ওয়েলিংটনে ১৫ উইকেটের ঘটনাবহুল দিনে আরেকটি ঝড়ো সেঞ্চুরি উপহার দিলেন হ্যারি ব্রুক, ২৩ টেস্টেই তার সেঞ্চুরি হয়ে গেল ৮টি!
Published : 06 Dec 2024, 01:58 PM
বেসিন রিজার্ভের দর্শকেরা তখন নড়েচড়ে বসছে কেবল। ম্যাচের প্রথম ওভারেই টিম সাউদির বলে সামনে পা বাড়িয়ে উড়িয়ে মারলেন জ্যাক ক্রলি। বোলারের ওপর দিয়ে ছক্কা! তবে সেই শুরুটা কেবলই বিভ্রান্তি। পেসারদের দাপট শুরু হলো দ্রুতই এবং দিনের শেষ পর্যন্ত রয়ে গেল তা। প্রথম দিনেই পতন ১৫ উইকেটের। এর মধ্যেও ব্যতিক্রম একজন। আগের টেস্টের মতো বিপর্যয়ের মধ্যেও পাল্টা আক্রমণে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন হ্যারি ব্রুক।
সব মিলিয়ে ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিনে লড়াই হলো জমজমাট। ব্রুকের দুর্দান্ত ইনিংসের পরও ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ ২৮০ রানে। তবে স্বস্তিতে নেই নিউ জিল্যান্ড। দিন শেষ করে তারা ৫ উইকেটে ৮৬ রানে।
আগের টেস্টে ৪৫ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে গিয়ে ১৭১ রানের ইনিংস খেলেন ব্রুক। এবার তিনি যখন উইকেটে যান, ইংল্যান্ডের রান তখন ৩ উইকেটে ২৬। সেখান থেকেই মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ১২৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ১১৫ বলের ইনিংসে চার ১১টি, ছক্কা ৫টি।
ব্রুকের সঙ্গে অলিভার পোপের জুটিতেই আসে ১৭৪ রান। এই জুটির আগে-পরে দুই দফায় ধস নামে ইংলান্ডের ব্যাটিংয়ে। প্রথম ৪ উইকেট হারায় তারা ৪৩ রানে। শেষ ৪ উইকেট পড়ে ২১ রানের মধ্যে।
সকালে টস জিতে বোলিং নিয়ে নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম বলেন, বেসিন রিজার্ভের প্রথাগত উইকেটই এটি। যেখানে শুরুতে সহায়তা থাকে পেসারদের জন্য, ম্যাচের পরের দিকে ক্রমেই তা সহজ হয়ে আসে ব্যাটসম্যানদের জন্য। এই নিয়ে টানা ১৭ টেস্টে এই মাঠে টসজয়ী দল আগে বোলিং বেছে নিল।
ক্রলি অবশ্য চমকে দেন শুরুতেই। প্রথম ওভারের শেষ বলটি উড়িয়ে দেন তিনি ছক্কায়।
জানা থাকা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, টেস্ট ইতিহাসে ম্যাচের প্রথম ওভারে ছক্কার দ্বিতীয় ঘটনাটি এটি। প্রথমটি স্মরণীয় হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ২০১২ সালে মিরপুর টেস্টের প্রথম বলেই অভিষিক্ত সোহাগ গাজিকে ছক্কায় ওড়ান ক্রিস গেইল। ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং দানব ওই ওভারে ছক্কা মারেন আরেকটি। তবে পঞ্চম ওভারে গেইলকে ফিরিয়েই প্রথম উইকেটের স্বাদ পান সোহাগ।
ক্রলির ছক্কার পরও অবশ্য ইংল্যান্ডের শুরুটা ভালো হয়নি। আরেকপ্রান্ত থেকে দুই ওপেনারকে চেপে ধরেন ম্যাট হেনরি। ৮ বল খেলে শূন্য রানে আউট হন বেন ডাকেট। একটু পর ক্রলিকেও বোল্ড করে দেন হেনরি। তার প্রথম স্পেল ছিল ৪-৪-০-২!
