ইমরুল-আরিফুলের শতরানে বিপর্যয় কাটিয়ে জিতেছে মোহামেডান, সাদমান একপ্রান্ত আগলে রান তাড়ায় জিতিয়েছেন লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জকে।
Published : 15 Mar 2024, 06:09 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ইমরুল কায়েস ও আরিফুল ইসলামের সেঞ্চুরিতে টানা দ্বিতীয় জয় পেয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর সাদমান ইসলামের দারুণ ইনিংসে টানা দ্বিতীয় জয়ে লিগ শুরু করেছে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জও। সদ্য অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা মাহফুজুর রহমান রাব্বির দারুণ বোলিংয়ে দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সও।
মোহামেডান-রূপগঞ্জ টাইগার্স
ফতুল্লায় টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডান শুরুতেই হারায় ওপেনার রনি তালুকদারকে। তিনে নামা মাহিদুল ইসলাম প্রথম রানের দেখা পেতে বল খেলেন ২৩টি। ছন্দ পাননি তিনি এরপরও। আউট হন ৩৮ বলে ৫ রান করে। পরে রুবেল মিয়া যখন ফিরলেন ৬ রান করে, মোহামেডানের রান তখন ৩ উইকেটে ৫২। ১৮ ওভার ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে।
সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেন অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস ও তরুণ আরিফুল ইসলাম। দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন দুজন। ফিফটি করতে ৭৫ বল খেলেন ইমরুল, আরিফুল ৮১ বল। এরপর রানের গতি বাড়ান দুজনই।
ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে যেতে ৪৪ বল লাগে ইমরুলের। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ত্রয়োদশ শতরান স্পর্শ করেন তিনি ১১৯ বলে।
ফিফটির পর ঝড় বইয়ে দেন আরিফুল। পঞ্চাশ থেকে একশতে যেতে বল খেলেন তিনি কেবল ২০টি। গত দুটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলা ক্রিকেটার লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম শতরানের স্বাদ পান অষ্টাদশ ইনিংসে।
১০ চার ও ২ ছক্কায় ১২৭ বলে ১০৬ রান করে আউট হয়ে যান ইমরুল। আরিফুলের সঙ্গে তার জুটি থামে ১৭৬ রানে।
৯ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৬ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন আরিফুল। তার ব্যাটিং তাণ্ডবে শেষ ৫ ওভারে ৭৭ রান তোলে মোহামেডান। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মারেন আবু হায়দার। মোহামেডান ৫০ ওভারে তোলে ২৬৬ রান।
সেই রান তাড়ায় লড়াই জমাতেই পারেনি রূপগঞ্জ টাইগার্স। প্রথম ওভারে আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দিয়ে শুরু, এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় তারা। অভিজ্ঞ ফরহাদ হোসেন, শামসুর রহমান, সালমান হোসেন ইমরা তেমন কিছু করতে পারেননি। প্রথম স্পেলেই ৪ উইকেট নেন মোহামেডানের বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার।
ওপেনার মাহফিজুল ইসলাম অবশ্য এক প্রান্ত আগলে রাখেন লম্বা সময়। তবে সঙ্গী পাননি কাউকে। ১১৩ বলে ৮৭ রান করে তিনি আউট হন অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ষষ্ঠবার ৪ উইকেটের স্বাদ পান আবু হায়দার। ক্যারিয়ারে ৫ উইকেটও আছে তার দুবার। ১০ ওভারে কেবল ১৮ রানে ৩ উইকেট নেন অফ স্পিনার নাঈম হাসান।
দুর্দান্ত শতরানের পর বল হাতে এক উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা আরিফুল ইসলাম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৬৬/৫ (ইমরুল ১০৬, রনি ০, মাহিদুল ৫, রুবেল ৬, আরিফুল ইসলাম ১১৫*, আরিফুল হক ১২, আবু হায়দার ৬*; সালমান হোসেন ৯.২-০-৫০-১, মানিক ১০-১-৫২-১, আব্দুল্লাহ ৯.৪-০-৭১-২, সোহাগ ১০-০-২৮-১, নাবিল ৭-০-৩২-০, আরাফাত সানি জুনিয়র ৩-০-২০-০, আসাদুল্লাহ ১-০-৮-০)।
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ১৮২/৯ (আব্দুল্লাহ ০, মাহফিজুল ৭৮, ফরহাদ ১৬, শামসুর ০, আসাদুল্লাহ ৯, সালমান হোসেন ইমন ২৫, আরাফাত সানি জুনিয়র ১৫, সোহাগ ১, মানিক ২৫, সালমান হোসেন ৭*, নাবিল ০*; আবু হায়দার ১০-২-৩০-৪, আরিফুল হক ৬-০-৩৬-০, নাসুম ১০-১-৩৭-১, মুশফিক ৫-০-২৯-০, নাঈম ১০-২-১৮-৩, আরিফুল ইসলাম ৬-০-১৭-১, রুবেল ৩-০-১৪-০)।
ফল: মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ৮৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আরিফুল ইসলাম।
সিটি ক্লাব-লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ
বিকেএসপি তিন নম্বর মাঠে মোহামেডানের জয়ের কাজ এগিয়ে রাখেন বোলাররা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে পেসার আব্দুল হালিম ও অভিজ্ঞ পেস বোলিং অলরাউন্ডার আলাউদ্দিন বাবু। চারটি করে উইকেট শিকার করেন দুজন। সিটি ক্লাব অল আউট হয় ১৮৭ রানে।
