বড় ভাই টম কারান ইংল্যান্ডের হয়ে জিতেছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ছোট ভাই স্যাম কারান ইংল্যান্ডের হয়ে জিতেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, মেজো ভাই বেন কারান জিম্বাবুয়েকে বেছে নিয়ে এখন আছেন বাংলাদেশ সফরে।
Published : 26 Apr 2025, 08:27 PM
ড্রেসিং রুম থেকে এক ক্রিকেটারকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে আসছিলেন জিম্বাবুয়ের মিডিয়া ম্যানেজার ডার্লিংটন মাজোঙ্গা। পরিচিত বাংলাদেশি সংবাদকর্মীকে দেখে হাসিমুখে বললেন, “তোমাদের মিডিয়ার অন্তত ৩০ জনের অনুরোধ পেয়েছি ওর ইন্টারভিউয়ের জন্য। এই নাও, আজকে প্রেস কনফারেন্সেই ওকে নিয়ে যাচ্ছি…।”
ওই ক্রিকেটার এখনও পর্যন্ত আন্তজার্তিক ক্রিকেটে নবীন। চারটি টেস্ট খেলেছেন, ছয়টি ওয়ানডে। অসাধারণ কিছু করেননি। টেস্টে ফিফটি একটি, ওয়ানডেতে একটি সেঞ্চুরি। এই তো। তার পরও তাকে নিয়ে তুমুল আগ্রহের কারণ, তার নামের শেষাংশ। বেঞ্জামিন জ্যাক কারান। সংক্ষেপে বেন কারান।
নাম শুনেই পরিচয়টা বোঝা যায়। তার বড় ভাই টম কারান, ছোট ভাই স্যাম কারান। তাদের বাবা জিম্বাবুয়ের সাবেক অলরাউন্ডার কেভিন কারান।
ছোট ভাই স্যাম কারানই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বিখ্যাত। ইংল্যান্ডের হয়ে ২৪ টেস্ট, ৩৫ ওয়ানডে ও ৫৮ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন, সেই বিশ্বকাপে ম্যান অব দা ফাইনাল ও ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট হয়েছেন। আইপিএলে চোখধাঁধানো অঙ্কের পারিশ্রমিক পেয়েছেন। বড় ভাই টম কারান খেলেছেন ২ টেস্ট, ২৮ ওয়ানডে ও ৩০ টি-টোয়েন্টি। ইংল্যান্ডে একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের স্মরণীয় কীর্তি অংশ ছিলেন তিনি।
৩০ বছর বয়সী টম ও ২৬ বছর বয়সী স্যাম বাবার মতোই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ব্যতিক্রম ২৮ বছর বয়সী বেন। তিনি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, যিনি টুকটাক অফ স্পিন করেন।
দুই ভাইয়ের মতো তারও ইচ্ছা ছিল ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার। নর্থ্যাম্পটনশায়ারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট ও অন্যান্য সংস্করণে খেলেছেন। কিন্তু অন্য দুই ভাইয়ের মতো আলো ছড়াতে পারেননি। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার স্বপ্নটা মরে যায়নি। সেই জিইয়ে থাকা স্বপ্নের তাড়নায় পাড়ি জমান বাবার দেশ জিম্বাবুয়েতে।
সেখানে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পথ ধরে গত ডিসেম্বরে আসে স্বপ্ন পূরণের মুহূর্ত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে কারান পরিবারের আরেক সদস্য পা রাখেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এর কদিন পর আরও গর্বের একটি উপলক্ষ্য। বেন কারান এবার টেস্ট ক্রিকেটার!
অন্য দুই ভাই ‘ইংলিশ’ ক্রিকেটার হলেও তিনি ‘জিম্বাবুইয়ান’ ক্রিকেটার।
বাবা কেভিন কারান জিম্বাবুয়ের হয়ে ১৯৮৭ বিশ্বকাপে খেলেছেন। পরে দেশের কোচও ছিলেন। ক্রিকেটের পথ তাকে নিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে জন্ম বড় ছেলে টমের। পরে কেভিন পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। বেন ও স্যামের জন্ম সেখানেই। এই দুই ভাইয়ের চেহারা ও শারীরিক আকৃতিতে মিলও অনেক।
অভিষেক টেস্টে ফিফটি করেছেন। পরের সাত ইনিংসের ছয়টিতেই দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন। ইনিংস বড় করতে পারেননি। ওয়ানডেতে প্রথম পাঁচ ম্যাচে ভালো কিছু করতে না পারলেও সবশেষ ম্যাচে অপরাজিত ১১৮ রানের ইনিংস খেলে জিতিয়েছেন দলকে।
তার বাবা ও দুই ভাই তুলনামূলক বেশি বিখ্যাত হতে পারেন, তবে পরিবারের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিয়ান বেনই!
সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসেই যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, বেশ ভালো মনে হয়েছে তাকে। তবে লম্বা সময় টিকতে পারেননি।
তবে রান-ইনিংসের এসব হিসাবনিকাশের বাইরে ব্যক্তিগত প্রাপ্তির বোঝাপড়া তার নিজের সঙ্গে। সেখানে তার মনে তৃপ্তির ছায়া।
“আমি বেড়ে উঠেছি জিম্বাবুয়েতে। পরিস্থিতি আমাকে ইংল্যান্ডে বয়ে নিয়েছিল। সেখানে কয়েক বছর খেলেছি। পরে জিম্বাবুয়েতে ফিরেছি খেলতে। এটা দারুণ এক সম্মান ও প্রাপ্তি। এই মুহূর্তে নিজের ক্রিকেট উপভোগ করছি দারুণভাবে।”
জিম্বাবুয়ের হয়ে তার প্রথম বিদেশ সফর এটি। প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পেলেন দেশের বাইরে প্রথম ম্যাচেই। সেই আনন্দ তার আছে। পাশাপাশি আছে পরের টেস্ট ঘিরে মনোযোগ।
“সিলেটে জিততে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত। আমার প্রথম টেস্ট জয় এটি। সিরিজ শুরুর আগে কঠোর পরিশ্রম করার পর এই জয়ের অনুভূতি দারুণ।”
“তবে সিরিজ এখনও শেষ হয়নি। সামনের কদিনে আরেকটি বড় ম্যাচ অপেক্ষায়।”
ম্যাচ নিয়ে তাই ভাইদের সঙ্গে আলোচনাও হবে তার নিশ্চিতভাবেই। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে তিন ভাইকে প্রায়ই থাকতে হয় দুনিয়ার নানা প্রান্তে। তবে যোগাযোগটা তাদের থাকে সার্বক্ষণিক।
“বেশির ভাগ দিনই ওদের সঙ্গে আমার কথা হয়, বিশেষ করে খেলার সময়। নানা কিছু তাদের কাছে জিজ্ঞেস করি। আমাদের পরিবারে আমরা সবাই খুব ঘনিষ্ঠ। শিগগিরই ওদের সঙ্গে দেখা হবে।”
ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে না পারলেও বেনকে নিয়ে তার দুই ভাইয়ের গর্বের কমতি নেই।
“অবশ্যই, নিশ্চিতভাবেই (আমাকে নিয়ে ওরা গর্ব অনুভব করে)। এটা এমন একটা অর্জন, যা আমি ও আমরা লালন করি এবং অনেক বছর পরে পেছন ফিরে তাকাব অনেক অনুরাগ নিয়ে। আপাতত এখন বর্তমানে থাকতে চাই, জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলা উপভোগ করতে চাই ও সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরতে চাই।”