বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি
দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ও আকাশ দিপের দারুণ ব্যাটিংয়ে ফলো-অন থেকে রক্ষা পেয়ে পরাজয়ের শঙ্কাও অনেকটা দূর করেছে ভারত।
Published : 17 Dec 2024, 03:42 PM
আকাশ দিপের ব্যাট থেকে বল ছুটে গেল গালির ওপর দিয়ে। ফিল্ডার লাফিয়েও নাগাল পেলেন না একটুর জন্য। ক্যাচ হতে পারে ভেবে ড্রেসিং রুমে কিছুটা চমকে উঠলেন গৌতাম গাম্ভির। পরমুহূর্তেই ভারতীয় কোচ লাফিয়ে উঠলেন খুশিতে। পাশে ভিরাট কোহলির উল্লাস দেখে কে! গাম্ভিরের সঙ্গে 'হাই ফাইভ' করলেন তিনি, হাত মেলালেন অধিনায়ক রোহিত শার্মার সঙ্গেও। সব মিলিয়ে ভারতের ড্রেসিং রুম তুমুল উৎসবমুখর।
মনে হতে পারে, আকাশ দিপের বাউন্ডারিতে বুঝি ম্যাচ জিতে নিয়েছে ভারত! আদতে ওই শটে নিশ্চিত হলো তাদের ফলো-অন এড়ানো। তবে প্রাপ্তিটা আসলে আরও বড়। ম্যাচের পরিস্থিতিই এমন যে, ফলো-অন এড়ানো মানেই ম্যাচ বাঁচানো একরকম নিশ্চিত। ভারতীয়দের এত উল্লাস সেই কারণেই।
৭৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলে রাভিন্দ্রা জাদেজা যখন আউট হলেন, ভারত তখন প্রবল শঙ্কায়। ফলো-অন এড়াতে তখনো প্রয়োজন ৩৩ রান, উইকেট বাকি মোটে একটি। কিন্তু শেষ জুটিতে দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ ও আকাশ দিপ হয়ে উঠলেন যেন পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ানদের হতাশ করে দারুণ দৃঢ়তায় দলকে বিপদমুক্ত করলেন দুজন।
শেষ পর্যন্ত এ দিন ভারতের শেষ জুটিতে ফাটল ধরাতেই পারল না অস্ট্রেলিয়া। চরম নাটকীয় কোনো পালাবদল না হলে ব্রিজবেন টেস্টের ভাগ্যে ড্র ছাড়া আর কিছু নেই।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির তৃতীয় টেস্টে মঙ্গলবার দিনও কয়েক দফায় হানা দিয়েছে বৃষ্টি। প্রকৃতির বাগড়ায় এদিন খেলা হয়েছে ৫৮ ওভারের মতো। ৪ উইকেটে ৫১ রান নিয়ে খেলতে নেমে ৯ উইকেটে ২৫২ রানে চতুর্থ দিন শেষ করেছে ভারত। এখনও তারা পিছিয়ে ১৯৩ রানে, তবে ম্যাচে নিজেদের নিরাপদ ধরে নিতেই পারে তারা।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৮ চারে ৮৪ রান করে ফেরেন রাহুল। প্রথম দুই টেস্টে না খেলা জাদেজা ফিরেই ১ ছক্কা ও ৭ চারে খেলেন ৭৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। শেষ উইকেটে ৩৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দিন শেষ করেন বুমরাহ ও আকাশ।
অস্ট্রেলিয়া ভুগেছে চোটের কারণে জশ হেইজেলউড মাঠে না থাকায়। দিনের শুরুতে গা গরমের সময় পায়ের পেশিতে টান লাগায় এক ওভারের বেশি বোলিং করতে পারেননি অভিজ্ঞ পেসার। স্রেফ তিন বিশেষজ্ঞ বোলারের বোলিং আক্রমণ নিয়েও অস্ট্রেলিয়ানরা চেপে ধরে ভারতকে। শেষটায় তবু তাদের সঙ্গী হতাশা, ভারতকে বাগে পেয়েও ফলো-অন করানো গেল না।
প্রথম বলে উইকেট নিয়ে দিনটি শুরু করতে পারত অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু প্যাট কামিন্সের বলে ৩৪ রানে থাকা রাহুলের সহজ ক্যাচ স্লিপে মুঠোয় জমাতে পারেননি স্টিভেন স্মিথ। কয়েক ওভার পর কামিন্সই রোহিত শার্মাকে কট বিহাইন্ড করে স্বাগতিকদের এনে দেন দিনের প্রথম সাফল্য। অ্যাডিলেইড টেস্টে দুই ইনিংসে ৩ ও ৬ রান করা ভারত অধিনায়ক এবার করেন ১০ রান।
