সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশ দল হাতছাড়া করার ব্যাপারটি মানতেই পারছেন না বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান।
Published : 25 Jan 2025, 05:36 PM
“আমার আসলে কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না…”, বাংলাদেশের হারের প্রতিক্রিয়ায় হাবিবুল বাশার শুরুটাই করলেন এভাবে। তার সেই তীব্র হতাশা পরে আরও ফুটে উঠল প্রবলভাবে। সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার এমন সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশ দল এভাবে হারাল, এটা মানতেই পারছেন না বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ জয়ে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে জিতলেই এই বছর ভারতের অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে পৌঁছে যেত নিগার সুলতানার দল। কিন্তু মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটিতেই বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরে তারা ম্যাচ হেরে যান ৮ উইকেটে।
স্বাগতিক ভারত ও আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপের অন্য শীর্ষ পাঁচ দল, মোট ছয় দল সরাসরি খেলবে এই বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি জিততে পারলে শ্রীলঙ্কাকে টপকে পাঁচে থেকে বিশ্বকাপে যেতে পারত বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা নেমে যেত ছয়ে। বাংলাদেশের পরাজয়ে লঙ্কানরা আছে পাঁচেই, নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে গেছে ছয়ে থেকে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হাবিবুল বললেন, তার হৃদয়ের দহন তীব্রতর হয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার অবস্থান দেখে।
“সত্যি বলতে, আমি খুবই হতাশ। আমাদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তবে একটা বড় সুযোগ ছিল সরাসরি খেলার। না পারায় আমি ভীষণ হতাশ।”
“আপনি যদি পয়েন্ট তালিকায় তাকান, শ্রীলঙ্কার জায়গায় তো অন্তত আমরা থাকতে পারতাম। আজকে জিতলে আমরা ওদের ওপরে থেকেই কোয়ালিফাই করতে পারতাম।”
বিশ্বকাপ খেলতে হলে বাংলাদেশকে এখন উতরাতে হবে বাছাইপর্ব। অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে বিশ্বকাপের আগে ভারতেই হবে বাছাই। ছয় দলের বাছাই থেকে মূল টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেবে দুটি দল। বাংলাদেশকে সেখানে লড়বে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, আয়াল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে।
বাছাই খেলার কথা ভাবতেই হাবিবুলের আক্ষেপ বেড়ে যাচ্ছে আরও।
“বাছাই খুব সহজ হবে না। পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো তো কঠিন হবেই, আয়ারল্যান্ড-স্কটল্যান্ডও ভালো দল। এজন্যই বড় আফসোস হচ্ছে, দারুণ সুযোগ পেয়েছিলাম এটা এড়ানোর, আমরা হাতছাড়া করলাম।”
বরাবরই বাংলাদেশ দলের যেটি দুর্বলতা, সেটি আরও একবার এই সিরিজে ডুবিয়েছে দলকে। ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়েছে তিন ম্যাচেই। একটিতেও দুইশ ছুঁতে পারেনি দল। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৮৪ রানের পুঁজি নিয়েও বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে ৬০ রানের জয় ধরা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ ম্যাচে স্রেফ ১১৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে অপমৃত্যু হয়েছে সব সম্ভাবনার।
দেশের সফলতম ব্যাটার ফারজানা হক ও তার উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী অভিজ্ঞ মুর্শিদা খাতুন ব্যর্থ তিন ম্যাচেই। সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে থাকা শারমিন আক্তার ভালো শুরু করেছেন তিন ম্যাচেই, কিন্তু কোনো ফিফটি করতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচের ফিফটি ছাড়া অধিনায়ক নিগার ভালো করতে পারেননি অন্য দুই ম্যাচে। সোবহানা মোস্তারি ও স্বর্ণা আক্তারও কিছু ঝলক দেখিয়ে আউট হয়ে গেছেন। অভিজ্ঞ ফাহিমা খাতুনের ব্যাটে রান হারিয়ে গেছে তো অনেক দিন ধরেই।
নারী ক্রিকেটে পারিশ্রমিক কাঠামো আরও ভালো করা ও অন্যান্য বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা গত কিছুদিনে বেড়েছে বেশ। এখনও সবকিছু আদর্শ নয় অবশ্যই, তবে আগের তুলনায় নারী ক্রিকেটে মনোযোগ ও গুরুত্ব বাড়তি দেওয়া হচ্ছে কিছু দিন ধরেই। কিন্তু পারফরম্যান্সে সেটির প্রতিফলন না পড়ায় হতাশ নারী বিভাগের প্রধান।
“ওদেরকে যতটা সম্ভব সুরক্ষা দেওয়া, যত বেশি সম্ভব পাশে থাকা, সবই তো করা হচ্ছে। অনেক কিছু চেষ্টা করা হচ্ছে বোর্ড থেকে। ওদের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেওয়া, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা, যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি। এখন ওদের দায়িত্ব এসবের প্রতিদান দেওয়ার। ওরা সুযোগগুলো ব্যবহার করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ভিন্ন বিকল্প ভাবতে হবে।”
চলতি বিপিএল শেষে উইমেন’স বিপিএল আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে বিসিবি। তবে সেখান থেকে দ্রুত উন্নতির সুযোগ খুব একটা দেখেন না হাবিবুল। জাতীয় দলের প্রধান কোচ হাশান তিলাকারাত্নে বা অন্য কোচদের দিকেও আঙুল তুলতে চান না তিনি। ছেলেদের দলের সাবেক এই অধিনায়ক বরং বললেন, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মানসিকতা বদলাতে হবে।
“আমার যেটা মনে হয়, উইমেন’স বিপিএলে স্কিলের উন্নতি হয়তো খুব বেশি হবে না। এই টুর্নামেন্ট করতে পারলে আরও অনেক বেশি মেয়ে ক্রিকেটে আগ্রহী হবে। ভালো ক্রিকেটার উঠে আসবে, প্রতিযোগিতা বাড়বে। এটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। তবে এখন যারা দলে খেলছে, তাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।”
“আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হলো, দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা বদলাতে হবে। অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের মতে দলগুলি অবশ্যই অনেক শক্তিশালী।। তবে আমরা যদি আগেই মনে করি ওদের সঙ্গে পারব না, তাহলে উন্নতি আর হবে না। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। কোচদের নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে মানসিকতার বদল জরুরি।”