইবকে ফিরিয়ে।
৭১ রানে ৫ উইকেট হারানো আফগানদের হয়ে দারুণ লড়াইয়ে শতরানের জুটি গড়ে তোলেন শাহিদি ও মোহাম্মদ নাবি।
এবার জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ। তার স্লোয়ার ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে আনেন ৫২ রান করা শাহিদি।
আট ওভারে চার উইকেট হয়ে যায় মুস্তাফিজের।
ওয়ানডেতে এক ম্যাচে চার উইকেট নিলেন তিনি ষষ্ঠবার। আরও পাঁচবার পাঁচ উইকেট তো আছেই, বাংলাদেশের রেকর্ড যা।
দলের জন্য তো বটেই, তার নিজের জন্যও এই পারফরম্যান্স ছিল জরুরি। একসময় যাকে ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ানডে দল ভাবাই যেত না, তার জায়গাই নড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। এই ম্যাচের আগে সবশেষ ১০ ওয়ানডেতে তিনি কেবল ৭টি উইকেট নিতে পারেন ৭০.২৮ গড়ে, ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি রান দিয়ে।
অনেকেরই হয়তো মনে নেই, বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে একাদশেই রাখা হয়নি তাকে। শেষ ম্যাচের একাদশে ফিরে দুটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন
দলের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য নিজেকে জানান দেওয়ার প্রয়োজন তার ছিল। সেটা তিনি করে দেখালেন।
যদিও তার শেষটা প্রত্যাশামতো হয়নি। আট ওভারে যখন চার উইকেট হয়ে যায়, তার কাছ থকে পাঁচ উইকেট, এমনকি ছয় উইকেটের প্রত্যাশাও তো করা যায়। শেষের ওভারগুলোয় তো তাকে বিশেষজ্ঞই মনে করা হয়। কিন্তু এ দিন ছিল উল্টো। শেষ দুই ওভারে ২২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন তিনি।
ওই সময়টায় দলের ত্রাতা হয়ে আসেন তাসকিন। মোহাম্মাদ নাবি তখন দুর্দান্ত খেলছেন। তিনি ক্রিজে থাকলে আড়াইশ রান করাও অসম্ভব ছিল না আফগানিস্তানের জন্য। ৮৪ রান করা ব্যাটসম্যানকে শর্ট বলে থামান তাসকিন। পরের বলেই গতিময় ফুল লেংথ ডেলিভারিতে তিনি বোল্ড করে দেন আল্লাহ মোহাম্মাদ গাজানফারকে।
ওয়ানডেতে এই নিয়ে পঞ্চমবার এক ম্যাচে চার উইকেট নিলেন তাসকিন। তৃতীয়বার পাঁচ উইকেট হলো না ফারুকি রিভিউয়ে রক্ষা পাওয়ায়।
ওয়ানডেতে তিনি দারুণ ফর্মেই ছিলেন। সবশেষ সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আট উইকেট শিকার করে তিনি ছিলেন সিরিজের সফলতম বোলার। সেই ধারাবাহিতা ধরে রাখলেন এখানেও।
তাসকিন-মুস্তাফিজের রেকর্ডের দিনটি জয়ের হাসিতে পরিণত করার দায়িত্ব এখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।