একটা সময় অবশ্য খুব খারাপ ছিল না সিটি ক্লাবের অবস্থা। ওপেনার সাদিকুর রহমান এক প্রান্ত আগলে দলকে এগিয়ে নেন। ৭৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর আশিক-উল-আলম নাঈমের সঙ্গে যোগ করেন তিনি ৬৬ রান। তবে এই জুটি ভাঙার পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দলের ইনিংস।
৪৫ রানের মধ্যে হারায় তারা শেষ ৭ উইকেট। শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ দু অঙ্ক ছুতে পারেননি।
১১০ বলে ৯৬ রান করে সাদিকুর আউট হন নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ ইনিংস এটি।
রান তাড়ায় রূপগঞ্জের ইনিংস খুব মসৃণ হয়নি। তবে সাদমান ইসলাম এক প্রান্তে আস্থা হয়ে টিকে ছিলেন বলে খুব একটা চাপেও তাদেরকে পড়তে হয়নি সেভাবে।
ওপেনার তৌফিক খান তুষার ৫ রানে আউট হলেও দ্বিতীয় উইকেটে চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন সাদমান। তৃতীয় উইকেটে মুমিনুল হকের সঙ্গে সাদমানের জুটিতে আসে ৫৫।
৪৮ বলে ৩৪ রান করে বিদায় নেন রিজওয়ান, ২৯ বলে ৩২ মুমিনুল। পরে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও শামীম হোসেনরা ভালো কিছু করতে পারেননি। তবে সাদমান দলকে এগিয়ে নেন জয়ের ঠিকানায়।
১০৯ বলে ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংসে ম্যাচের সেরা সাদমানই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিটি ক্লাব: ৪৬.২ ওভারে ১৮৭ (সাদিকুর ৯৬, হাসান ৬, কমল ১, রাফসান ১৮, নাইম ৩৪, রিপন ০, মইনুল ৬, ইফরান ৪, সঞ্জিত ৫, নয়ন ৪, মেহেদি ১*; আল আমিন ৮-১-৩৪-০, হালিম ৮.২-০-৪৪-৪, শুভাগত ১০-০-২৯-২, আলাউদ্দিন ১০-০-৩২-৪, শামীম ২-০-৯-০, শহিদুল ৬-০-২৫-০, রিজওয়ান ২-০-১০-০)।
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৩৭.১ ওভারে ১৮৮/৫ (তুষার ৫, সাদমান ৯১*, রিজওয়ান ৩৪, মুমিনুল ৩২, আমিনুল ১৮, শামীম ২, শুভাগত ২*; ইফরান ৮-১-৪০-১, মেহেদি ২.১-০-২২-০, সঞ্জিত ৭-০-২৭-০, নয়ন ৮-১-৩৪-১, রাফসান ৫.৫-০-৩৩-০, মইনুল ৩-০-১৮-০, নাইম ২-০-৬-১, সাদিকুর ১.১-০-৮-১)।
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাদমান ইসলাম।
পারটেক্স-গাজী গ্রুপ
বিকেএসপি চার নম্বর মাঠে এই ম্যাচের ভাগ্য একরম নিশ্চিত হয়ে যায় প্রথম ইনিংস শেষেই। এক দল ১৩০ রানে গুটিয়ে গেলে ম্যাচে আর থাকে কী! পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বোলাররা তবু কিছুটা লড়াই করেন ওই পুঁজি নিয়ে। কিন্তু গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স শেষ পর্যন্ত জিতে যায় ৫ উইকেটে।
পারটেক্সের বিপর্যয়ের শুরু প্রথম ওভার থেকেই। ম্যাচের প্রথম বলেই মুনিম শাহরিয়ারকে বিদায় করেন রুয়েল মিয়া। এক বল পরই বাঁহাতি এই পেসারের শিকার অভিজ্ঞ মিজানুর রহমান।
শুরুর সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। তিনে নামা আজমির আহমেদ ৩ ছক্কায় ৩২ রান করে আউট হয়ে যান। প্রথম আট ব্যাটসম্যানের আর কেউ টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ।
৬৯ রানে ৮ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা উদ্ধার করেন ৯ ও ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান রাজিবুল আলম ও মোহর শেখ। ৬১ রানের জুটি গড়েন তারা
৫৫ বলে ৩২ রান করেন রাজিবুল, ৪২ বলে ৩০ মোহর।
এই জুটি ভেঙে তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করেন মাহফুজুর রহমান রাব্বি। কদিন আগে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া এই বাঁহাতি স্পিনার লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথমবার চার উইকেটের স্বাদ পান তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে।
রান তাড়ায় গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স বড় কোনো জুটি গড়তে পারেনি। তবে তিনে নামা অধিনায়ক মেহেদি মারুফ এক প্রান্ত আগলে কার্যকর কয়েকটি জুটিতে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন দলকে। ৯৬ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৩৮.৫ ওভারে ১৩০ (মুনিম ০, মিজানুর ০, আজমির ৩২, মাইশুকুর ৬, জাহিদুজ্জামান ১৪, তানবীর ১০, মুক্তার ২, তোফায়েল ০, রাজিবুল ৩২, মোহর ৩০*, রাকিবুল ০; রুয়েল ৮-৪-১৪-২, জয়নুল ১০-২-৪৩-৩, জীবন ৫-১-২৭-০, মইন ৬-০-২০-০, মাহফুজুর ৯.৫-১-২৫-৪)।
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৩২.১ ওভারে ১৩৩/৫ (হাবিবুর ১৩, পিনাক ১৩, মারুফ ৫৯*, আনিসুল ৬, আল আমিন ১৬, প্রিতম ১৫, মইন ২*; তোফায়েল ৮-০-৩৯-৩, মোহর ২-০-১৭-০, রাকিবুল ৫.১-০-৩৩-১, রাজিবুল ৯-১-২৫-১, মুক্তার ৬-০-১৩-০, তানবীর ২-০-৬-০)।
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহফুজুর রাব্বি।