সুপার ওভারে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেওয়ার ডাচ নায়ক লোগান ফন বিক বললেন, ‘স্পেশাল’ কিছু করতে তারা ছিলেন প্রত্যয়ী।
Published : 27 Jun 2023, 10:38 AM
তেজা নিদামানুরুর চোখের জল যেন বাধ মানছিল না। সতীর্থদের জড়িয়ে কাঁদছিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান। বড় সুখের সে কান্না! কেউ কেউ এসে তাকে বলছিলেন, “এই মুহূর্তটির জন্যই তো আমরা খেলি…।” লোগান ফন বিককে তখন খুঁজে পাওয়াই ভার। সুপার ওভারের নায়ক বারবার হারিয়ে যাচ্ছিলেন সতীর্থদের আলিঙ্গনে। সুপার ওভারে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেওয়ার পর নেদারল্যান্ডসের এই অলরাউন্ডার বললেন, ‘স্পেশাল’ কিছু করতে তারা ছিলেন দারুণ প্রত্যয়ী।
এত দ্রুত প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ সবার আসে না। লোগান ফন বিক সেই সুযোগ পেলেন এবং কী অসাধারণভাবেই না কাজে লাগালেন! মূল ম্যাচে দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে গিয়েও পারলেন না একটুর জন্য। কিন্তু একটু পরই মেলে ধরলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা সুপার ওভার পারফরম্যান্স। তার অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে নেদারল্যান্ডসের জয়টাও হয়ে রইল আরও স্মরণীয়।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নেদারল্যান্ডসের এই ম্যাচ লোকে মনে রাখবে হয়তো শেষটুকুর জন্য। তবে মূল ম্যাচেও উত্তেজনা কম ছিল না।
নিকোলাস পুরানের ৬৫ বলে ১০৪ রানের অপরাজিত ইনিংসের সঙ্গে ব্র্যান্ডন কিংয়ের ৭৬, জনসন চার্লসের ৫৪ ও কিমো পলের ২৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে ক্যারিবিয়ানরা তোলে ৩৭৪ রানের পাহাড়। এত রান তাড়া করা তো বহুদূর, ওয়ানডেতে আগে কখনও ৩১৫ রানের বেশি করতেই পারেনি নেদারল্যান্ডস। প্রথাগত বড় দলগুলির বিপক্ষে আগে কখনও ৩০০ রান করতে পারেনি তারা।
সেই দলটিই এবার চমকে দিল প্রবলভাবে। শুরুর চার ব্যাটসম্যানের সবাই ২৫ ছুঁয়েও যেতে পারেননি ৪০ পর্যন্ত। তবে পঞ্চম উইকেট তেজা নিদামানুরু ও স্কট এডওয়ার্ডসের ৯০ বলে ১৪৩ রানেরর জুটিতে তারা ম্যাচে ফেরে দারুণভাবে। ৭৬ বলে ১১১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন নিদামানুরু, অধিনায়ক এডওয়ার্ডস করেন ৪৭ বলে ৬৭। এরপর ফন বিকের পালা।
শেষ ৩ ওভারে ডাচদের যখন প্রয়োজন ৪২ রাস, আটে নামা ফন বিকের ক্যামিও ইনিংস তখন দলকে নিয়ে যায় জয়ের নাগালেন। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ১ রান। কিন্তু সেই বলেই আউট হয়ে যান ফন বিক। ১৪ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলেও তখন তিনি ট্র্যাজেডির নায়ক।
তবে সত্যিকারের নায়ক হয়ে ওঠেন একটু পরই। সুপার ওভারে তার ওপরই ভরসা রাখে নেদারল্যান্ড। জেসন হোল্ডারের মতো অভিজ্ঞ বোলারকে গুঁড়িয়ে তিনটি করে চার ও ছক্কায় তিনি তোলেন ৩০ রান। সুপার ওভারে এত রান আগে কখনোই দেখেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। পরে বল হাতেও ফন বিক দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠেন ক্যারিবিয়ানদের জন্য। স্রেফ ৮ রান দিয়ে তিনি নেন ২ উইকেট।
ম্যাচের পর ফিন বিক যেন আনন্দ প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
“আমি সত্যি জানি না… (কী হয়ে গেল)… এই মুহূর্তে কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারব না। আমরা স্পেশাল কিছু করতে চেয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে খেলছি আমি। এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে যে পরিমাণ ম্যাচ আমরা হেরেছি, এবার জিততে পারা তাই দারুণ সন্তুষ্টির।”
তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিউ জিল্যান্ডে। সেখানে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে বাস্কেটবল খেলেছেন। ২০১০ সালে ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের নিউ জিল্যান্ড দলেও। সেখান থেকে ক্রিকেটের পথ তাকে বয়ে এনেছে নেদারল্যান্ডসে।
এখন এই দলই তার আপন। মূল ম্যাচে শেষ বলে যে ভুল তিনি করেছিলেন, সেটি এ দিনই পুষিয়ে দিতে পেরে ৩২ বছর বয়সী অলরাউন্ডারের কণ্ঠে তৃপ্তির সুর।
“আমি স্রেফ নিজের স্কিলে ভরসা রেখেছি। শেষ বলটি (মূল ম্যাচে) মিড অনে তুলে দিয়ে খুব হতাশ ছিলাম আমি। ভালো লাগছে যে, কিছুটা হলেও প্রায়শ্চিত্ত করতে পেরেছি।”
সেঞ্চুরিয়ান তেজা নিদামানুরু ম্যাচ শেষের অনেক পরও আবেগে ছিলেন আপ্লুত। ফন বিকের পারফরম্যান্সের কথা আলাদা করে বললেন তিনিও।
“দল হিসেবে আমরা এর চেয়ে বেশি কিছু চাইতে পারতাম না। গত ১২ মাস ধরে আমরা প্রচণ্ড কষ্ট করেছি। অনেক কাজ করেছি। আজকের এই মুহূর্তটির জন্য অনেকের অনেক অবদান আছে। লোগান (ফন বিক) শেষ দিকে যা করেছে, অমন ব্যাটিং আর বোলিং স্রেফ অসাধারণ…।”
“সত্যি বলতে আমি জানি না… কীভাবে এখনকার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি। দলের জন্য, ছেলেদের জন্য আমি খুবই খুশি… দলে অবদান রাখতে পেরে খুশি। অসাধারণ অনুভূতি… এসবের জন্যই আমরা খেলি। অরেঞ্জদের জন্য এমন কিছু করতে পেরে, গর্ব নিয়ে করতে ও সবটুকু উজাড় দিয়ে দিতে পেরে আমরা খুশি।”