জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তান সিরিজ
সেদিকউল্লাহ আতালের সেঞ্চুরি ও আব্দুল মালিকের ফিফটিতে ২৮৬ রানের পুঁজি গড়ে স্বাগতিকদের ২৩২ রানে হারিয়েছে আফগানরা।
Published : 19 Dec 2024, 08:04 PM
ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নেমে চমৎকার সেঞ্চুরি উপহার দিলেন সেদিকউল্লাহ আতাল। তাকে দারুণ সঙ্গে দেওয়া আব্দুল মালিক সম্ভাবনা জাগালেও পারলেন না তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া নিতে। দুই ওপেনারের নৈপুণ্যে যে পুঁজি গড়ল আফগানিস্তান, সেটার ধারেকাছেও যেতে পারল না জিম্বাবুয়ে। তাদেরকে স্রেফ ৫৪ রানে গুঁড়িয়ে রেকর্ড গড়া জয় তুলে নিল সফরকারীরা।
হারারেতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানদের জয় ২৩২ রানে। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথম দুইশ রানের ব্যবধানে জিতল তারা। আগের রেকর্ড ছিল গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭৭ রানের জয়।
প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা সেদিকউল্লাহ ৪ ছক্কা ও ৮ চারে ১২৮ বলে খেলেন ১০৪ রানের ইনিংস। ১০১ বলে ৮৪ রানে থামা মালিক ১ ছক্কার সঙ্গে মারেন ১১ চার। তাদের দুইজনের ১৯১ রানের উদ্বোধনী জুটির সুবাদে ২৮৬ রানের পুঁজি গড়ে আফগানিস্তান।
রান তাড়ায় আফগান বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। চার বোলার ভাগ করে নেন প্রতিপক্ষের সব উইকেট। তিনটি করে শিকার ধরেন এএম গাজানফার ও নাভিদ জাদরান। দুটি প্রাপ্তি ফাজালহাক ফারুকির, একটি আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের।
এদিন বোলিংই করতে হয়নি আফগানিস্তানের তারকা লেগ স্পিনার রাশিদ খান ও অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নাবির।
এই ৫৪ রান ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে চতুর্থ সর্বনিম্ন। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারারেতে ৩৫ রানে অলআউট তাদের সর্বনিম্ন।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে কোনো দলের এটিই সর্বনিম্ন। এনিয়ে দুইবার ৫৪ রানে জিম্বাবুয়েকে অলআউট করল তারা, প্রথমবার ২০১৭ সালে।
এই জয়ে তিন ওয়ানডের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল আফগানিস্তান। দুই দলের প্রথম ওয়ানডে ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সফরকারীদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শক্ত ভিত গড়ে দেন সেদিকউল্লাহ ও মালিক। দেখেশুনে খেলে দলের রান বাড়াতে থাকেন দুইজন। ৩৫ রানে জীবন পাওয়া সেদিকউল্লাহ ৮১ বলে করেন ফিফটি। ট্রেভর গুয়ান্ডাকে চার মেরে ৬৯ বলে পঞ্চাশের ঠিকানায় পা রেখেই পরের বলে ছক্কায় ওড়ান মালিক।
ফিফটি করে দুজনেই ছুটছিলেন সেঞ্চুরিতে চোখ রেখে। কিন্তু ৩৫তম ওভারে তাদের জুটি ভেঙে দেন নিউম্যান নিয়ামহুরি। তার স্লোয়ারে ভাঙে মালিকের স্টাম্প। ওমারজাই ও রেহমাত শাহ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।
মালিকের মতো আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়নি সেদিকউল্লাহকে। রিচার্ড এনগারাভাকে ছক্কায় উড়িয়ে ১২৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। পরের ওভারেই অবশ্য বাজে তার বিদায় ঘন্টা, নিয়ামহুরির বলে ডিপ থার্ডম্যানে ধরা আফগান ওপেনার।
৪টি চারে ২৯ রান করে অপরাজি থাকেন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ শাহিদি। অতিরিক্ত থেকে ৪০ রান দেয় জিম্বাবুয়ে, যেখানে ওয়াইডই ২৪টি।
ব্যাটিং নেমে দুঃস্বপ্নের মতো শুরু করে স্বাগতিকরা। ১১ রানে হারিয়ে ফেলে তারা প্রথম ৪ ব্যাটসম্যানকে। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। গুটিয়ে যায় পঞ্চাশ পেরুতেই। তাদের ইনিংসে স্রেফ দুইজন যেতে পারেন দুই অঙ্কে।
ষষ্ঠ বলে ইংলিশ ক্রিকেটার টম ও স্যাম কারানের ভাই বেন কারানের রান আউট দিয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ে ধসের শুরু। ফারুকি টিকতে দেননি টাডিওয়ানাশে মারুমানি ও অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে। মাঝে ওমারজাই বিদায় করেন ডিওন মায়ার্সকে।
ভীষণ চাপে পড়া দলের হাল ধরার চেষ্টায় ব্যর্থ হন অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস। তার বিদায়ের পর কয়েক ওভারের মধ্যে শেষ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ১৯ রান করে অপরাজিত থেকে দলের অসহায়ক আত্মসমর্পণ দেখেন সিকান্দার রাজা।
দুই দলের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে আগামী শনিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (সেদিকউল্লাহ ১০৪, মালিক ৮৪, ওমারজাই ৫, রেহমাত ১, শাহিদি ২৯*, নাবি ১৮, ইকরাম ৫; এনগারাভা ১০-১-৪৯-১, গুয়ান্ডা ১০-২-৭০-২, নিয়ামহুরি ১০-৫৩-৩, মাপোসা ১.৪-০-১৪-০, বেনেট ১.২-০-৭-০, উইলিয়ামস ৭-১-৩৫-০, রাজা ১০-০-৪২-০)
জিম্বাবুয়ে: ১৭.৫ ওভারে ৫৪ (কারান ০, মারুমানি ৩, মায়ার্স ১, আরভিন ৪, উইলিয়ামস ১৬, রাজা ১৯*, বেনেট ০, নিয়ামহুরি ১, এনগারাভা ৮, গুয়ান্ডা ০, মাপোসা ০; ফারুকি ৬-২-১৫-২, ওমারজাই ৫-০-১৭-১, গাজানফার ৩.৫-২-৯-৩, নাভিদ ৩-১-১৩-৩)
ফল: আফগানিস্তান ২৩২ রান জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সেদিকউল্লাহ আতাল
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে আফগানিস্তান