‘লোকেরা আমার বাড়ির কাছে এসে আমাকে খুঁজে বের করত এবং কখনও কখনও আমাকে লুকিয়ে থাকতে হতো’, চার বছর আগের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন ভারতীয় স্পিনার।
Published : 15 Mar 2025, 12:11 AM
ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের নায়কদের একজন ভারুন চক্রবর্তি। দুর্দান্ত বোলিংয়ে দলের শিরোপা জয়ে বড় অবদান রাখা এই স্পিনার ভাসছেন প্রশংসায় জোয়ারে। তবে এমনই একটি বৈশ্বিক আসরের পর খুব কঠিন সময় কেটেছিল তার। এমনকি তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল ফোনে, বারণ করা হয়েছিল দেশে ফিরতে।
২০২০ ও ২০২১ সালের আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্স ও বৈচিত্রময় বোলিং দিয়ে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন ভারুন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে তিন ম্যাচে উইকেট নেন দুটি। পরে সুযোগ পেয়ে যান ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে।
ভিরাট কোহলির নেতৃত্বে ওই আসরে ভালো করতে পারেনি ভারত। পাঁচ ম্যাচের দুটিতে হেরে তারা বিদায় নেয় সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টটি ভারুনের জন্যও ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। তিন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে আঁটসাঁট বোলিং করলেও কোনো উইকেট তিনি পাননি।
হতাশাজনক ওই আসরের পর বিষণ্ণতায় ডুবে গিয়েছিলেন ভারুন। এছাড়া কীভাবে ফোনে হুমকি পেতেন, চার বছর আগের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা শুক্রবার এক ইউটিউব চ্যানেলে আলাপচারিতায় তুলে ধরলেন ৩৩ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
“আমার জন্য খুব কঠিন সময় ছিল ওটা। আমি অবসাদে ভুগছিলাম, কারণ আমার মনে হয়েছিল, অনেক আলোড়ন তুলে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়ার পর নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারিনি আমি। একটি উইকেটও না পাওয়ায় আমি অনুতপ্ত ছিলাম। এরপর তিন বছর আমাকে দলে ডাকা হয়নি। তাই আমার মনে হয়, দলে ফেরাটা অভিষেকের পথচলার চেয়েও কঠিন ছিল।”
“২০২১ বিশ্বকাপের পর আমি ফোনে হুমকি পেয়েছিলাম। লোকেরা বলেছিল, ‘ভারতে এসো না। যদি চেষ্টা করো, তুমি পারবে না।’ লোকেরা আমার বাড়ির কাছে এসে আমাকে খুঁজে বের করত এবং কখনও কখনও আমাকে লুকিয়ে থাকতে হতো। যখন আমি বিমানবন্দর থেকে ফিরছিলাম, তখন কিছু লোক তাদের বাইকে আমার পিছনে পিছনে আসছিল। এমনটা হয়। আমি বুঝতে পারি ভক্তরা আবেগতাড়িত থাকে।”
২০২৪ আইপিএলে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২১ উইকেট নিয়ে কলকাতার শিরোপা জয়ে বড় অবদান রেখে এবং অন্যান্য ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করে অক্টোবরে বাংলাদেশ সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলে ফেরেন ভারুন। তারপর থেকেই দারুণ ছন্দে আছেন তিনি। ফেরার পর ১২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৩১টি। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন দুই দফায়।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঠিক আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম দুই ম্যাচের দলে তাকে রাখেনি ভারত। তৃতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়েই ৫ উইকেট শিকার করেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। পরে সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালেও উইকেট শিকার করেন দুটি করে।
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর কীভাবে নিজের রুটিন বদলে ফেলেছেন, কীভাবে নিজের খেলায় পরিবর্তন এনেছেন, এসবও জানালেন ভারুন।
“(২০২১ বিশ্বকাপের পর) আমার অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছিল। আমার দৈনন্দিন রুটিন, অনুশীলন পরিবর্তন করতে হয়েছিল। আগে আমি এক সেশনে ৫০টি বল করতাম। সেটা দ্বিগুণ করে দিই। জানতামও না যে, নির্বাচকেরা আদৌ আমায় দলে ডাকবেন কি না। খুব কঠিন সময় ছিল। তিন বছর পর ভাবলাম, সব শেষ হয়ে গেছে। এরপর আমরা আইপিএল জিতলাম এবং জাতীয় দলে ডাক পেলাম। খুব খুশি হয়েছিলাম তখন।”
“আমি বিশ্বাস করি না যে, সব ভালো কিছু একবারেই হয়। আমি নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। আমি ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছি এবং সমালোচনা কতটা খারাপ হতে পারে, তা জানি। কিন্তু যখন আমি সেই দিনগুলোতে এবং এখন যে প্রশংসা পাচ্ছি, সেদিকে ফিরে তাকাই, তখন ভালো লাগে।”