Published : 21 May 2024, 01:09 PM
লাসিথ মালিঙ্গার মতো একজন পেসার পেলেই বর্তে যায় যে কোনো দল। শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ দলে আছেন সেখানে এরকম দুইজন পেসার- নুয়ান থুশারা ও মাথিশা পাথিরানা। মালিঙ্গার মতোই স্লিঙ্গিং অ্যাকশন ও একই ঘরানার বোলার বলে বেশ আগে থেকেই এই দুজনের পরিচয় ‘বেবি মালিঙ্গা।’ এই দুই পেসারকে নিয়ে শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণকে এখন বিশ্বের সেরা বলে দাবি করলেন লাসিথ মালিঙ্গা।
এই দুই পেসারকেই খুব কাছ থেকে দেখেছেন মালিঙ্গা। আইপিএলে এবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলিং কোচ হিসেবে ২৯ বছর বয়সী থুশারার সঙ্গে লম্বা সময় কাজ করেছেন তিনি। ২১ বছর বয়সী পাথিরানার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন নানা সময়েই।
দুই পেসারের বোলিংয়ে স্কিল অনেক কিছুই আছে। তবে নিজে যেমন ছিলেন ইয়র্কার বিশেষজ্ঞ, দুই উত্তরসূরীর এই স্কিলই বেশি নজর কেড়েছে বলে মালিঙ্গা জানালেন ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে।
“আপনাকে বোঝাতে পারব না, এটা কতটা খুশি করেছে আমাকে। টি-টোয়েন্টিতে সবসময়ই ইয়র্কার নিয়ে কথা হয়। কারণ ছক্কা থামাতে পারে এই ডেলিভারি। এরকম ইয়র্কার করার মতো দুজন পেসার একই দলে একই টুর্নামেন্টে খেলবে? এটা স্রেফ খ্যাপাটে, পুরোপুরিই পাগলাটে ব্যাপার।”
“প্রথমবার আমি দেখছি, কোনো দেশে সম্পদের গভীরতা এতটা। আমার মনে হয়, (শ্রীলঙ্কার) বোলিং লাইন-আপ এখন বিশ্বের সেরা।”
দুই উত্তরসূরীর মধ্যে থুশারার সঙ্গে নিজের মিল একটু বেশিই খুঁজে পান মালিঙ্গা।
“সে (থুসারা) নতুন বলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে ঢোকায়, ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য চমৎকারভাবে বাইরে নিয়ে যায়। তার স্লোয়ার বলও দারুণ, যদিও সেটি আমার মতো এতটা হুট করে নিচু হয়ে যায় না, তার পরও বেশ ভালো।”
“পাশাপাশি তার ইয়র্কারও ভালো। অনুশীলনে এখন ওয়াইড ইয়র্কার, সোজা ইয়র্কারে তার নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালো।”
তবে অনভিজ্ঞতার কারণে ম্যাচে মাঠ সাজানোয় এখনো থুশারার ঘাটতি দেখছেন মালিঙ্গা। এখানে তিনি বড় ভূমিকা রাখতে বললেন অধিনায়ককে।
“সে ম্যাচ জেতানোর মতো বোলার। তবে ম্যাচে গিয়ে সে কখনও কখনও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে যে মাঠ কীভাবে সাজাবে। এই পর্যায়ে সে যথেষ্ট ম্যাচ খেলেনি বলে এটা হতে পারে। মাত্র কিছু আন্তজার্তিক ম্যাচ সে খেলেছে।”
“এই কারণে, দল যখন তাকে নিয়ে পরিকল্পনা করছে, অধিনায়ককে একদম তার পাশে থাকতে হবে। অধিনায়কদের জানতে হবে, কোন ধরনের ডেলিভারি সে করতে যাচ্ছে, তাহলে সেই অনুযায়ী মাঠ সাজাতে পারবে সে। কোচরা যদি তাকে নির্দিষ্ট একটি ধরনে বল করতে বলে, অধিনায়কদের সহায়তা না পেলে তা কাজে লাগে না।”
