শ্রীলঙ্কা-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনে কামিন্দু মেন্ডিসের রেকর্ডগড়া ইনিংসের সঙ্গে কুসাল মেন্ডিসের চমৎকার সেঞ্চুরিতে বড় পুঁজি পেল শ্রীলঙ্কা।
Published : 27 Sep 2024, 07:12 PM
টেস্টে স্বপ্নময় শুরুর ধারা আরও দীর্ঘায়িত করে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন কামিন্দু মেন্ডিস। তার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে কুসাল মেন্ডিসও ছুঁলেন তিন অঙ্ক। শ্রীলঙ্কা পেল ছয়শ ছাড়ানো পুঁজি। পরে নিউ জিল্যান্ডের ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতে রাখল তারা।
গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৫৮০ রানে পিছিয়ে নিউ জিল্যান্ড৷ শুক্রবার দিনের শেষ ঘণ্টায় ব্যাটিংয়ে নেমে ২২ রানে ২ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
এর আগে কামিন্দু ও কুসালের সেঞ্চুরিতে ৫ উইকেটে ৬০২ রান করে ইনিংস ঘোষণা দেয় লঙ্কানরা।
মাত্র ১৩ ইনিংসের ক্যারিয়ারে পঞ্চম সেঞ্চুরিতে ১৮২ রানে অপরাজিত থাকেন কামিন্দু। কুসালের ব্যাট থেকে আসে হার না মানা ১০৬ রান। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ২০০ রান।
দিনের শেষ সেশনের পানি বিরতির পর রাচিন রাভিন্দ্রার বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কায় ওড়ান কামিন্দু। সঙ্গে সঙ্গে ইনিংস ঘোষণা করেন ধানাঞ্জায়া ডি সিলভা। কারণ ওই ছক্কায়ই দলের ছয়শ রানের পাশাপাশি পূর্ণ হয় কামিন্দুর চোখধাঁধানো ক্যারিয়ারের এক হাজার রান।
টেস্ট ইতিহাসে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের চেয়ে কম ইনিংসে ১ হাজার রানের রেকর্ড আছে আর মাত্র দুজনের। ইংল্যান্ডের হার্বার্ট সাটক্লিফ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার এভারটন উইকস এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন ১২ ইনিংসে।
১৩ ইনিংসে হাজার রান পূর্ণ করে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পাশে বসেন কামিন্দু। গত ৭৫ বছরে তিনিই দ্রুততম এক হাজার রানের মালিক। ছোট্ট ক্যারিয়ারে পাঁচ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৪টি ফিফটিও করেছেন কামিন্দু।
প্রথম দিনের মতো শুক্রবারও শুরুটা ভালোই করেছিল নিউ জিল্যান্ড। দিনের সপ্তম ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ফিরিয়ে দেন গ্লেন ফিলিপস। তিন অঙ্কের আশা জাগিয়ে ৭ চারে ১৮৫ বলে ৮৮ রানে থামেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
এরপর ধানাঞ্জায়াকে নিয়ে জুটি বাঁধেন কামিন্দু। ৭৪ রানের জুটি গড়ে মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগের ওভারে ফিলিপসের তৃতীয় শিকার হন লঙ্কান অধিনায়ক। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৮০ বলে ৪৪ রান করেন ধানাঞ্জায়া।
দিনের বাকি অংশে আর আনন্দের উপলক্ষ পায়নি কিউইরা। মধ্যাহ্ন বিরতির পর স্বপ্নময় পথচলায় আরেকটি শতক পূর্ণ করেন ২৬ ছুঁইছুঁই কামিন্দু। অন্যপ্রান্তে শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন ক্যারিয়ারে মাত্র তৃতীয়বার সাত নম্বরে নামা কুসাল।
দ্বিতীয় সেশনে এজাজ প্যাটেল, ফিলিপসদের হতাশায় ডুবিয়ে ১১৭ রান নেন কামিন্দু ও কুসাল। ১৩৫তম ওভারে এজাজের বলে কামিন্দুকে কট বিহাইন্ড আউট দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে সে দফায় বেঁচে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
চা বিরতির কয়েক ওভার আগে ফিলিপসের টানা তিন বলে দুই বাউন্ডারির মাঝে ছক্কা মারেন কুসাল। ৮৬ বলে পূর্ণ হয় তার ফিফটি।
দিনের শেষ সেশনে ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিং শুরু করেন দুই ব্যাটসম্যান। প্রায় প্রতি ওভারেই আসতে থাকে বাউন্ডারি। ওই সেশনের ৮৮ বলে ৮৫ রান নেন তারা।
পানি বিরতির আগের ওভারে ফিলিপসের বল ছক্কায় উড়িয়ে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান কুসাল। এর পরের ওভারে ছক্কা মেরে দলের ছয়শ, জুটির দুইশ ও নিজের এক হাজার পূর্ণ করেন কামিন্দু।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে এটিই শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ জুটি। সব মিলিয়ে তাদের পঞ্চম সর্বোচ্চ।
সফরকারীদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ফিলিপস।
শেষ ঘণ্টায় ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই টম ল্যাথামের উইকেট হারায় নিউ জিল্যান্ড। পরে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার ডেভন কনওয়ে।
প্রাবাথ জায়াসুরিয়ার বলে কনওয়েকে প্রথমে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার৷ ব্যাটে লেগেছে ইঙ্গিত করে রিভিউ নেন বাঁহাতি ওপেনার। রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটের ভেতরের কানা ছুঁয়েছে বল। কিন্তু স্লিপে যাওয়া বল ক্যাচ নেন ধানাঞ্জায়া। তাই এলবিডব্লিউর বদলে ক্যাচ আউট হন কনওয়ে।
নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা এজাজকে নিয়ে বাকি ৫ ওভার পার করে দেন কেন উইলিয়ামসন৷
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩০৬/৩) ১৬৩.৪ ওভারে ৬০২/৫ (ম্যাথিউস ৮৮, কামিন্দু ১৮২*, ধানাঞ্জায়া ৪৪, কুসাল ১০৬*; সাউদি ১৯-১-৭০-১, ও'রোক ১৭-১-৮১-০, এজাজ ৪১-৫-১৩৫-০, স্যান্টনার ৩৩-৫-৮২-০, ফিলিপস ৩৮-৪-১৪১-৩, রাভিন্দ্রা ১২.৪-০-৫৪-০, মিচেল ৩-০-২৫-০)
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৪ ওভারে ২২/২ (ল্যাথাম ২, কনওয়ে ৯, উইলিয়ামসন ৬*, এজাজ ০*; আসিথা ২-০-৫-১, পেইরিস ৭-১-৯-০, জায়াসুরিয়া ৫-৩-৩-১)