পরের ওভারে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন রাহুল, ৮৫ বলে। টেস্টে এটি তার সপ্তদশ ফিফটি। ৭৪ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন রাহুল ও জাদেজা। তাদের ব্যাটে বাড়াতে থাকে রান। জমে ওঠে দুইজনের জুটি।
৬৭ রানের যুগলবন্দি ভাঙে রাহুলের বিদায়ে। ন্যাথান লায়নের বলে জায়গা বানিয়ে কাট শট খেলেন ভারত ওপেনার। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে চোখধাঁধানো ক্যাচ নেন স্লিপে থাকা স্মিথ।
ক্যারিয়ারের ২২তম টেস্ট ফিফটিতে জাদেজা পা রাখেন ৮২ বলে। নিতিশ কুমার রেড্ডিকে নিয়ে আরেকটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েন তিনি। ১৬ রান করতে ৬১ বল খেলা নিতিশকে বোল্ড করে এই দুইজনের ৫৩ রানে জুটি ভাঙেন কামিন্স।
অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি উইকেটের তালিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি গ্যারি সোবার্সকে (১১৭) টপকে তিনে এখন কামিন্স। তার ওপরে অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার রিচি বেনো (১৩৮) ও পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান খান (১৮৭)।
মোহাম্মদ সিরাজকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মিচেল স্টার্ক। তবে জাদেজার ব্যাটে জিইয়ে ছিল ভারতের ফলো-অন এড়ানোর আশা। লায়নকে ছক্কা মারেন তিনি, চার মারেন কামিন্সকে। তবে তাকে ফিরিয়েই অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনা আবার জাগিয়ে তোলেন কামিন্স। তার শর্ট বলের পরিকল্পনা কাজে লেগে যায়। সীমানায় দারুণ ক্যাচ নেন মিচেল মার্শ।
২১৩ রানে ৯ উইকেট হারানো ভারত তখন ফলো-অনে পড়ার প্রবল শঙ্কায়। কিন্তু বল হাতে সিরিজের নায়ক বুমরাহ ব্যাটিংয়েও হয়ে ওঠেন ত্রাতা। কামিন্সকে হুক করে ছক্কা মেরে বুঝিয়ে দেন, সহজে হার মানছেন না তিনি। আকাশ দিপও চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় আঁকড়ে রাখেন উইকেট। একটু একটু করে এগোতে থাকেন ভারত। চার দিনেও দুই ইনিংস শেষ না হওয়া বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ যেন নতুন প্রাণ পায়।
উত্তেজনায় ঠাসা সময়ে স্নায়ুর চাপকে হারিয়ে শেষ পর্যন্ত জিতে যান বুমরাহ ও আকাশ। কামিন্সের বলে ওই বাউন্ডারিতে ফলো-অন এড়ানোর এক বল পর স্লগ করে বিশাল এক ছক্কা মারেন আকাশ। এবারও ড্রেসিং রুমে খুশিতে লাফিয়ে ওঠেন কোহলি।
আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হয় আগেই। ২৭ বলে তখন ১০ রানে অপরাজিত বুমরাহ, ৩১ বলে ২৭ রানে আকাশ। তবে ভারতীয় দল জানে, সংখ্যাগুলির ওজন আসলে আরও অনেক বেশি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৪৫৫
ভারত ১ম ইনিংস: ৭৪.৫ ওভারে ২৫২/৯ (আগের দিন ৫১/৪) (রাহুল ৮৪, রোহিত ১০, জাদেজা ৭৭, নিতিশ ১৬, সিরাজ ১, বুমরাহ ১০*, আকাশ ২৭*; স্টার্ক ২৪-৩-৮৩-৩, হেইজেলউড ৬-২-২২-১, কামিন্স ২০.৫-২-৮০-৪, লায়ন ২১-০-৫৪-১, হেড ১-০-১-০, মার্শ ২-০-৬-০)