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রলির দুঃস্বপ্নের পথচলাও অব্যহত থাকল আরেকটি ব্যর্থতায়। কিউইদের বিপক্ষে ১৮ ইনিংস খেলে তার ব্যাটিং গড় ১০.২৭।
ন্যাথান স্মিথের বলে ড্যারিল মিচেলের দুর্দান্ত ক্যাচে জো রুট ফেরেন ৪ রান করেই। স্মিথকেই টানা দুটি বাউন্ডারি মেরে পরের বলে আউট হন জ্যাকব বেথেল।
নড়বড়ে সেই অবস্থায়ও সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে জবাব দেন ব্রুক। প্রথম বলেই বাউন্ডারিতে শুরু করার পর অলিভার পোপ সঙ্গ দেন ফর্মে থাকা সতীর্থকে। লাঞ্চের আগে বাকি সময়টায় দুজন মিলে যোগ করেন ৮০ বলে ৮১ রান! ব্রুক ফিফটি করে ফেলেন ৪৭ বলে।
লাঞ্চের পরও এই জুটির ব্যাটে রানের স্রোত ছুটতে থাকে। ৬৫ বলে ফিফটি করেন পোপ। একটু পর ব্রুক শতরানে পৌঁছে যান ৯১ বলে।
২৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে আটটি সেঞ্চুরি হয়ে গেল তার। নিউ জিল্যান্ডে চার টেস্টে তার তৃতীয় শতরান এটি, ব্যাটিং গড় ১০৩.৮৩!
১৫৯ বলে ১৭৪ রান তুলে থামে এই জুটি। ব্রুকের শতরানের পরপরই পোপ আউট হন ৭৮ বলে ৬৬ রান করে।
এরপর টিকতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকসও। চা বিরতির ঠিক আগের ওভারে রান আউটে থামে ব্রুকের ইনিংস।
বিরতির পর ইংল্যান্ডের শেষ তিন উইকেটও পড়ে যায় দ্রুতই। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে খরুচে হলেও চারটি উইকেট নেন ন্যাথান স্মিথ।
ব্যাটিংয়ে নেমে নিউ জিল্যান্ডের শুরুটাও ভালো হয়নি। ডেভন কনওয়ে আউট হয়ে যান ১১ রানেই। দ্বিতীয় উইকেটে টম ল্যাথাম ও কেন উইলিয়ামসন চেষ্টা করেন জুটি গড়ার। কিন্তু স্টোকসের বেশ বাইরের পর আলসে শটে স্টাম্পে টেনে এনে ১৭ রানে উইকেট হারান ল্যাথাম।
এরপর ব্রাইন কার্সের বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে আরও এলোমেলো হয়ে পড়ে কিউই ব্যাটিং। ক্রিস ওকসের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে রাচিন রাভিন্দ্রাকে ফেরান কার্স। জ্বলে ওঠেন তিনি বল হাতেও।
দারুণ এক সিমিং ডেলিভারিতে কেন উইলিয়ামসনকে বোল্ড করে উদযাপনে মেতে ওঠার পর তিনি থমকে যান ‘নো বল হওয়ায়। তবে আশাহত না হয়ে উইলিয়ামসনকে পরে ফেরান তিনিই। ২০ রানে রক্ষা পাওয়া অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ফেরেন ৩৭ রানে।
শেষ বিকেলে শরীর তাক করা বাউন্সারে কার্স ফিরিয়ে দেন ড্যারিল মিচেলকেও। নাইটওয়াচম্যান উইল ও’রোক ১৬ বল খেলে রান না করলেও কাটিয়ে দেন দিনটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৪.৪ ওভারে ২৮০ (ক্রলি ১৭, ডাকেট ০, বেথেল ১৬, রুট ৪, ব্রুক ১২৩, পোপ ৬৬, স্টোকস ২, ওকস ১৮, অ্যাটকিনসন ৪, কার্স ৯, বাশির ০*; সাউদি ১২-০-৬২-০, হেনরি ১৫-৫-৪৩-২, স্মিথ ১১.৪১-৮৬-৪, ও’রোক ১২-১-৪৯-৩, ফিলিপস ৪-০-৩২-০)।
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৬ ওভারে ৮৬/৫ (ল্যাথাম ১৭, কনওয়ে ১১, উইলিয়ামসন ৩৭, রাভিন্দ্রা ৩, মিচেল ৬, ও’রোক ০*, ব্লান্ডেল ৭*; ওকস ৭-১-১৮-১, অ্যাটকিনসন ৪-০-১৮-০, কার্স ৭-২-২৮-২, স্টোকস ৮-০-২১-১)।