দলটির সাবেক অধিনায়কের মতে, অ্যাশেজকে প্রদর্শনী সিরিজে পরিণত করছে তার উত্তরসূরিরা।
Published : 22 Jun 2023, 05:17 PM
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে হারের পর ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ কৌশল নিয়ে চলছে চর্চা। সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকেই সমালোচনার তির ছুড়ছেন বেন স্টোকসের দলের দিকে। সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছেন জেফ বয়কটও। ইংলিশ সাবেক অধিনায়কের মতে, অ্যাশেজকে প্রদর্শনী সিরিজে পরিণত করছে তার উত্তরসূরিরা।
ঘরের মাঠে এবারের অ্যাশেজ সিরিজ হার দিয়ে শুরু করেছে ইংল্যান্ড। এজবাস্টনে প্রবল উত্তেজনার ম্যাচটি তারা হেরে গেছে ২ উইকেটে। এরপরই তাদের আক্রমণাত্মক ঘরানার ক্রিকেট নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
ইংলিশ অধিনায়ক স্টোকস যদিও ম্যাচ শেষে বলেন, নিজেদের আগ্রাসী ঘরানা থেকে তারা একটুও পিছু হটবেন না তারা। একই বার্তা দেন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামও। সঙ্গে তিনি বলেন, না জিতলেও দর্শকদের বিনোদন দিতে পেরেই খুশি তারা।
ইংল্যান্ডের এই মনোভাবটাই পছন্দ হয়নি বয়কটের। ইংলিশ এই ব্যাটিং গ্রেটের মতে, ম্যাচ জয়ের চেয়ে বিনোদন দেওয়া এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্টোকস-ম্যাককালামের কাছে।
স্টোকসের নেতৃত্ব ও ম্যাককালামের কোচিংয়ে গত এক বছর ধরে টেস্টে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে আসছে ইংল্যান্ড। নিউ জিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ম্যাককালামের ডাকনাম ‘বাজ’ এর সঙ্গে মিলিয়ে ইংলিশদের নতুন এই ঘরানার ক্রিকেটকে ডাকা হচ্ছে ‘বাজবল’ নামে।
এজবাস্টনে হারের আগে রোমাঞ্চকর ও প্রাণশক্তির এই কৌশলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল সবাই। এক ঝটকায় যেন পাল্টে গেছে পুরো দৃশ্য। এখন বাজবলকেই চড়ানো হচ্ছে শূলে।
মূলত, প্রথম দিনের শেষ বিকেলে আচমকাই ইনিংস ঘোষণা করাকে ইংলিশদের হারের পেছনে বড় কারণ ধরা হচ্ছে। যা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এছাড়া অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে উইকেট উপহার দিয়েছেন বেশ কজন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। ১৩১ টেস্টের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো স্টাম্পড হয়েছেন জো রুট। অনেকেই তাই আঙুল তুলেছেন ইংল্যান্ডের কৌশলে।
দা টেলিগ্রাফে নিজের লেখা কলামে ১০৮ টেস্ট খেলা বয়কটও ছাড় দেননি উত্তরসূরিদের।
“অ্যাশেজকে প্রদর্শনী সিরিজে নামিয়ে আনছে ইংল্যান্ড। তারা বাজবল কৌশলেই রয়ে গেছে এবং মনে হচ্ছে, তাদের কাছে জয়ের চেয়ে বিনোদন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইংল্যান্ডের সমর্থকরা অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে একটা জিনিস বেশি চায়-অ্যাশেজ জিততে।”
“দ্রুত রান করা, প্রচুর চার-ছক্কা মারা দারুণ। এটা চমৎকার ব্যাপার। কিন্তু স্রেফ তখনই, যখন ইংল্যান্ড বড় পুরস্কার থেকে চোখ না সরায়, যেটা হলো অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। যতই বিনোদন দেওয়া হোক না কেন, সিরিজ শেষে অস্ট্রেলিয়া যদি অ্যাশেজ নিয়ে দেশে ফেরে আমাদের খুবই খারাপ লাগবে।”
৮২ বছর বয়সী বয়কটের মতে, জেতার জন্য না খেললে গুরুত্ব হারাতে পারে ঐতিহ্যবাহী এই সিরিজ।
“ইংল্যান্ড যদি জেতার জন্য না খেলে, তাহলে অ্যাশেজের এই টেস্টগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এগুলো কেবলই প্রদর্শনী ম্যাচ… আগে বিনোদন ও পরে জয়ের ব্যাপার এটা নয়। এখানে আগে জয়টাই মূল বিষয়।”
স্টোকস ও ম্যাককালাম দায়িত্ব নেওয়ার আগে ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেট বেশ বাজে সময়ের মধ্যে ছিল। তখন ১৭ টেস্টে কেবল একটি জেতা দলটিকে নিয়েও হয় অনেক আলোচনা-সমালোচনা। এই দুজনের কাঁধে ভর করে বদলে যায় পুরো দল। এজবাস্টন টেস্টের আগে ১৩ ম্যাচের ১১টিই জিতেছিল তারা।
এতদিন স্তুতির জোয়ারে ভাসা স্টোকস ও ম্যাককালাম এখন দেখছেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। বয়কটের মতে, ম্যাচ জেতার চেয়ে প্রশংসা পাওয়া নিয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে এখনকার ইংল্যান্ড দল।
“বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ড দলের মনোভাব যেভাবে পরিবর্তন করেছেন, এর জন্য অনেক প্রশংসা পেয়েছেন। কিন্তু শুধুমাত্র একভাবে খেলা মানে মস্তিষ্কের ব্যবহার করছে না। জয়ের চেয়ে প্রশংসা পাওয়ায় বেশি আগ্রহী হলে আমরা এটাকে ভুলভাবে নিচ্ছি।”