১৮ বছর বয়সী লুয়ান-দ্রে প্রিটোরিয়াসের স্বপ্নময় পথচলা চলছেই।
Published : 21 Mar 2025, 06:08 PM
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকে লুয়ান-দ্রে প্রিটোরিয়াসের সেঞ্চুরির পর কেটে গেছে তিন মাস। মাঝের এই সময়ে তিনি ঝড় তুলেছেন বিশ ওভারের ক্রিকেটে। টানা দুই সেঞ্চুরি করেছেন পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে। ভেসেছেন প্রশংসার জোয়ারে। বাড়িয়েছেন নিজের পরিচিতি। স্বপ্নময় পথচলায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফিরেই আবার সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ১৮ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে বৃহস্পতিবার প্রথম ইনিংসে দলের মোট ২২৫ রানের মধ্যে প্রিটোরিয়াস একাই করেন ১০৩। দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা ‘সিএসএ ফোর-ডে সিরিজ ডিভিশন-১’ এর ম্যাচে টাইটান্সের হয়ে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের বিপক্ষে তার ১৫৭ বলের ইনিংসটি গড়া ১৩ চার ও এক ছক্কায়।
একই আসরে গত ডিসেম্বরে টাইটান্সের হয়েই অভিষেকে ছয় নম্বরে নেমে ১৮৪ বলে ১২০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন প্রিটোরিয়াস।
বিশ্বের ২৩তম ও দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন এই টিনএনজার। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের মধ্যে এর আগে ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে রেমন্ড ওয়াটসন-স্মিথ এবং ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ মৌসুম মিলিয়ে সেডিক কনরাড পান এই স্বাদ।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের প্রথম তিন ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি আছে কেবল একজনের। ২৬ বছর বয়সে অভিষেকে ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে এই স্বাদ পান ওয়েস্ট ইন্ডিজের জো সলোমন। যিনি পরিচিত হয়ে আছেন টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ‘টাই’ ম্যাচের নায়ক হিসেবেও। ১৯৬০ সালে ব্রিজবেনের ওই ম্যাচে তার থ্রোয়ে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রান আউট হন ইয়ান মেকিফ।
প্রিটোরিয়াস প্রথম নজর কাড়েন ২০২৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ ও আসরের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি। ৬ ইনিংসে ৫৭.৪০ গড় আর ৯৪.০৯ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ২৮৭ রান। ফিফটি ছিল তিনটি।
ওই বছরের মার্চে তার স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় টাইটান্সের হয়ে। সিএসএ টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জের ওই আসরের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি- ৯ ইনিংসে ১৫৮.৭৮ স্ট্রাইক রেটে রান করেন ২৩৫। পরে টাইটান্সের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পা রেখে করেন সেঞ্চুরি।
পচেফট্রুমে জন্ম নেওয়া প্রিটোরিয়াস মূলত বাঁহাতি কিপার-ব্যাটসম্যান। অনেকে তাকে বলে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথের ‘ক্লোন।’ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনি ব্যাটিং করেন ওপেনিংয়ে।
প্রথমবার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের স্বাদ পান তিনি গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত এসএ টোয়েন্টিতে। পার্ল রয়্যালসের হয়ে প্রথম ম্যাচে যখন ব্যাট করতে নামলেন তিনি, দলের লক্ষ্য ১৭৬ রানের। উইকেটে তার ওপেনিং সঙ্গী ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান জো রুট। সব মিলিয়েই চাপ ছিল প্রবল। তবে সেই চাপ স্রেফ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন প্রিটোরিয়াস। মার্কো ইয়ানসেন, সিমন হার্মারের মতো বোলারদের চোখের জল নাকের জল এক করে ১০ চার ও ৬ ছক্কায় ৫১ বলে ৯৭ রানের খুনে ইনিংসে দলকে জেতান তিনি।
তার ওই ইনিংসের পর ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট যে অনেক রকম ভূমিকা রেখেছে (ক্রিকেটে), তার মধ্যে একটি হলো তরুণ-অনভিজ্ঞ কিন্তু অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের বিশ্বের সেরাদের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় মঞ্চে সুযোগ দেওয়া এবং তারা কতটা ভালো তা দেখানো। লুয়ান-ড্র প্রিটোরিয়াস এখন সেটাই করছে।”
আর সেটা খুব ভালোমতোই করেন প্রিটোরিয়াস। ওই আসরের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনিই। ১২ ইনিংসে ১৬৬.৮০ স্ট্রাইক রেটে করেন ৩৯৭ রান। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হেরে বিদায় নেয় পার্ল রয়্যালস। ওই ম্যাচে প্রিটোরিয়াসের ব্যাট থেকে আসে ৪১ বলে ৫৯ রান। দল ফাইনালে খেলতে পারলে রান আরও বাড়তেই পারত তার।
তবে, প্রিটোরিয়াসের রানের জোয়ার থেমে থাকেনি সেখানেই। গত মাসের শেষ দিকে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান তিনি দশম ম্যাচে। সিএসএ প্রভিন্সিয়াল ওয়ানডে চ্যালেঞ্জ ডিভিশন-১ এর ম্যাচে টাইটান্সের হয়ে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের বিপক্ষে ১১ চার ও ৭ ছকায় ৯৬ বলে ১২০ রানের ইনিংস খেলে ‘ম্যান অব দা ম্যাচ’ হন তিনি।
পরের ম্যাচেই করেন আরেকটি সেঞ্চুরি। এবার আরও বিধ্বংসী রূপে দেখা যায় তাকে। ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ১১ চার ও ৭ ছক্কায় খেলেন ৬৯ বলে ১০৭ রানের ইনিংস।
ওই ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরি করেন ৬১ বলে, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে টাইটান্সের হয়ে যা দ্রুততম সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট স্পিনার সেনুরান মুথুসামির একই ওভারে তিনি ছক্কা মারেন পাঁচটি।
এবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে প্রিটোরিয়াস আরেকবার জানান দিলেন তার প্রতিভার। তার দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা এখন স্রেফ সময়ের ব্যাপার।