থুসারার আর্ম অ্যাকশন ও কবজির অবস্থান তুলামূলকভাবে একটু উঁচুতে থাকে বলে নতুন বল সুইং করাতে পারেন তিনি। পাথিরানার বল ডেলিভারি করেন এমনকি মালিঙ্গার চেয়েও নিচু জায়গা থেকে। এজন্য মাঝের ও শেষের ওভারগুলোয় তিনি বেশি কার্যকর।
তরুণ এই পেসারকে সেভাবেই কাজে লাগাতে পরামর্শ দিলেন মালিঙ্গা। তার মতে, মাঝের ওভারগুলোয় লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার সঙ্গে পাথিরানার জুটি হয়ে উঠতে পারে দারুণ কার্যকর।
“কোনো ভয় ছাড়াই মাথিশাকে শেষের ওভারগুলোয় কাজে লাগাতে পারেন। এমনকি মাঝের ওভারগুলোয় ব্যাটসম্যানকে নড়বড়ে করে দিতে চাইলে তার শর্ট বল কাজে লাগবে। কিংবা ওই সময়টায় এক প্রান্ত স্পিনারদের চালিয়ে আরেক প্রান্তে দ্রুতগতির ইয়র্কার করতে চাইলেও তাকে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। নতুন বলে সে খুব একটা বল করে না। মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট নিতে তাকে কাজে লাগানো যায়।”
“একপাশে যদি ওয়ানিন্দু (হাসারাঙ্গা) বল করতে থাকে, আরেক প্রান্তে মাথিসা, দুজনই উইকেট শিকারি বোলার। ওয়ানিন্দু একটা পাশ আটকে রাখতে পারলে ব্যাটারদের মাথিশার বলে শট খেলার চেষ্টা করতেই হবে। তখনই উইকেট পড়ার বড় সুযোগ থাকে।”
থুসারার চেয়ে পাথিরানার গতি অনেক বেশি। ছন্দে থাকলেন ১৫০ কিলোমিটারও স্পর্শ করেন তিনি। যদিও মাঝেমধ্যে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভুগতে দেখা যায় এই দুই পেসারকেই।
পাথিরানার স্কিলের কথা বললেন মালিঙ্গাও। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ এই পেসারের ভয়ডরহীন মানসিকতায়।
“তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো গতি ও সাহস। যদিও কিছুটা চোটপ্রবণ সে এবং তাতে গতি কিছুটা কমে গেছে। আমরা দেখব সে কতটা সেরে উঠতে পারে।”
“মাথিশার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি দেখি, তা হলো সে বিশালহৃদয় বোলার। ম্যাচে খুব ইতিবাচক থাকে। এসব ব্যাপার কাউকে শেখানো যায় না। সহজাতভাবেই এসব আসে। এমনকি আইপিএলে তার প্রথম মৌসুমেও সে একদম ভয়ডরহীন ছিল। যদি তাকে বলুন যে এই পরিস্থিতিতে এটা করতে হবে, সে তা করে দেবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্য তার আছে, নিজের চিন্তাভাবনায় সে স্বচ্ছ।”
মালিঙ্গার মতো স্লিঙ্গিং অ্যাকশনে এবং অনেক নিচু থেকে বল ডেলিভারি করার মতো বোলার লঙ্কান ক্রিকেটে উঠে আসছে আরও। পাকিস্তানের জামান খান ও বিশ্ব ক্রিকেটে আরও কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে একই ঘরানার অ্যাকশনে।
মালিঙ্গা তাতে বেশ খুশিই। প্রয়োজনে সহায়তা করার ঘোষণাও দিয়ে রাখলেন তিনি।
“অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের একজনকে দেখেছি আমার মতো অ্যাকশনে বোলিং করছে। জাফনার তরুণ এক পেসারকেও দেখেছি। আমার মতো অ্যাকশনের পেসার এত উঠে আসছে যে, আমাকে এটা নিয়ে অনেকে কথা শোনাচ্ছে এখন।”
“তবে তাদের যদি পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলার প্রতিভা থাকে, আমি কী করতে পারি! তারা উঠে এলে আমি খুবই খুশি। আমার এই শিল্পের সবকিছু তাদেরকে শেখাব আমি।”