টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের দিনটি রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে রাঙালেন আবরার আহমেদ।
Published : 09 Dec 2022, 07:18 PM
ঝুলিয়ে দেওয়া বলটি খেলতে সামনে পা বাড়িয়ে ব্যাট পেতে দিলেন জ্যাক ক্রলি। বল পিচ করে তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক ছোবল দিল স্টাম্পে। ধারাভাষ্যে ওয়াকার ইউনিস বললেন, ‘ক্যারম বল।’ কিংবা হতে পারে গুগলি। ডেলিভারি যেটিই হোক, কী যায়-আসে! আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ওভারে উইকেট নিয়ে আবরার আহমেদ তখন ছুটছেন, তাকে আর পায় কে! সেই যে ছোটা শুরু হলো, আর থামাথামি নেই। একে একে ইংল্যান্ডের প্রথম ৭ উইকেটই নিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন পাকিস্তানের লেগ স্পিনার।
একটা সময় মনে হচ্ছিল, ১০ উইকেটের সবকটি নিয়েই হয়তো থামবেন তিনি। বাগড়া দিলেন আরেক লেগ স্পিনার জাহিদ মাহমুদ। ইংল্যান্ডের শেষ তিন উইকেট নিলেন তিনি। তবে এর আগেই যা করলেন আবরার, ইতিহাসে নাম লেখা হয়ে গেল তাতেই। পাকিস্তানের প্রথম স্পিনার হিসেবে অভিষেকে ৭ উইকেট নিলেন ২৪ বছর বয়সী লেগ স্পিনার।
আগের টেস্টে রান উৎসব ও শেষের নাটকীয়তার পর মুলতান টেস্টের প্রথম দিনে মঞ্চায়ন হলো রোমাঞ্চকর। ইংল্যান্ড যথারীতি তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ধারা ধরে রাখে। আবরারের আগ্রাসী বোলিংয়ে লড়াই জমে ওঠে দারুণ। শুক্রবার প্রথম দিনে ইংল্যান্ড অলআউট ২৮১ রানে। যথারীতি ওভারপ্রতি রান এসেছে সাড়ে ৫ করে।
পাকিস্তান দিন শেষ করে ২ উইকেটে ১০৭ রান করে।
আবরারের শিকার ১১৪ রানে ৭ উইকেট। পাকিস্তানের হয়ে অভিষিক্ত স্পিনারদের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড আগে ছিল বিলাল আসিফের। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৬ রানে এই অফ স্পিনার নেন ৬ উইকেট।
পাকিস্তানি পেসারদের মধ্যে অভিষেকে ৭ উইকেট আছে ১৯৬৯ সালে মোহাম্মদ নাজির (৭/৯৯) ও ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদ জাহিদের (৭/৬৬)।
আগের টেস্টে নিষ্প্রাণ উইকেটের জন্য তুমুল সমালোচনার পর এই টেস্টের উইকেট দেখা যায় প্রাণের ছোঁয়া। পেসারদের জন্য সহায়তা কিছুটা তো ছিলই, স্পিনাররাও টার্ন পেয়েছেন বেশ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড শুরুটা করে ভালোই। পেস বোলিংয়ে আট ওভারের পর নবম ওভারে আবরারের হাতে বল তুলে দেন পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম। পঞ্চম বলেই ক্রলিকে বোল্ড করা সেই ডেলিভারি।
ইংল্যান্ড অবশ্য ভড়কে যায়নি। এই ইংল্যান্ড ভড়কে যাওয়ার দলও নয়। অলিভার পোপ তিনে নেমে প্রথম বলেই রিভার্স সুইপ করে বল পাঠান বাউন্ডারিতে। আরেক প্রান্তে বেন ডাকেট ততক্ষণে থিতু হয়েই গেছেন। দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে।
৪০ বলে ফিফটি পূর্ণ করে ডাকেট। পরের দুই বলেই ছক্কা ও চার মারেন জাহিদ মাহমুদকে।
৬১ বলে ৭৯ রানের এই জুটি থামে ডাকেটের বিদায়ে। আবরারকে সুইপ করতে গিয়ে আউট হন তিনি ৪৯ বলে ৬৩ রান করে।
স্পিনে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান বলে বিবেচিত জো রুটকে দারুণ টার্নিং এক ডেলিভারিতে থামান আবরার। এরপর রিভার্স সুইপ খেলে পোপ (৬১ বলে ৬০) উইকেট উপহার দেন আবরারকেই।
এই দুই উইকেটের রেশ থাকতেই আরেকটি উইকেট। উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন হ্যারি ব্রুক। আবরার পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট।
ইংল্যান্ড আরেকটি কার্যকর জুটি পায় এরপর। বেন স্টোকস ও উইল জ্যাকস যথারীতি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। এখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ান আবরার। দারুণ এক গুগলিতে তিনি বোল্ড করেন স্টোকসকে (৩০)। নিজের পরের ওভারে জ্যাকসকেও থামান তিনি।
টানা ৭ উইকেট নিয়ে ‘পারফেক্ট টেন’-এর স্বপ্ন তখন তিনি দেখতেই পারেন! কিন্তু জাহিদ এক ওভারেই উইকেট নেন দুটি।
শেষ জুটিতে জিমি অ্যান্ডারসনকে নিয়ে ৪ ওভারে ৩৬ রানের মূল্যবান জুটি গড়েন মার্ক উড। জাহিদকে রিভার্স সুইপ খেলে অ্যান্ডারসনের বিদায়ে শেষ হয় ইনিংস। ৮ চারে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন উড।
পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নেমেই জোর ধাক্কা খায়। আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান ইমাম-উল-হককে শূন্য রানেই বিদায় করেন অ্যান্ডারসন।
বাবর আজম অবশ্য উইকেটে গিয়েই দারুণ সব শট খেলতে থাকেন। তবে আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক থেমে যান ১৪ রানে।
তৃতীয় উইকেটে বাবর ও সৌদ শাকিলের ব্যাটে দিনটা স্বস্তিতেই শেষ করে পাকিস্তান। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৫৬। বাবর দিন শেষ করে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬১ রান নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫১.৪ ওভারে ২৮১ (ক্রলি ১৯, ডাকেট ৬৩, পোপ ৬০, রুট ৮, ব্রুক ৯, স্টোকস ৩০, জ্যাকস ৩১, রবিনসন ৫, উড ৩৬*, লিচ ০, অ্যান্ডারসন ৭; ফাহিম ৪-১-১৬-০, আলি ৬-১-২৯-০, আবরার ২২-১-১১৪-৭, জাহিদ ৭.৪-০-৬৩-৩, নাওয়াজ ১২-০-৪৬-০)।
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২৮ ওভারে ১০৭/২ (শফিক ১৪, ইমাম ০, বাবর ৬১*, শাকিল ৩২*; অ্যান্ডারসন ২-০-৪-১, লিচ ১২-৩-৪৪-১, উড ৪-০-২০-০, রুট ৬-১-২১-০, জ্যাকস ৪-০-১৮-০)।