বাবর আজমের হ্যাটট্রিক ফিফটি ছাপিয়ে নিউ জিল্যান্ডের হ্যাটট্রিক জয়, প্রথম তিন ম্যাচেই সিরিজ জিতে নিল কিউইরা।
Published : 17 Jan 2024, 09:41 AM
ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই নতুন বল নিতে হলো দুই দফায়। শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে টানা দুটি বিশাল ছক্কায় যে বলই হারিয়ে ফেললেন ফিন অ্যালেন! সেটি কেবলই শুরু। ২০ ওভারের ম্যাচে তিনি একাই বল বাউন্ডারি ছাড়া করলেন ২১ বার। এর মধ্যে ১৬টিই হাওয়ায় ভাসিয়ে। তাতে ছুঁয়ে ফেললেন বিশ্বরেকর্ড। বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে নিউ জিল্যান্ডের ওপেনার একাই যেন উড়িয়ে দিলেন পাকিস্তানকে।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ডানেডিনে পাকিস্তানকে ৪৫ রানে হারাল নিউ জিল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ তারা জিতে নিল প্রথম তিন ম্যাচেই।
ইউনিভার্সিটি ওভালে বুধবার ম্যাচের প্রথম ভাগে লড়াইটি ছিল যেন অ্যালেন বনাম পাকিস্তান। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রেকর্ডের মালা গেঁথে ৬২ বলে ১৩৭ রানের ইনিংস খেলেন ২৪ বছর বয়সী ওপেনার। কিউইরা ২০ ওভারে তোলে ২২৪ রান। রান তাড়ায় বাবর আজম টানা তৃতীয় ফিফটি করলেও পাকিস্তান যেতে পারে ১৭৯ পর্যন্ত।
১৬ ছক্কা মেরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে অ্যালেন স্পর্শ করেন হাজরাতউল্লাহ জাজাইকে।
অ্যালেনের ১৩৭ রানের ইনিংস এই সংস্করণে নিউ জিল্যান্ডের সর্বোচ্চ। পেরিয়ে যান তিনি ২০১২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ১২৩ রানকে।
আগের দুই ম্যাচের মতো এ দিনও টস জিতে নিউ জিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে ম্যাচ হারে পাকিস্তান। তবে ম্যাচের শুরুর দিকটায় এমন টর্নেডোর ইঙ্গিত ছিল না। আফ্রিদিকে অ্যালেন টানা ওই দুই ছক্কা মারলেও প্রথম চার ওভারে কিউইদের রান ছিল ২৯। এর মধ্যেই ওপেনার ডেভন কনওয়েকে বিদায় করেন হারিস রউফ।
প্রথম ওভারে স্রেফ ২ রান দেওয়া রউফকে পরের ওভারে পেয়ে বসেন অ্যালেন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভার সেটি, তিনটি ছক্কা ও দুটি চার মারেন তিনি। ওভার থেকে আসে ২৮ রান।
এরপর অ্যালেনের তান্ডব চলতে থাকে। ২৬ বলে ফিফটি করার পর আগ্রাসী হয়ে ওঠেন আরও। রউফের আরেক ওভারে মারেন তিনটি ছক্কা, মোহাম্মদ নাওয়াজের ওভারে দুটি। আফ্রিদিকে চার ও ছক্কা মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান ৪৮ বলে।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার দ্বিতীয় শতরান এটি।
দ্বিতীয় উইকেটে টিম সাইফার্টের সঙ্গে অ্যালেনের জুটিতে ১২৫ রান আসে কেবল ৬১ বলেই। তাতে সাইফার্টের অবদান ২৩ বলে ৩১।
এরপর নিউ জিল্যান্ডের আর কোনো ব্যাটসম্যান ভালো কিছু করতে পারেননি দ্রুত রান তোলার তাড়ায়। কিছু করার প্রয়োজনও হয়নি তাদের। অ্যালেনের ঝড় যে চলতেই থাকে! সেঞ্চুরির পর আবার টানা দুটি ছক্কা মারেন তিনি নাওয়াজকে, টানা দুটি ওভারে মোহাম্মদ ওয়াসিমকে। শুরুর দিকে ওই দুবারের পর বল হারিয়ে ফেলেন তিনি আরও দুই দফায়।
অষ্টাদশ ওভারে জামান খানকে সাইটস্ক্রিনে আছড়ে ফেলে ছক্কার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন অ্যালেন। পরের বলেই বোল্ড হয়ে যাওয়ায় রেকর্ডটি আর একার করে নিতে পারেননি তিনি।
শেষ দুই ওভারে খুব বেশি রান তুলতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। তবে রান তো তখনই অনেক।
৪ ওভারে ৬০ রান দিয়েছেন রউফ। ৬৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার রান দেওয়ার ফিফটি করলেন এই ফাস্ট বোলার।
রান তাড়ায় উড়ন্ত শুরু করতে পারেননি পাকিস্তান। ওপেনিংয়ে সাইম আইয়ুব ১৩ বল খেলে করেন ১০ রান। মোহাম্মদ রিজওয়ান দুটি ছক্কা মারলেও ২৪ রান করেন ২০ বলে।
বাবর আজম তার মতো খেলে যান। কিন্তু আরেক প্রান্তে ঝড় তুলতে পারেননি কেউ। গড়ে ওঠেনি কার্যকর কোনো জুটি। কোনো জুটিই ছাড়াতে পারেনি ৪০ রান।
৮ চার ও ১ ছক্কায় ৩৭ বলে ৫৮ রান করে ফেরেন বাবর। সিরিজের তিন ম্যাচের সবকটিতে ফিফটি করলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় ১০১ ইনিংসেই ৩৬ বার পঞ্চাশে পা রাখলেন তিনি, এর মধ্যে তিনটিকে টেনে নিয়েছেন শতরানে।
এ দিন তিনি পারেননি ইনিংস আরও টানতে। পাকিস্তানও পারেনি লড়াই জমাতে। শেষ দিকে নাওয়াজের ১৫ বলে ২৮ ও আফ্রিদির ১১ বলে ১৬ রানের ইনিংসে একটু কমে ব্যবধান।
আগের ম্যাচে ৪১ বলে ৭৪ করে ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছিলেন অ্যালেন। এই ম্যাচে তো ম্যাচ সেরায় তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলই না।
সিরিজের পরের দুই ম্যাচ শুক্র ও রোববার ক্রাইস্টচার্চে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ২২৪/৭ (অ্যালেন ১৩৭, কনওয়ে ৭, সাইফার্ট ৩১, মিচেল ৮, ফিলিপস ১৯, চ্যাপম্যান ১, স্যান্টনার ৪, হেনরি ১*, সোধি ৩*; আফ্রিদি ৪-০-৪৩-১, জামান ৪-০-৩৭-১, রউফ ৪-০-৬০-২, নাওয়াজ ৪-০-৪৪-১, ওয়াসিম ৪-০-৩৫-১)
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭৯/৭ (সাইম ১০, রিজওয়ান ২৪, বাবর ৫৮, ফাখার ১৯, আজম ১০, ইফতিখার ১, নাওয়াজ ২৮, আফ্রিদি ১৬*, ওয়াসিম ১*; সাউদি ৪-০-২৯-২, হেনরি ৪-০-৫১-১, ফার্গুসন ৪-০-২৭-১, স্যান্টনার ৪-০-২৬-১, সোধি ৪-০-৩৮-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৪৫ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফিন অ্যালেন